Select Page

ঢাকা ৮৬ : ঢাকার নাগরিক পালাবদলের সিনেমা

ঢাকা ৮৬ : ঢাকার নাগরিক পালাবদলের সিনেমা

বাপ্পারাজ ফ্যান পেজে ঢু মারতে গিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে ‘ঢাকা ৮৬’ সিনেমার পোস্টার পেয়ে গেলাম। ভাবলাম কিছু লিখলে মন্দ হয় না।

পরিচালক শফিকুর রহমান-এর সিনেমা জীবনমুখী ছিল। ঢাকার নাগরিক জীবনে ঘটে যাওয়া জীবন নিয়ে তাঁর নির্মিত ‘রাজা মিস্ত্রি’-ও জীবনমুখী সিনেমা। নাগরিক পালাবদলে জীবনে ঘটনার ঘনঘটা কম থাকে না। তারই একটা স্পর্শ ‘ঢাকা ৮৬’..

সিনেমার গল্প সাদামাটা। সাদামাটা বলতে শুনলে মনে হবে এরকম গল্প তো কারো না কারো জীবনে দেখতেই পাই আমরা। হ্যাঁ, সে ধরনের চেনা বাস্তব জীবনের গল্প। রাজ্জাক-বাপ্পারাজ সিনেমায় থাকে মামা-ভাগ্নে। ভাগ্নে বাপ্পা তার চলাফেরায় দারুণ আধুনিক। কলেজ পড়ুয়া জীবনে যে নিত্যনতুন হাওয়া লাগে সেটাই ছিল বাপ্পার বৈশিষ্ট্য।বেকারত্ব এক সময় পেয়ে বসলে সেটার বাস্তবতাও পরিচিত জীবনের অংশ। বাপ্পার প্রেম হয় সহপাঠী রণ্জিতার সাথে। একদিন ঘরোয়া পার্টিতে সবার আধুনিক পোশাক-আশাকের সাথে নিতান্তই সাধারণ পোশাক অার অভ্যাস নিয়ে মামা রাজ্জাক হাজির হলে তার রুচি নিয়ে কথা ওঠে। তখন মন্দিরা বাজিয়ে রাজ্জাক গান ধরে

‘আউল বাউল লালনের দেশে
মাইকেল জ্যাকসন অঅইলো রে
আরে সবার মাথা খাইলো রে
আমার সাধের একতারা কান্দে রে
আমার সাধের খণ্জনি কান্দে রে’

অনন্যসাধারণ জীবনমুখী এ গানে তখন মনোযোগ না আটকে পারা যায় না। দেখা যায় গানের মধ্যে বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির অনেক উপাদান মিলে যায়। পুঁথি পাঠের আসর নেই, চৈত্র মাসে ঢাক বাজে না এ ধরনের হারানো ঐতিহ্যের জন্য আর্তনাদ অঅছে। এ গানকে ক্ষেত্রবিশেষে আপনি অামি শাহ আব্দুল করিমের ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গানের সাথে নস্টালজিক আবহে অানতে পারি। এ ধরনের অনুভূতির পাশাপাশি বাপ্পারাজ-রণ্জিতা জুটির লিপে যখন আর একটি কালজয়ী গান একই সিনেমায় পাই সেটা কিন্তু একেবারে আলাদা স্বাদ। সে গানটি নিশ্চয়ই ধরতে পেরেছেন এতক্ষণে-

‘পাথরের পৃথিবীতে কাচের হৃদয়
ভেঙে যায় যাক তার করি না ভয়
তবু প্রেমের তো শেষ হবে না।’

এ গান কি পুরনো হবার কোনো সুযোগ আছে! প্রশ্নই আসে না। সিনেমার আবেদন বাড়ে এভাবেই গল্পে-গানে।

এ ঘটনাগুলোর সাথে যোগ হয় ফ্যামিলি ড্রামা। সম্পর্কের টানাপড়েন থেকে রাজ্জাক-বাপ্পারাজের ভুল বোঝাবুঝি। রাজ্জাককে কোনো কারণে মানসিক আঘাত দেয় বাপ্পারাজ। রাজ্জাক তখন তার পুরনো প্রেমের স্মৃতি বলতে থাকে। ফ্ল্যাশব্যাক স্টোরিতে রাজ্জাক-ফাল্গুনী আহমেদের প্রেমের পর্ব চলে।সেখানে ব্যবহৃত হয়েছে রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে। ‘ফ্ল্যাশব্যাক স্টোরির পরে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটে। ভিলেন পর্বে এটিএম শামসুজ্জামান সরব ছিলেন।

রাজ্জাক-বাপ্পারাজ এর মামা-ভাগ্নে রোল প্লে করা দর্শকের কাছে তখন আকর্ষণীয় ছিল। গানের কারণে সিনেমাটি স্মরণীয়। বিশেষ করে অামাদের মেইনস্ট্রিম কমার্শিয়াল সিনেমায় স্টোরি লাইন সাদামাটা হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকলেও অনেক সিনেমাই গানের জন্য দর্শক মনে রেখেছে। ভারতীয় উপমহাদেশে গানভিত্তিক কমার্শিয়াল সিনেমার বাজার আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই গুরুত্বের দিক থেকে ‘ঢাকা ৮৬’ গানের জন্য স্মরণীয়। ‘পাথরের পৃথিবীতে, আউল বাউল লালনের দেশে’ দুটি গানই কালজয়ী হয়ে অাছে। এমনকি গানের সাথে ‘ঢাকা ৮৬’ নামকরণটিও সিনেমাটির জন্য ভিন্নতা ছিল দর্শক টানার ক্ষেত্রে।সময়কে মেনশন করে এমন নামকরণ দেখা যায় না। ৮৬ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিশেবে একটা স্ট্রাগল পিরিয়ড পার করছে যেখানে নাগরিক মধ্যবিত্ত জীবনের ক্রাইসিস ছিল সম্পর্ক, বিদেশপ্রীতি, প্রেম, বেকারত্ব এসব নিয়ে।নাগরিক এসব সেন্টিমেন্ট কিভাবে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পাল্টাচ্ছে সেটারই ছোঁয়া অাছে সিনেমাটিতে। জীবনকে খুঁজে পাওয়া যাবে।

‘ঢাকা ৮৬’ সিনেমার পোস্টারটি হাতে আঁকা। শৈল্পিক যত্ন আছে। আজকের নির্মাতাদের এ ধরনের সৃজনশীল কাজ স্টাডি করার সুযোগ অাছে।

‘ঢাকা ৮৬’ তার পরিবেশনার গুণে ২০১৬ তে আলোচনার টেবিলে এসেছে এবং ঐ গুণেই আগামী দিনেও হবে আলোচিত।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন