Select Page

‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দেখার অভিজ্ঞতা: আড়াই দশক পরও কাঁদছে দর্শক

‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দেখার অভিজ্ঞতা: আড়াই দশক পরও কাঁদছে  দর্শক


১.
আজ মধুমিতায় “কেয়ামত থেকে কেয়ামত” দেখতে গিয়েছিলাম। খোঁজখবর নিয়ে জানলাম, দিনের ৫ শো এর মধ্যে দুপুর ও সন্ধ্যার শো হাউসফুল গেছে। বাকি ৩ শো এর মধ্যে মর্নিং ও লেট নাইট শো এ দর্শক সমাগম ছিল মোটামুটি।
২.
বাসা থেকে রওনা দিয়েছিলাম মূলত বিকাল ৩ টার শো দেখার নিয়ত করে। কিন্তু হুট করে নামা বৃষ্টি ও কাওরান বাজারে লাগা বিশাল জ্যাম ঠেলে পৌছতে পৌছতে বেজে গেলো ৩:৪৫!
এরপর ভাবলাম অভিসার থেকে একটু ঘুরে আসি, “পাগলামী” এর শো শুরু না হলে ওটা দেখে টাইমপাস করা যাবে। কিন্তু ওখানেও গিয়ে শুনলাম শো শুরু হয়ে গেছে। অতঃপর কি আর করার… মধুমিতার পেছনের মাঠে ফুটবল খেলা দেখতে দেখতে এক ঘণ্টা কাটিয়ে দিলাম।
৩.
এক ঘণ্টা খেলা দেখে কাটানোর পর আবার মধুমিতার সামনে ফিরে এলাম। দেখলাম দুটি টিভি চ্যানেল; চ্যানেল ২৪ ও বৈশাখী টেলিভিশন এই উৎসব কে ঘিরে তাদের নিজ নিজ প্রতিবেদন তৈরী করছে। এর আগে টিভি চ্যানেল সংশ্লিষ্টদের সরাসরি দর্শক রেসপন্স নিতে দেখেছি, কিন্তু প্রতিবেদনের জন্য সম্পূর্ণ শ্যুটিং করতে সামনাসামনি কখনো দেখিনি। নতুন অভিজ্ঞতা, তাই এটা দেখতে দেখতে আমার বাকি এক ঘণ্টা কেটে গেলো।
৪.
চারিদিকে থাকা দর্শকদের দেখে তাদের সবার বয়স আন্দাজ করলাম, বুঝতে পারলাম বেশিরভাগ দর্শকের বয়স আনুমানিক চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে। তাই এটা বুঝতে আর বাকি রইলো না, এরা বেশিরভাগই নব্বই দশকের নিয়মিত দর্শক। মহিলা দর্শকের সমাগমও বেশ ভালো হয়েছে। শো থেকে বের হয়ে এদের অনেকেই আবেগে ভেঙ্গে পড়েছেন, একজন আরেকজনকে জড়িয়ে কাঁদছেন! মধুমিতার নিচতলার অবস্থা তখন অত্যন্ত ভারি!
আমার মধ্যে আবেগ কম, তাই হলে ঢুকার আগে সবার চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখছি কার অবস্থা কেমন। দেখলাম বেশিরভাগই কাঁদো কাঁদো মুখ, তবে এদের মধ্যে কয়েকজনকে পেলাম যারা একটু অভাররিয়েক্ট দেখাচ্ছিল ক্যামেরায় ফোকাস পাওয়ার জন্যে। এতে তাহাদের কি লাভ তাহারাই জানে!
৫.
সিনেমা শুরু হলো। পাশে বসা পঞ্চাশ বছর ছুঁইছুঁই ভদ্রলোক বলে উঠলো, কই প্রিন্ট তো ঘোলা-ই! আমি তখন মনে মনে বলি, ইউটিউবে কি এরা ছবির প্রিন্ট খুব পরিষ্কার পাইছিলো?
অবশ্য একদিক থেকে অভিযোগটি মোটেও গুরুত্বহীন না। একসময় যখন আমাদের হলগুলোতে ডিজিটাল প্রজেক্টর ছিল না, তখন ডিজিটাল ক্যামেরায় নির্মিত ছবিগুলি পরবর্তীতে এনালগ ফর্মেটে পরিবর্তন করে তবেই সিনেমাহলে মুক্তি দেওয়া হতো। এখন তো আমাদের ডিজিটাল প্রজেক্টর আছে। তো এখন কেনো পুরোনো ছবি চালানোর আগে এনালগ প্রিন্ট কে ডিজিটালে পরিণত করে নেওয়া হয় না? বিষয়টি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।
৬.
প্রিন্ট ঘোলা, তার সাথে যুক্ত হলো কম সাউন্ড। শুধু গানগুলোর বেলায় দেখা যায় সাউন্ড বাড়ছে, কিন্তু অন্যান্য সিনে মনে হচ্ছিল সাউন্ড অনেক কম। অবশ্য দ্বিতৗয়ার্ধে এ সমস্যা অনেকখানি লাঘব হয়েছে।


৭.
আমার কাছে এসিনেমার সবথেকে শক্তিশালী দিক লেগেছে প্রধান চরিত্র ও পার্শ্বচরিত্রগুলির প্রশংসনীয় অভিনয়। সালমান-মৌসুমী কতটা ভালো অভিনয় করেছেন, তা তো এছবির জনপ্রিয়তাই বলে দিচ্ছে। কিন্তু পার্শ্বচরিত্রে থাকা রাজিব, আবুল হায়াত, আহমেদ শরীফ, খালেদা আখতার কল্পনা, টেলি সামাদ প্রমুখরাও মনে রাখার মতো অভিনয় দেখিয়েছেন। আর সালমান-মৌসুমী জুটি তো এখানে পুরাই কিউটের ডিব্বা! টিনএজ রেশমির আধোআধো মুখে বলা সংলাপ ও যুবক রাজের সরল-স্বাভাবিক অভিনয় তারিফ করার মতো।
৮.
এছবির সবগুলো গান অনেক বেশি জনপ্রিয়। সবগুলো গানের সুর মূল ছবির গান থেকে তুলে আনা হয়েছে। তবে পার্সোনালি আমার রুনা লায়লার গলা ভালোলাগলেও, আগুনের গলার সাথে এরকম গান ভালো লাগেনি। অরিজিনাল গানগুলোকে উদিত নারায়ণ তার মোহনীয় কন্ঠে যেই লেভেলে নিয়ে গেছে, আগুনের কন্ঠে সেরকম আগুন আমি পাইনি। আর “বাবা বলেছে” গানটার লিরিক্স খুবই খাপছাড়া, সরাসরি বঙ্গানুবাদ করে বসানোতে এমনটা হয়েছে মনে হলো।
৯. সোহানুর রহমান সোহানের পরিচালনা আমার কাছে আহামরি কিছু লাগেনি। গল্পও তেমন এক্সসেপশনাল কিছু না। এই সিনেমা জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে ছবির গল্প কিংবা তার পরিচালনা কারো ক্রেডিট তেমন নেই। তবে তিনি নতুন জুটি তুলে এনেছিলেন এবং যাদের জন্যেই এছবি সফল, এই কাজের জন্যে ক্রেডিট তার প্রাপ্য!
১০.
এর আগেও এছবি আমি ইউটিউবে দেখেছি। তার আগে আমি টেলিভিশনে দেখেছি। আমির খান-জুহি চাওলার অরিজিনাল ছবিটাও টেলিভিশনে দেখেছি। এবার দেখলাম হলভর্তি দর্শকের সাথে, বড়পর্দায়। তাই অন্যান্যবারের থেকে এবারের মজাটা সম্পূর্ণ আলাদা! এই মজা পূর্বে পাইনি।
১১.
সবশেষে অভিজ্ঞদের নিকট একটা বিষয়ে জানতে চাচ্ছি। এসিনেমায় আমি মোট ৪টি চুম্বন দৃশ্য খুজেঁ পেয়েছি, এর মধ্যে দুটি সরাসরি লিপলক। সেসময়ের কথা চিন্তা করলে এধরনের সিক্যুয়েন্স আমাদের সমাজের সাথে যায়না। পর্দায় এগুলোকে আংশিক কাট করে দেখানো হয়েছে। ইউটিউবেও একই অবস্থা।
এখন প্রশ্ন হলো, এই ছবি কি আনকাট সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছিল? না বিতর্ক সৃষ্টি হবে ভেবে পোস্ট প্রডাকশনের সময়-ই ঐ ৪ টি সিনকে আংশিক কাট করা হয়েছে?


মন্তব্য করুন