Select Page

লগ্নি তুলতে কত দেরি বরবাদ, দাগি ও জংলির?

লগ্নি তুলতে কত দেরি বরবাদ, দাগি ও জংলির?

সর্বশেষ তুফান ও সুড়ঙ্গের বক্স অফিস দ্বন্দ্বের পর ঈদে গুণে-মানে এতটা জমজমাট ব্যবসা দেখেনি ঢালিউড। আপাতত এ কৃতিত্বে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভরসা রেখেছে গুটিকয়েক মাল্টিপ্লেক্সের ওপর। ঈদের সিনেমা মুক্তির ২০ দিনে স্টার সিনেপ্লেক্সসহ দেশের মাল্টিপ্লেক্সগুলোয় প্রায় ১৬ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। এছাড়া সিঙ্গেল স্ক্রিনে ব্যবসার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য না থাকলেও প্রযোজকরা আশা করছেন শিগগির লগ্নি তুলে ফেলবেন।


তারকা খ্যাতি ও সহিংস গল্পের প্রভাবে বেশির ভাগ হল দখলে রেখেছে শাকিব খান অভিনীত ‘বরবাদ’। এছাড়া ‘দাগি’ ও ‘জংলি’ ঘিরে দর্শকের আগ্রহ তুঙ্গে। ঈদের তৃতীয় সপ্তাহে এসে সিনেমা দুটির হল সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে জংলির প্রেক্ষাগৃহ বেড়েছে তিনগুণ। তবে কাঠামোগত কারণে এখনো প্রযোজকরা সিনেমার লগ্নি তুলে আনতে পারেননি।


কয়দিন আগে এক সাক্ষাৎকার বরবাদের শাহরিন আক্তার সুমি সিঙ্গেল স্ক্রিনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের ডিস্ট্রিবিউশন টিম কিছুদিন আগে কিছু সিনেমাহল অনানুষ্ঠানিকভাবে ভিজিট করে। আমাদের রিপোর্টে লেখা ছিল ৪৫০ জন দর্শক, কিন্তু হলে গিয়ে দেখা যায় সিনেমাহলের লোকজনই গুনে দেখেছে ৫৭৮ জন দর্শক, আর আমাদের টিম গুনেছে ৬৫০ জনেরও বেশি। অথচ সেল রিপোর্টে সেই ৪৫০ জনই দেখানো হয়েছে। তাহলে এই অতিরিক্ত ২৫০-৩০০ জন কোথায় গেলো? আর, এটা শুধু এসির হিসাব -ডিসির দর্শক তো আমরা ধরতেই পারিনি। ঘটনাটি জয়দেবপুরের ‘উলকা’ সিনেমাহলে হয়েছে। তারা আমাদের লোকজনকে বের করে দিয়েছে সেখান থেকে, আমাদেরকে কথাই বলতে দিচ্ছিলো না। এটা তো আমি একটা সিনেমাহলের কথা বললাম। কিন্তু এটা অনেক সিনেমাহলের ক্ষেত্রেই হচ্ছে। আমাকে বগুড়া (মধুবন সিনেপ্লেক্স) থেকে ফোন করে বলছে যে আপা, শুধু সকালের শো-তে কিছুটা দর্শক কম, বাকি সব শো হাউজফুল। এমনকি মিডনাইট শোও প্রায় সবসময় হাউজফুল যায়, কখনও এক্সট্রাও চালানো হয়। আমি বলি-ভাই, এক্সট্রাটা না দেন, কিন্তু হাউজফুল তো দেন! তবুও দেখা যায়, শো হাউজফুল হলেও ২০০-৩০০ জন ঢুকছে, আর তার অর্ধেকও রিপোর্টে আসে না। আমাদের লোক কিছু বললেই বের করে দেওয়া হয়। সবকিছুর একটা সীমা আছে। এটা আসলে খারাপ লাগার জায়গা। আমিতো অন্যান্য প্রডিউসারদের মতো না। আমি নতুন বলেই সবাই আমার সাথে এটা করছে কিনা জানিনা।’


আরেক সাক্ষাৎকারে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমার লগ্নি হয়তো কোনো না কোনোভাবে উঠে আসবে। কিন্তু এই যে চুরির সিস্টেম, এটা থাকলে আদতে কোনো লাভ নেই। আগামী তিন বছরে আমরা আরো তিনটা ছবি বানাব, শাকিব খানকে নিয়ে। এখনকার পরিস্থিতি দেখে ভাবছি, শুধু মাল্টিপ্লেক্সেই ছবি মুক্তি দেব।’


ঢাকাই সিনেমার সামগ্রিক অবস্থা নিয়েও হতাশ সুমি। তিনি বলেন, “আমাদের দেশের মানুষের চিন্তা, মানসিকতা এখনো ছোটই রয়ে গেছে। যেকোনো কাজ করতে গেলেই অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। এমন অনেকে আছে, এফডিসিতে গেলে কিংবা কোথাও দেখা হলে বলবে, ‘আপা, সালাম দিয়েছি!’ এর বিনিময়ে সে কী চায়? টাকা। দেখুন, আমি তো খুশি হয়ে এমনিতেও দিতে পারি। কিন্তু এটাকে যে সিস্টেম বানিয়ে ফেলা হয়েছে, এই ছোট মানসিকতার সিস্টেম বন্ধ হওয়া উচিত। আবার অনেকে ফ্রি টিকিট চায়। অমুক দেখবে, তমুক তার পরিবার নিয়ে দেখবে, দশটা টিকিট দিন! আরে ভাই, আমরা তো বিশেষ প্রদর্শনী করব। সেখানে সবাইকে আমন্ত্রণ করব। যেহেতু আমাদের ছবিটা বড়, অনেক মানুষ জড়িত, ফলে একটা স্ক্রিন দিয়ে হবে না। তিন-চারটা স্ক্রিন দিয়ে ওই প্রদর্শনীটা করব। সেটার জন্য অন্তত অপেক্ষা করুন। না, তারা চেয়ে চেয়ে টিকিট নেবে! আমাদের মানসিকতা বড় করা উচিত। অনেকেই ফোন করে জানতে চাইছেন, এ সপ্তাহের পর কালেকশন কত হয়েছে? আমি কী জবাব দেব? আমি তো নিজেই সঠিক হিসাবটা পাচ্ছি না। তবে, প্রযোজকের জায়গা থেকে আমরা লগ্নির কাছাকাছি চলে এসেছি। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে আশা করছি লগ্নি পুরোপুরি উঠে আসবে। এটা শুধু দেশের কথা বললাম। দেশের বাইরেও তো মুক্তি দিচ্ছি। সেটার হিসাব আলাদা।”
মুক্তির নবম দিনের হালনাগাদ তথ্যমতে, সাত দিনে ‘বরবাদ’ সিনেমার টিকিট বিক্রি থেকে আয়ের পরিমাণ ২৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।  
এদিকে দাগির প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিলের মতে, শুধু প্রেক্ষাগৃহ থেকে লগ্নি তোলা অসম্ভব। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, “যেটা প্রত্যাশা ছিল, সেটাই পাচ্ছি। তবে পুরো সিস্টেমে তো সমস্যা আছে। প্রযোজকের অংশটাও নগণ্য। আবার সিঙ্গেল স্ক্রিনের হিসাবে বরাবরই গরমিল থাকে, স্বচ্ছ হিসাবটা পাওয়া যায় না। এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কথা বলতে হবে। ই-টিকিটিং চালু করতে হবে, বক্স অফিস থাকা লাগবে। তবে ‘দাগি’ নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে। একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন, ‘বরবাদ’-এর পরেই ‘দাগি’র অবস্থান। আরেকটা বিষয় হলো, শুধু দেশের প্রেক্ষাগৃহ থেকে ছবির লগ্নি তোলা অসম্ভব। সেটা ‘বরবাদ’-এর ক্ষেত্রেও সত্য, ‘দাগি’র ক্ষেত্রেও। অন্যান্য খাত মিলিয়ে লগ্নি তুলতে হয়। ওটিটি প্ল্যাটফরম, বিদেশে মুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে। সেগুলোর মাধ্যমে ছবির বাজেট তুলে আনা যায়। আমরা দুই দিন আগেই ‘দাগি’র লগ্নি তুলে ফেলেছি। আরেকটা বিষয়ে বলতে চাই, হলের সংখ্যা। ‘দাগি’র হলসংখ্যা তুলনামূলক কম হতে পারে। তবে আমাদের কাছে অনেকেই ছবি চেয়েছে। আমরা দিইনি। এমনও হয়েছে, ১৫-২০ হাজার টাকায় ছবি নিতে চায়। এত কমে তো দেব না। তাদের প্রেক্ষাগৃহে ১০-১২ লাখ টাকার ব্যবসার সুযোগ আছে, সেখানে এই অল্প টাকায় কেন ছবি দেব? আবার অনেক হলে ‘দাগি’ চালানোর পরিবেশও নেই। এসব বিবেচনা করেই আমরা হল কম নিয়েছি। তবে বড় বড় সিঙ্গেল স্ক্রিন যেগুলো আছে, সেগুলো থেকে ‘বরবাদ’ নামলে ‘দাগি’ উঠবে।”


অবশ্য গত ২ এপ্রিল সংবাদমাধ্যমে শাহরিয়ার শাকিল বলেন, এই মুহূর্তে আমরা বলতে পারি ‘দাগি’ সুপারহিট। গত বছর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির ৪ দিনের মাথায় আমরা বুঝতে পারি ‘তুফান’ সিনেমা ব্লক বাস্টার হিট। এ হিসেবেই ‘দাগি’ সুপারহিট।


শাহরিয়ার শাকিল এদিন আরো বলেন, ঈদের দিন কম-বেশি সবার সিনেমাই ভালো ব্যবসা করে। তাই আমি বলবো, কোনো সিনেমা হিট হয়েছে কিনা জানতে ঈদের দিন কাউন্ট করলে হবে না। ঈদের দিন পেরোনোর পরও যদি কোন সিনেমা দর্শক আগ্রহে প্রেক্ষাগৃহে টিকে থাকে, হিট হতে সে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আমি বলবো, ‘দাগি’ সিনেমা এখনও প্রেক্ষাগৃহে টিঁকে আছে।


অন্যদিকে শতভাগ সাফল্যের দাবি করলেন ‘জংলি’র পরিবেশনার সঙ্গে জাহিদ হাসান অভি। তার ভাষ্যে, “আমাদের শুরুটা খুব কমসংখ্যক হল দিয়ে হয়েছে। পরে ক্রমে ওয়ার্ড অব মাউথে দর্শকের আগ্রহ এবং হলের সংখ্যা বেড়েছে। দর্শক ইমোশনালি কানেক্ট করতে পারছেন, এর ফলে তৃতীয় সপ্তাহে এসে বুম করেছে। তিনগুণ হলে চলছে। আবার মাল্টিপ্লেক্সেও শো বেড়েছে প্রচুর। এখন দৈনিক ২৮টি শো চলছে। তার মানে ব্যবসা ভালো হচ্ছে। আর সেটার একটা অংশ স্বাভাবিকভাবেই আমরাও পাচ্ছি। সব মিলে ঠিকঠাক এগোচ্ছি। ‘জংলি’ একেবারে দেশের ছবি, দেশের আর্টিস্ট, টেকনিশিয়ান। এ রকম একটা ছবির বাজেট দুই-তিন কোটি টাকার মতো হয়। আমাদের ছবিটার বাজেটও আড়াই কোটির বেশি। তবে যেভাবে ছবিটা যাচ্ছে, তাতে আমরা খুব আশাবাদী, শতভাগ সফল হতে যাচ্ছি। দর্শকের মুখে মুখে ছবির কথা ছড়িয়ে যাচ্ছে। কোরবানির ঈদ পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আবার বাইরেও অনেক দেশে অফিশিয়ালি রিলিজ দিচ্ছি। সেখান থেকেও একটা ভালো অঙ্কের আয় হবে। দেশের প্রযোজকদের জন্য ‘জংলি’ একটা দৃষ্টান্ত হতে যাচ্ছে। আমি নিজেও আগের কোনো ছবিতে এত সাড়া পাইনি।”


এদিকে ‘জংলি’ সিনেমার আয়ের হিসাব প্রকাশ করেছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়া। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি জানাচ্ছে, প্রথম ১৬ দিনে জংলির আয় প্রায় ২ কোটি ৬ লাখ টাকা। 


Leave a reply