অনুদানে অনিয়ম, মামলা হচ্ছে
সরকারি অনুদানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিনেমা নির্মাণের নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না বা বিভিন্ন কারণে মানতে পারছেন না নির্মাতা। প্রথম চেক পাবার নয় মাসের মধ্যে চলচ্চিত্রের নির্মাণ শেষ না হওয়ায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনেক নির্মাতাকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
২০১০-১১ অর্থবছরের পর ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় একটি অনুদান ছবির বাজেট ১৯ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ লাখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকা এফডিসির কারিগরি সহায়তার জন্য প্রদান করা হয়। বাজেট বাড়িয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে একটি ছবি নির্মাণের জন্য সর্বমোট ৫০ লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছে সরকার।
কেন শেষ হয় না নির্মাণ : অনেক নির্মাতার জানান, অনুদানের জন্য যে টাকা দেয়া হয় সেটা একটি ছবির জন্য যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি এফডিসি থেকে যে কারিগরি সুবিধা দেওয়ার কথা থাকে বেশিরভাগ সময় সেই সুবিধা পাওয়া যায় না। ফলে ছবি নির্মাণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আবার তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সঠিক সময়ে ছবির কাজ শেষ না করে অনেক নির্মাতা অনুদানের টাকা ছবিতে খরচ না করে ব্যক্তিগত কাজে শেষ করে ফেলছেন। অনেকে ছবির কাজ শুরু করলেও শেষ করতে পারছেন না। আবার অনেকে অনুদানের টাকা পেলেও ছবির কাজে হাতই দিচ্ছেন না। ফলে শেষ হয়ে যাচ্ছে ছবি নির্মাণ ও জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময়। তাই শেষ না হয়ে শুধু আটকা পড়ছে একের পর এক সরকারি অনুদানের ছবি।
কয়েক বছরের ছবির হালচাল : ২০১০-১১ অর্থবছরে অনুদানপ্রাপ্ত ফারুক হোসেনের ‘কাকতাড়ুয়া’তে অভিনয় করেছেন শাহনূর, জয় চৌধুরী, আমান রেজা, আহমেদ শরীফ প্রমুখ। এ ছবির কাজ কয়েক বছর আগে শেষ হলেও এখনও সেন্সর বোর্ডে ছবিটি জমা পড়েনি।
২০১১-১২ অর্থবছরে মারুফ হাসান আরমানের ‘নেকড়ে অরণ্য’, সৈয়দ সালাউদ্দীন জাকীর ‘একা একা’ অনুদান পায়। এর মধ্যে ‘নেকড়ে অরণ্য’র কাজ এখনো শুরু হয়নি। অন্যদিকে ‘একা একা’র কাজ এখনও বাকি রয়েছে।
নারগিস আক্তারের ‘যৈবতী কন্যার মন’, আকরাম খানের ‘খাঁচা’, টোকন ঠাকুরের ‘কাঁটা’ অনুদান পায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে। এর মধ্যে মানবজমিনকে আকরাম খান বলেন, এরই মধ্যে ‘খাঁচা’র ডাবিংসহ সব কাজ শেষ।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘লাল সবুজের সুর’, ড্যানি সিডাকের ‘কাঁসার থালায় রুপালি চাঁদ’, ড. সাজেদুল আওয়ালের ‘ছিটকিনি’ ও জানেসার ওসমানের ‘পঞ্চসঙ্গী’সহ অনেক ছবির কাজ এখনো শেষ হয়নি।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে নূরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’, মাহমুদ দিদারের ‘বিউটি সার্কাস’, এন রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতীর কথা’, ফাখরুল আরেফীনের ‘ভুবন মাঝি’, মাসুদ পথিকের ‘মায়া- দ্য লস্ট মাদার’ ও শামীম আখতারের ‘রীনা ব্রাউন’ অনুদান পায়। এর মধ্যে দুটি সিনেমার নির্মাণ শুরু হয়নি।
এছাড়া জুনের শেষ দিকে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে অনুদান পাওয়া ৬টি সিনেমার নাম ঘোষিত হয়েছে।
মামলা হচ্ছে পরিচালকদের নামে : ৯ বছরে সরকারি অনুদান পেয়েছে ৪০টি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে মুক্তি পেয়েছে মাত্র ১৫টি। এ বিষয়ে এক বৈঠকে তথ্যসচিবকে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী। তথ্যসচিব নিজে বাদী হয়ে এবার এই পরিচালকদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এরই মধ্যে মামলার কাগজপত্র ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ। প্রথম ধাপে ‘নেকড়ে অরণ্য’ ছবির জন্য মারুফ হাসান আরমান, ‘একা একা’র জন্য সৈয়দ সালাউদ্দীন জাকি, ‘যৈবতী কন্যার মন’-এর জন্য নারগিস আক্তার, ‘খাঁচা’র জন্য খান শরফুদ্দীন মোহাম্মদ আকরাম ও ‘কাঁটা’ ছবির জন্য টোকন ঠাকুরের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। এর মধ্যে মারুফ হাসান আরমানের নামে ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৪৬৩ টাকা, সৈয়দ সালাউদ্দীন জাকীর নামে ১৩ লাখ ৭৬ হাজার ৮২২ টাকা, নার্গিস আক্তারের নামে ২৪ লাখ ৮৬ হাজার ৪১ টাকা, খান শরফুদ্দীন মোহাম্মদ আকরামের নামে ২৪ লাখ ২৫ হাজার ১৫৬ টাকা এবং টোকন ঠাকুরের নামে ১৩ লাখ চার হাজার ৯৪৭ টাকার পিডিআর আইন অনুযায়ী সার্টিফিকেট মামলা দেওয়া হবে বলে জানায় মন্ত্রণালয়। পরে অন্য পরিচালকদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে।
সূত্র : মানবজমিন ও কালের কণ্ঠ