Select Page

‘অনুদান বিতর্কে’ জবাব দিল তথ্য মন্ত্রণালয়

‘অনুদান বিতর্কে’ জবাব দিল তথ্য মন্ত্রণালয়

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩২টি চলচ্চিত্রকে মোট ১৩ কোটি টাকা সরকারি অনুদান দেওয়ার তালিকা সম্প্রতি প্রকাশ করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ১২টি এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ২০টি। এবারের অনুদান নিয়ে কমিটির স্বচ্ছতা ও স্বজনপ্রীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট কেউ কেউ।

এর মধ্যে গত রোববার দৈনিক সমকালে প্রকাশিত ‘চলচ্চিত্রের অনুদান নিয়ে তামাশা!’ শীর্ষক প্রতিবেদরে বলা হয়— যারা অনুদান দেবেন, তারাই এবার নিয়েছেন অনুদান! তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সিনেমা নির্মাণের জন্য অনুদানপ্রাপ্ত মো. আবিদ মল্লিক চলচ্চিত্র অনুদান উপকমিটির সদস্য। চলচ্চিত্রবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি এবং চলচ্চিত্র অনুদান স্ক্রিপ্ট বাছাই কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন সাদিয়া খালিদ রীতি।

আরো বলা হয়, চলচ্চিত্রবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটিতে রয়েছেন মো. আরিফুর রহমান ও মুশফিকুর রহমান। এ ছাড়াও ফিল্ম আর্কাইভ বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য লাবিব নাজমুস ছাকিব এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সংস্কারে সার্চ কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সাইদুল আলম খান।

এসব অভিযোগ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে ‘স্বার্থের সংঘাত’ উল্লেখ হওয়ায় ওই প্রতিবেদনের বাইরেও অন্যদের আপত্তির উত্তর মেলে প্রতিবাদ পত্রে।

প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, ‘‘সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যারা অনুদান দেবেন, তারাই এবার নিয়েছেন অনুদান।’ অনুদান কমিটির স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। উল্লিখিত বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা হলো, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য/স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান প্রদান নীতিমালা, ২০২৫’ মেনেই অনুদানের জন্য চলচ্চিত্র নির্বাচন করা হয়েছে। এই নীতিমালার আলোকে গঠিত ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বাছাই ও তত্ত্বাবধান কমিটি’ এবং ‘স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বাছাই ও তত্ত্বাবধান কমিটি’ সরকারি অনুদানে চলচ্চিত্র নির্মাণের আবেদন যাচাই-বাছাইপূর্বক সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করে।’’

এতে আরও বলা হয়, ‘‘এই দুই কমিটি ছিল ১১ সদস্যবিশিষ্ট, যেখানে চলচ্চিত্র সম্পর্কে অভিজ্ঞ পাঁচজন ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। চলচ্চিত্র বাছাই ও তত্ত্বাবধান কমিটি কর্তৃক বাছাইকৃত গল্প/চিত্রনাট্য এবং আবেদন অনুদান কমিটি মূল্যায়ন করেছে। নীতিমালা অনুযায়ী, অনুদান প্রদানের জন্য পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্বাচনের লক্ষ্যে দুটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়। উভয় কমিটি ছিল ৯ সদস্যবিশিষ্ট, যেখানে চলচ্চিত্র বিষয়ে অভিজ্ঞ চারজন ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কমিটির প্রত্যেক সদস্য অনুদানের জন্য আবেদনকৃত চলচ্চিত্রের গল্প/চিত্রনাট্য মূল্যায়ন করে আলাদাভাবে নম্বর প্রদান করেছেন। কমিটির সব সদস্যের মূল্যায়নকৃত নম্বরের যোগফলের ভিত্তিতে অনুদানের জন্য চলচ্চিত্র বাছাই করা হয়। অনুদান কমিটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতার সঙ্গে অনুদানের জন্য চলচ্চিত্র বাছাই করেছে।’’

প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, ‘‘সিনেমা নির্মাণের জন্য অনুদানপ্রাপ্ত মো. আবিদ মল্লিক চলচ্চিত্র অনুদান উপকমিটির সদস্য।’ এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হলো, পূর্ণদৈর্ঘ্য/স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান প্রদান নীতিমালা, ২০২৫-এ ‘চলচ্চিত্র অনুদান উপকমিটি’ নামে কোনো কমিটি নেই। সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তথ্য মন্ত্রণালয় সংস্কারে সার্চ কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সাইদুল আলম খান (অনুদানের জন্য মনোনীত চলচ্চিত্রের প্রযোজক)।’ বিষয়টিতে মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হলো, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের গঠিত সার্চ কমিটির মেয়াদ কয়েক মাস আগেই শেষ হয়েছে।’’

‘‘চলচ্চিত্রবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি এবং চলচ্চিত্র অনুদান স্ক্রিপ্ট বাছাই কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন সাদিয়া খালিদ রীতি (অনুদানের জন্য মনোনীত চলচ্চিত্রের প্রযোজক)।’ এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হলো, সাদিয়া খালিদ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করেছিলেন। তিনি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বাছাই ও তত্ত্বাবধান কমিটিতে ছিলেন না। তিনি ছিলেন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বাছাই ও তত্ত্বাবধান কমিটির সদস্য। তার ক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাতের বিষয়টি প্রযোজ্য হবে না। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অন্য কোনো কমিটির সদস্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারবেন না—এমন কোনো বিষয় ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য/স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান প্রদান নীতিমালা, ২০২৫’-এর কোথাও উল্লেখ নেই।’ সংবাদে অন্য যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলোও ভিত্তিহীন।’’

এর আগে মূল প্রতিবেদনে অনুদান নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে জুরি বোর্ডের সদস্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক আকরাম খান বলেন, ‘যে সিনেমাগুলোকে সর্বোচ্চ মার্ক দিয়েছি সেই সিনেমাগুলোই অনুদানের তালিকায় এসেছে। এতে কোনো চাপ ছিল না। নিয়মনীতি মেনেই সিনেমগুলোকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। অনুদান নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয়টি অবান্তর।’

এছাড়া বরেণ্য নির্মাতা মতিন রহমান বলেন, ‘চলচ্চিত্রের অনুদান নিয়ে বিতর্ক নতুন কোনো ঘটনা নয়, যারা পাবেন না তারা বিতর্ক নিয়ে মাঠে থাকবেন। পরের বছর আবার তারা পাবেন। এটিই নিয়ম। যারা বিতর্ক করছেন তাদের শাহবাগের মোড়ে আমরা আগেও দেখেছি। যারা অনুদান বঞ্চিত হন তারা সবসময়ই অহেতুক বিতর্কের সৃষ্টি করেন। সরকারে প্রতিনিধিদের তো একটি দায়িত্ব আছে। সিনেমার প্রতি তাদের দায়িত্ব রয়েছে। এমনিতে তারা নির্বাচিত হননি। যাদের অনুদান কমিটিতে নির্বাচন করা হয়েছে কোনো না কোনো যোগ্যতার ভিত্তিতে করা হয়েছে। তাদের নিজম্ব চিন্তা থেকেই তারা সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছেন। এটিকে অবহেলা করার কিছু নেই।’


Leave a reply