জাজকে সরিয়ে বসছে শাকিব খানের প্রোজেক্টর-সার্ভার, বিরোধের ইঙ্গিত
জাজ মাল্টিমিডিয়াকে হটিয়ে প্রেক্ষাগৃহগুলোতে বসছে নায়ক-প্রযোজক শাকিব খানের উদ্যোগে নতুন প্রোজেক্টর ও সার্ভার। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির এক সংবাদ সম্মেলনে এমন ইঙ্গিত মিলেছে।ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হল মালিকদের এমন অনুরোধ জানান সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কাজী শোয়েব রশীদ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার পক্ষ থেকে কয়েক বছর আগে সিনেমা হলগুলিতে ডিজিটাল ফরমেটে নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শন উপযোগী নিম্নমানের ডিজিটাল প্রজেক্টর ও সার্ভার সিনেমা হলগুলিতে স্থাপন করা হয়। সম্পূর্ণ নতুন এ বিষয় সম্পর্কে আগে থেকে সিনেমা হল মালিকদের কোনও ধারনা না থাকায় জাজ মাল্টিমিডিয়া বেশ কিছু আর্থিক শর্ত আরোপ করে মেশিন স্থাপন করে। এ বিষয়টি আর্থিক দিক বিবেচনায় প্রদর্শক এবং প্রযোজক পরিবেশকদের কাছে অগ্রহণযোগ্য শর্তাবলীর বিষয়ে সবাই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন। কিন্তু এখন মেশিন সমূহ ক্রমাগত অকেজো হয়ে পড়ছে। আর এতে সিনেমা হল মালিকগন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। জাজ মাল্টিমিডিয়ার পক্ষ থেকে কয়েক মাস আগে একটি লিখিত প্রস্তাবনা সিনেমা হল মালিকদের বরাবরে পাঠানো হলে, প্রদর্শক সমিতির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেওয়া হয় জাজকে। কিন্তু তারা কোনও আলোচনায় বসেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জন্য সুখবর এই যে, দেশের সবচাইতে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খান উন্নততর প্রযুক্তির প্রজেক্টর ও সার্ভার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন আমাদের সমিতিকে। শাকিব খানের এই প্রস্তাবকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। তাই, এই নতুন প্রদর্শন ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার জন্য সারাদেশের সিনেমা হল মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে সমিতিটির সভাপতি মো. ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ, সহ-সভাপতি আমির হামজা এবং আর. এম ইউনুস রুবেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে জাজ মাল্টিমিডিয়ার জেনারেল ম্যানেজার এবি সবুজ বলেন, ‘গত ৭ বছর ধরে আমরা প্রজেক্টর ও সার্ভার সার্ভিস দিয়ে এসেছি হলগুলোতে। কোথাও কি শুনেছেন আমাদের প্রজেক্টরের কারণে হল বন্ধ? দেশের ১০৪টি প্রেক্ষাগৃহে আমাদের পুরো সেটআপ দেওয়া। এছাড়া ২৯০ হলে আমরা সার্ভার দিয়ে থাকি। এখানে ২০টি হলের জন্য আমাদের অতিরিক্ত ৫টি করে সার্ভার ও প্রজেক্টর দেওয়া থাকে। যেন কোনও সমস্যা হলে দ্রুত এগুলো ব্যবহার করা যায়। এরপরও আমরা এগুলো নিয়মিত পরিবর্তন করি। তাই সার্ভার বা প্রজেক্টর নষ্টের কথাগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
তিনি আরও যোগ করে বলেন, ‘গত সাত বছর ধরে জাজ তিলে তিলে এই ডিজিটাল সেক্টরটাকে গড়ে তুলেছে। আজ হুট করে সংবাদ সম্মেলন করে অন্য প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি, কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই কাজগুলো করা হচ্ছে। হুট করে সিদ্ধান্ত নয়, আলোচনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রের উন্নয়ন সম্ভব। আশা করি, কারও স্বার্থসিদ্ধির জন্য নয়, চলচ্চিত্রের জন্য সবাই কাজ করবেন।’
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটির সিইও অলিমুল্লাহ খোকন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চুক্তিপত্র ভেঙে জোরপূর্বক আমাদের প্রেক্ষাগৃহে প্রজেক্টর ও সার্ভার বসানো হলে মামলা করব।”
এদিকে এরই মধ্যে নাকি সাতটি প্রেক্ষাগৃহে বসানো হয়েছে প্রজেক্টর ও সার্ভার। বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস। তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে ঢাকার শাহীন, খুলনার শঙ্খ সিনেমা হলে শাকিব খানের প্রতিষ্ঠান এসকে বিগস্ক্রিন থেকে প্রজেক্টর ও সার্ভার বসানো হয়েছে। এই দুটি হলের নামই এখন মনে পড়ছে।’
তিনি জানান, এসকে বিগস্ক্রিনের পরিকল্পনা ঈদের আগে আরও কিছু হলে প্রজেক্টর মেশিন এবং সার্ভার বসানো। মেশিনগুলো থেকে পাওয়া ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।
গত রোববার (৪ আগস্ট) প্রদর্শক সমিতিকে চিঠির মাধ্যমে প্রেক্ষাগৃহে প্রজেক্টর ও সার্ভার বসানোর আহ্বান জানানোর জন্য বলেন শাকিব খান। তারই প্রেক্ষিতে সোমবার (৫ আগস্ট) রাতে অনুষ্ঠিত হয় প্রদর্শক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় সমিতির পক্ষ থেকে হল মালিকদের কাছে শাকিব খানের আহ্বান পৌঁছে দেওয়া হবে।
শাকিব খানের প্রজেক্টর ও সার্ভার হলে নিতে চাইলে কেমন খরচ হবে? জানতে চাইলে এসকে বিগ স্ক্রিনের অন্যতম ডিরেক্টর মো. ইকবাল বলেন, ‘প্রজেক্টর ও সার্ভার নিতে কেমন খরচ লাগবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়গুলো নিয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
অন্যদিকে সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, ‘এসকে বিগ স্ক্রিন প্যানাসনিকের প্রজেক্টর নিয়ে এসেছে। যার লুমিনেন্স ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার। তবে এর খরচ জাজের মেশিন খরচের চেয়ে কম বলে জেনেছি।’
জাজ মাল্টিমিডিয়া থেকে ৩১২টি হলে বসানো প্রজেক্টর ও সার্ভারের লুমিনেন্স ৬ হাজার। এতে করে ধারণা করা যায় যে, এসকে বিগ স্ক্রিনের মাধ্যমে সিনেমার প্রক্ষেপণে তেমন কোনো উন্নতি না হলেও খরচের দিক থেকে কিছুটা রক্ষা পেতে পারেন প্রযোজকরা। আর প্রযোজকরা জানিয়ে দিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী হল মালিকদের থাকতে হবে নিজস্ব প্রজেক্টর।