ঢালিউড বিবর্তন : রুচির সেকাল-একাল
আপনি রাজ্জাক আমলের সিনেমা দ্যাখেন আপনি সেকালের দর্শক, সমালোচক হয়ে যান। আপনার চিন্তায় একজন রাজ্জাক, বুলবুল অাহমেদ, কবরী, শাবানা, উজ্জ্বল, সোহেল রানা, ববিতা, জসিম, ফারুক, জাফর ইকবাল তারা আলাদা আবেদন নিয়ে আসে। আপনি রংবাজ, অনুভব, সুতরাং, পিচ ঢালা পথ, স্বরলিপি, মাসুদ রানা, নয়নের আলো, লাইলী মজনু সিনেমাগুলো নিয়ে সেকালের গ্রাম, মফস্বল বা ঢাকাকেন্দ্রিক জীবনকে ভাবেন এবং সেটাই খুব বেশি স্বাভাবিক। আপনি ডিরেক্টরের প্রেজেন্টেশন, আর্টিস্টের অভিনয় খেয়াল করেন, খেয়াল করেন সিনেমার গল্প ও নির্মাণ। ষোলআনাই পান আপনি। আশি,নব্বই ও তারপরে এসেও আপনি মান্না, রুবেল, কাঞ্চন, বাপ্পারাজ, নাঈম, দিতি, চম্পা, সালমান শাহ, ওমর সানী, মৌসুমী, শাবনূর, পপি, আমিন খান, অমিত হাসান, রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিল, শাকিব, পূর্ণিমাদের সিনেমাতেও ভ্যারিয়েশন পান গল্পে, নির্মাণে।
এরপর যা ঘটে – আপনি একালে এসে এই একুশ শতকের বর্তমান আর্টিস্টদের কাছে তেমন গল্পের সিনেমা আশা করেন যা আমাদের জীবনে ঘটছে।আমরা জানি ও চিনি সেইসব গল্পকে। আমরা সেইসব স্ক্রিপ্ট রাইটারদের খুঁজছি যারা আমাদের ২০১৬ সালের গল্প দেবে। দেশের অবস্থা অাজ যেমন ঠিক সে ধরনের গল্পই চাচ্ছি অামরা। আমাদের গ্রামগুলো এখন মিনিটাউন হয়ে গেছে, গ্রামেও স্ক্র্যাচকার্ড পাওয়া যায়, মোবাইল ব্যাংকিং হচ্ছে, পারবারিক বন্ধনের দিকটা কমছে, যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে একক পরিবার হচ্ছে, নিজের জন্য ভাবছে সবাই, বেড়া দিয়ে বসতবাড়ি ঘিরে ফেলছে, সামান্য জমির বিরোধে লাশ ফেলে দিচ্ছে, বড়-ছোট সম্পর্কে চিড় ধরছে, শৈশবে ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করছে না মাঠে ঘাটে, তারা দাঁড়িয়াবাঁধা, গোল্লাছুট, মজার খেলা বউ-ছি খেলছে না।অাগের মতো এখন অার কেউ কারো বাড়িতে টিভি দেখতে যায় না। অালিফ লায়লা, মুগলি, হারকিউলিস, রবিনহুড, মিস্টেরিয়াস অাইল্যান্ড দেখে না। মজা করে বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল মুখস্থ করে বলে না ‘ভাসা ভাসা স্মৃতিগুলো অাজও মনে পড়ে।’ তদবির ছাড়া চাকরি মিলছে না, মিললেও সস্তায় শ্রম বিক্রি হচ্ছে, অফিস পলিটিক্সে পড়ে এ ওর চাকরি খাচ্ছে, একজন অার একজনের উন্নতিতে জ্বলছে।বড়বেলায় এখন প্রেম জমছে না অাগের মতো, প্রেম নিয়ে শরীর শরীর খেলায় মেতে উঠছে ছেলেমেয়েরা, রাস্তার মোড় থেকে গলি বা গলি থেকে রাজপথ পর্যন্ত ভয় ছেয়ে অাছে। নানা রকম ভয়ের মধ্যে অামাদের বসবাস। সে ভয়গুলো বৈচিত্র্যময়। রন্ধ্রে রন্ধ্রে অসুস্থতা ঢুকে গেছে সমাজে।সামাজিক, রাজনৈতিক ক্যান্সার নিয়ে বেঁচে অাছি অামরা। সিনেমা করতে অাসা এক বুক স্বপ্ন নিয়ে তারকা হবার নেশাতে মেয়েরা শরীর দান করছে প্রযোজক-পরিচালকের কাছে। ফিল্ম পলিটিক্সে ক্যারিয়ার শেষ হচ্ছে প্রতিভাবানদের অাবার পচা গলা প্রতিভাহীনরা দেদারছে করছে রাজত্ব।তারকাদের ‘ভক্ত’ বা ‘বিরোধী’ দুভাগে বিভক্ত হয়ে অার এক বাস্তব স্নায়ুযুদ্ধে শামিল হচ্ছে।
সিনেমার গল্পে ঘটমান বাস্তবতার এসব নমুনা দেখতে চায় ২০১৬-র দর্শক। হোক তা বাণিজ্যিক বা অফট্র্যাক।আমাদের বর্তমানের গল্প দেখাবে সেটাই যা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, পাড়া, মহল্লার, মফস্বল, রাজধানীর জীবন হতে পারে, হতে পারে ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ, স্কাইপে হয়ে অাধুনিকতার এপাশ-ওপাশ। বহুমুখী প্রেম, সেক্স, প্রতারণা এসবও আপডেট থাকতে হবে গল্পে আর বাস্তবতাটা ধরতে হবে।
প্রেম-ভালোবাসা অার ধুন্ধুমার মারামারি ছাড়াও মানুষের জীবনে অারো অনেককিছুই ঘটে দর্শক সেসব গল্প দেখতে চায় আমি নিশ্চিত।
কে কেমন শিল্পী তা বোঝা খুব সহজ, আবার কঠিন দুটোই।
রাজ্জাক যেমন করে কাঁদে আলমগীর তেমন করে কাঁদে না।রাজ্জাক কাঁদলে তাঁকে শিশুর মত নিষ্পাপ দেখায় আর আলমগীর কাঁদলে কথা বলে আর কাঁদে যেন কথার সাথে কান্নার একটা যোগাযোগ আছে। শাবানা যেভাবে কাঁদে ববিতা সেভাবে কাঁদে না। শাবানা কাঁদলে কাঁদে ভেতর থেকে যেন তিনি দেখিয়ে যাচ্ছেন আমাদের মায়েরাও আড়ালে আবডালে সবার অজান্তে চোখের পানি ফেলে যায় ঠিক তাঁর মত করেই। পরিচালক অামজাদ হোসেন বলেছিলেন- ‘শাবানার চোখের পানির মূল্য কোটি টাকা।’ এ মূল্য অঙ্কে নয় অভিনয়ের গভীরতায় সে কথা ঠাওর করতে অার দেরি হয় না।
ববিতা কাঁদলে মাথার চুল ধরে একটা বড় করে চিৎকার দিয়ে ডুকরে কাঁদে আর সেখানেই চিনে নেয়া যায় যে ববিতার কান্না ওরকম। যেমনটি গ্রামের ক্লাবে সিনেমা দেখার সময় মা-বোনেরা অাগে থেকেই প্রস্তুতি রাখতেন ববিতা কীভাবে কাঁদবে সেটা দেখানোর জন্য। তখন বুঝে যেতাম এ কান্নাটা তাদের চিরচেনা।
অলিভিয়া এক টুকরো সাদা মেঘের ভেলা।’অায়রে মেঘ অায়রে’ বলে যে মেয়ে নিজেকে জানিয়েছে। অঞ্জনা, অঞ্জু, রোজিনা, সূচরিতা এরা অাধুনিক তাঁদের সময়ের থেকে। তাঁদের সিনেমা বিষয়বৈচিত্র্যে ভরা। দিতি তাঁর সময়কে অতিক্রম করা প্রতিভা। তাঁর অাধুনিকতা তাঁর কস্টিউম সিলেকশনে ধরা পড়ে।
বুলবুল অাহমেদের ব্যক্তিত্ব একাই একরকম। ঐ ব্যক্তিত্বে গুরুগম্ভীর একটা ব্যাপার থাকে। তিনি ‘মহানায়ক’ হয়ে যে অভিনয়ক্ষমতাকে দেখান সেখানে আর কাউকেই তাঁর সমতুল্য লাগে না। জসিম যেভাবে রক্তচোখে তাকায়, বড় হাতের মুষ্ঠিতে ঘুষি মারে ওটা আর কাউকে মানায় না। ওয়াসিমের তারুণ্য অার কারো মতো না। উজ্জ্বলের একটা চিরসবুজ লুক অাছে। ফারুক গ্রামীণ অাবহতে অনন্য। জাফর ইকবালের সময়ের থেকে এগিয়ে থেকে এগিয়ে থাকা স্টাইল, ফ্যাশন, ক্রেজ, অভিনয় তাঁর অধ্যায়কে জানায়। মান্না গালি দিলে, শাসালে – ঐ গালিটা, শাসনটা আর কেউ পারে না। তার অাওয়াজে হলের পর্দা কাঁপতে থাকে। ইলিয়াস কাঞ্চনকে তার নিজের মতো অসাধারণ লাগে। তার অভিনয়, বডি ল্যাংগুয়েজে ফুটে ওঠে সে রাজত্ব করেছিল তার সময়ে। রুবেলকে চেনা খুব সোজা। মার্শাল অার্ট দেখলে তাকে বাকিদের থেকে অালাদা করা যায়। তার ফাইট দেখলে নড়েচড়ে বসতে হয় কেননা ওটা সবার থেকে অালাদা। বাপ্পারাজকে তার হাসি-কান্নায় চেনা যায়। একদম অালাদা।ব্যর্থ প্রেমে তাকে এতটাই চরিত্রে ডুবে গিয়ে অভিনয়ে পাওয়া যায় যে সেটার তুলনা করাটাও বোকার কাজ। সালমান শাহ একাই একশো। অভিনয়, স্টাইল, তারকা খ্যাতি, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে অনন্তকালের একটা তৃষ্ণা সে। নামটাই যথেষ্ট।সোহেল চৌধুরী-র জন্যও অাক্ষেপ হয়। নিজস্বতা ছিল।
হুমায়ুন ফরীদি পর্দা অার চরিত্র শাসন করা বিরল অভিনেতা। তাঁকে চিনতেও নামই যথেষ্ট। ইতি ও নেতি দুদিকেই সেরা। ওয়ার্ল্ড ক্লাস অভিনেতার সব গুণ তাঁর অাছে। রাজিব রাজিবই। অনেকে বলে বাঘের মতো গর্জন তাঁর। অাবার কোমল অভিনয়েও মিশে যেতে পারেন অনায়াসে। এটিএম শামসুজ্জামানকে চিনতে একসাথে তিনটি বৈশিষ্ট্যকে মাথায় অানতে হয়। খলনায়ক, ভালো মানুষ অার কৌতুক অভিনেতা। এ এক অাশ্চর্য কম্বিনেশন।অাহমেদ শরীফকে জসিমের সামনে দাঁড় করালে খেলা জমে।
দিলদারকে নিয়ে বলার মতো কথা একটাই – অার হবে না। মৌসুমী হাসলে হাসিটা অতুলনীয়, অভিনয়টা মৌসুমীরই মৌসুমকে দেখায়, দীর্ঘ ক্যারিয়ার অার অনেক সাফল্যের অধ্যায়। শাবনূর কাঁদলে, হাসলে, দুষ্টুমি করলে, ব্যক্তিত্বময় অভিনয় করলে শুধুই তাকে মানায় যেন সে দুই নয়নের আলো। শাবনূর একটাই। অামিন খান অন্যতম সুদর্শন, সুপুরুষ, সুঅভিনেতা। রিয়াজ রোমাঞ্চে, ব্যক্তিত্বে, সাহিত্যনির্ভরে রিয়াজময়।যে কোনো চরিত্রে মানানসই। শাকিব খান লম্বা ক্যারিয়ারের বড় অভিজ্ঞতায় যে কোনো চরিত্রে অভিনয়ে সক্ষম বা চ্যালেঞ্জ নিতে জানা অভিনেতা।পূর্ণিমা স্নিগ্ধতা, লাবণ্য, সুন্দর অভিনয়ে নিজের মতো বেড়ে ওঠা একজন। অাধুনিক সে। এমনকি চোখ বন্ধ করে স্মৃতি হাতড়ালে অালোচনার টেবিলে না থাকা অন্তরা-ও গেটঅাপে তাঁর সময়ের চেয়ে অাধুনিক।অারেফিন শুভ বড় বিরতির পরে অাশা জাগানিয়া নিজের একক স্টাইলে, দর্শক ফেরানো পরিবর্তনশীল নায়ক।
সিনেমা নিয়ে লেখালেখিতে সেকাল-একাল মেলবন্ধন করা একটা জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পুরনো দিনের সিনেমা নিয়ে ভাবলে বা লিখলে নতুন দিনের সিনেমার জন্য তা কতটুকু কার্যকরী হবে সে চিন্তাটা করা আরো বেশি জরুরী। এ বিষয়ে কিছু মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। প্রতিক্রিয়াশীলতা আর সমালোচনার মধ্যে সুনির্দিষ্ট তফাত আছে। প্রতিক্রিয়াশীলতাও এক ধরনের সমালোচনা কিন্তু প্রকৃত সমালোচনার ধাঁচ আলাদা। সেখানে যৌক্তিক অবস্থানের সাথে পরিমিতিবোধ রক্ষা করা বড় ব্যাপার বটে।
আমাদের শুধু নয় বিশ্বের যে কোনো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি তাদের পুরনো দিনের জন্য গর্বটাই বেশি অনুভব করে। যখন কেউ বলে ‘old is gold’ সে কথাটার ভেতর ঢুকে কথাটাকে নিখুঁতভাবে উপলব্ধির সুযোগ আছে। ‘gold’ শব্দটিকে বাংলায় এনে বিভিন্নভাবে প্রয়োগের সুযোগ থাকে যেখানে ভালো লাগার ব্যাপার আছে। যেমন – ‘স্বর্ণালী দিন’, ‘স্বর্ণালী সময়’, ‘স্বর্ণালী সঙ্গিনী’, ‘স্বর্ণালী সন্ধ্যা’ এরকম। প্রয়োগগুলোর দিকে খেয়াল করলে nostalgic emotion খুব ভালোমতই অনুভব করা যায়। যখন দেখি পুরনো দিনের একটা সিনেমা, ব্যক্তিত্ব বা গান নিয়ে কথা বলতে গেলে ‘আবেগ’-কে মেনশন করে নেতিবাচকভাবে সমালোচনা করা হয় সেটা ভীষণ খারাপ লাগে। পুরনোকে দেখে তার থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন দিন এগিয়ে যাবে।
কিছু পয়েন্ট করে বলছি –
- আপনি যতই আধুনিক হন না কেন আপনার বাবার অভ্যাসগুলোকে আপনি মিস করবেন, মনেপ্রাণে ভালোবাসবেন। যখন দেখবেন বাবা নেই সেটা আরো পোড়াবে আপনাকে। বাবার কথা গর্ব করে সবাইকে বলবেন। পুরনো দিনের সিনেমাও যা কিছু পুরনো তাকে আবেদন রেখে দেখায় সেজন্য ‘আমার গরুর গাড়িতে বৌ সাজিয়ে’ এটা আপনাকে যত সহজে emotional attachment দেবে নতুন দিনের গান তত গভীরভাবে দেবে না।
- আপনি যতই মোবাইল ডাউনলোডের যুগে অভ্যস্ত হন না কেন পুরনো দিনের টেপরেকর্ডার বা ক্যাসেটের দিনগুলো যদি কাটিয়ে আসেন তবে ঐগুলো আপনাকে টানবে। কারো কাছে এখনও যদি সেগুলো থাকে তো দেখবেন তাকে লোকে সম্মানের চোখে দেখে।
- আপনি ডিজিটালে এসে অ্যানালগকে যতই অবজ্ঞা করুন না কেন ঐ অ্যানালগের সময়টাতেই ৩৫ মিলিটারের সাহায্যে রবিশস্য ফলেছে। ঐ সিনেমাগুলোই আপনাকে বারবার দেখাচ্ছে সিনেমা কিভাবে বানাতে হয় আর দেখার চোখ যদি অপরিপক্ব হয় তবে না মাকাল ফলের মতো করে গ্রহণ করবে আজকের প্রজন্ম। ফলাফল হিশেবে সিনেমাহলে গিয়ে সিনেমার মধ্যে ‘টেলিফিল্মে’-র আবহ পেয়ে মেজাজ যাবে বিগড়ে। এখন খেয়াল করে দেখুন তো পুরনো সিনেমার খুঁটির জোর কতটা।
- আপনি চোখের সামনে রাজ্জাক, বুলবুল আহমেদ, শবনম, অলিভিয়া, শাবানা, কবরী, ববিতা, সুচন্দা, ওয়াসিম, উজ্জ্বল, সোহেল রানা, জাফর ইকবাল, ফারুক, জসিম, কাঞ্চন, মান্না, রুবেল, অণ্জু, দিতি, চম্পা, শাবনাজ, নাঈম, সালমান শাহ, ওমর সানী, আমিন খান, মৌসুমী, শাবনূর, রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিল, পূর্ণিমা, শাকিব, তাদের দেখার পর পরবর্তীকালের মাহী, আঁচল, পরীমণি, আরিফিন শুভ, বাপ্পী, শিপন, মীম, ফারিয়া, এবিএম সুমন তাদেরকে সিনেমার পুরনো তারকা বা স্টারডম কিংবা অভিনয়-স্টাইল ইত্যাদিতে বিশ্লেষণ করে দেখুন তো কী পান। হ্যাঁ, খুব বড়মুখ করে আধুনিকতার কথা সবার আগে হয়তো বলবেন কিন্তু সে আধুনিকতা কি মেইনস্ট্রিম সিনেমার প্রকৃত স্বাদ এনে দিতে পেরেছে? কিছু পেরেছে।যেগুলো পেরেছে দর্শকভেদে তারপরেও আরো আশা করার বাস্তবতা দেখা গেছে। তার মানে পুরনো সিনেমা, তারকা এসবের ধারেকাছেও অাধুনিক কোনোকিছু দাঁড়াতে পারেনি।
- আপনার বাবার আমলে যে স্টাইলে খাওয়া হত, বেড়ানো হত, চিঠি লিখে হৃদয় লেনদেন হত সেসবকে ‘so called’ আপনি বলতেই পারেন কিন্তু আজকের দিনে সেসবের জন্যই আপনাকে হাহাকার দেখতে হবে। পত্রিকার পাতা খুললে পুরনো দিনের কথা বলে বলে আপনাকে নস্টালজিক করার আয়োজনটা বারবার করানো হবে। দেখবেন লেখার জন্য বিষয় সিলেক্টেড হয়েছে ‘ফেলে আসা দিন’..কিংবা কবির লাইন চোখে পড়বে ‘দাও ফিরে অরণ্য, লও এ নগর।’ আপনি যতই বর্তমান কবিতা পড়ুন আপনাকে আলোড়িত করার জন্য ‘শোন মা আমিনা রেখে দে রে কাজ/ ত্বরা করে মাঠে চল’ কিংবা ‘তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়’ এমন দু’চারটা লাইনই যথেষ্ট।
- ইউটিউবে পুরনো সিনেমা ও গানের নিচে যে কমেন্টগগুলো থাকে তার সাথে এখনকার সিনেমা ও গানের কমেন্টগুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণে এলে দেখবেন নির্মাণের ‘ন্যাচারালিটি’-র সাথে দর্শকের পছন্দের ‘ন্যাচারাল ফিলিংস’ কতটা পার্থক্য করে। এখনকার সবকিছুর জন্য ৮০% গালিগালাজ দেয় কমেন্টদাতারা। কেন দেয় কারণটা খোঁজা গুরুদায়িত্বের পর্যায়ে পড়ে।
এই যে এত কথা বললাম হয়তো ভাবছেন এ ছেলেটা আসলে পুরনো দিনেই পড়ে থাকতে চায়, একদম ভুল ভাবছেন। পরিবর্তন চাই তবে পুরনোকে ভালোবেসে।পুরনো দিনের সিনেমা, গান, তারকা, অভিনয়, স্টাইল, স্টারডম ইত্যাদিতে আপ্লুত হয়েই নতুনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। পুরাতনকে জানাতে চাই।নতুনকে আবেগী করাতে চাই কারণ সে আবেগটা তাদেরকে চোখে অাঙুল দিয়ে দেখাবে অভিনয় একটা সাধনা, ইন্ডাস্ট্রি শুধু টাকা কামানোর জায়গা না তার প্রতিও আবেগ দরকার নিজের কাজটা মন দিয়ে করে দর্শকের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকা এবং আগামী প্রজন্মকে উদাহরণটাকে শ্রদ্ধাভরে গ্রহণ করানোর জন্য। দুই আবেগ এক হওয়া জরুরি। তার জন্য পুরাতন থেকে গ্রহণ-বর্জন তারতম্য রাখলেই হবে। পুরনো কথায় ‘ভালো লাগে, বললাম’ শুনতে যত ভালো লাগে বিকৃত অাধুনিকতায় ‘ভাল্লাগে, বল্লাম’ শুনতে তত ভালো লাগে না। ‘ম্যানিয়াক’ যত না দেয় তার থেকে কেড়ে নেয় অনেক অনেক বেশি।
তাই, আবেদন থাকবে লিখতে গিয়ে আমার আবেগকে যেন খাটো করে দেখা না হয়।আবেগ চিরন্তন যদি তার আবেদনটা বোঝানো যায়।
জয়তু ঢালিউড..