
‘ব্যবসায়িক কৌশলের’ দোহাই দিয়ে ঈদের সিনেমার শো বাড়াচ্ছে না স্টার সিনেপ্লেক্স
হালে বাংলা সিনেমার বাড়বাড়ন্ত অবস্থায় নেতৃত্ব দিচ্ছে মাল্টিপ্লেক্সগুলো। বিশেষ করে একমাত্র মাল্টিপ্লেক্স চেইন স্টার সিনেপ্লেক্সের বড় নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করছে ব্যবসার অনেকখানি। হল ও পর্দার সংখ্যা বেশি হওয়ার সুবাদে ঈদের সব ছবিই প্রদর্শন করছে তারা। তবে দর্শকের অনাগ্রহের কারণে ঈদের তৃতীয় দিনেই ‘অন্তরাত্মা’ নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাকি সিনেমাগুলোর পর্যাপ্ত চাহিদা থাকলেও সে অনুসারে শো না বাড়ানোয় অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের পাঁচদিন পর শুরু হওয়া নতুন সপ্তাহে হলিউড সিনেমার শিডিউল নিয়ে আপত্তি অনেকের। এছাড়া শুরু থেকে ‘জংলি’ কম শো পেয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

গতকাল রবিবার নাগাদ স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘বরবাদ’-এর শো ছিল ৪০টি, ‘দাগি’র ২৬টি, ‘জংলি’র ৭টি, ‘চক্কর ৩০২’-এর তিনটি ও ‘জ্বীন ৩’-এর দুটি। এর মধ্যে ‘জংলি’, ‘চক্কর ৩০২’ টিমের অভিযোগ, দর্শকের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও তাদের ছবির পর্যাপ্ত প্রদর্শনী দেওয়া হচ্ছে না। দুদিন আগে ‘বরবাদ’ নিয়ে শাকিব খানের ভক্তদের মুখেও একই অভিযোগের সুর শোনা গিয়েছিল। তবে গতকাল শোর সংখ্যা বাড়ানোয় ‘বরবাদ’ শিবিরে আনন্দ বিরাজ করছে।
‘জংলি’ নির্মাতা এম রাহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, “আগামীকাল [আজ] পর্যন্ত সব শো হাউসফুল। দর্শক হলে গিয়ে টিকিট পাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অন্য ছবি দেখছে। এর পরও ‘জংলি’র শো বাড়ানো হচ্ছে না। মিরপুরের সনি ও উত্তরা শাখায় শো ছিল, প্রতিটিই হাউসফুল গেছে। এর পরও এ দুটি শাখায় ‘জংলি’র শো দেওয়া হচ্ছে না। দর্শকদের জন্য ছবি বানিয়ে যদি তাদের দেখাতেই না পারি, তাহলে কী লাভ? চারদিকে দর্শকের আগ্রহ-হাহাকার দেখে নিজেরই খারাপ লাগছে।”
সরকারি অনুদান নিয়ে ‘চক্কর ৩০২’ বানিয়েছেন শরাফ আহমেদ জীবন। তিনি বলেন, “যাদের দেখাতে পারছি, তারা ভালো বলছেন। কিন্তু সবার কাছে তো ছবিটা নিয়ে যেতে পারছি না। পর্যাপ্ত হল পাইনি, শো যা পেয়েছি বা পাচ্ছি, সেগুলোর আবার টাইমিং সুবিধাজনক না। আসলে বাস্তবতা অনুযায়ী, প্রেক্ষাগৃহের চেয়ে ছবির সংখ্যা বেশি। আমি যেমন ‘চক্কর ৩০২’ ঈদে মুক্তি দিলাম, অন্যরাও চেয়েছেন তাঁদের ছবি ঈদে দিতে। ফলে একটা চাপ তো তৈরি হয়েছে। আমার ছবিটা হয়তো মসলাদার নয়, প্রচারণাও সেভাবে করা হয়নি। ফলে শুরুতে তেমন হাইপ ছিল না। কিন্তু এখন দর্শকের মুখে মুখে ছবিটার হাইপ তৈরি হচ্ছে, অথচ শো নেই! মাল্টিপ্লেক্সকে আর কী দোষ দেব, তাদের কাছে এটা ব্যবসা। সুতরাং কোন ছবি, কিভাবে, কখন চালাবে, সেটা তারা জানেন। কিন্তু শুরুতে আমার ছবির ২১টি শো ছিল, সেটা এখন ৪-এ চলে এলো! এটা আমি কাকে বলব?”
এসব অভিযোগের বিপরীতে স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ একই সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “ঈদের সব ছবি ভালো যাচ্ছে। প্রায় সাত-আট মাস পর প্রেক্ষাগৃহ জমে উঠেছে। এভাবে মাস খানেক চলবে বলে আশা করছি। ‘বরবাদ’, ‘দাগি’, ‘জংলি’ এমনকি ‘চক্কর ৩০২’ ছবিটাও দর্শক দেখছে। শো সংখ্যা দিয়ে আসলে ছবি জাজ করা যাবে না। শো বাড়বে, কমবে এটাই স্বাভাবিক। বড় ছবি কিংবা জনপ্রিয় তারকার ছবির শো বেশি হবে, আবার দর্শকের চাহিদার ওপর নির্ভর করে সেটা বাড়বে-কমবে; এভাবেই চলে। এটা আমাদের বিজনেস পলিসি অনুযায়ী সাজানো হয়। সব কিছু তো খোলাসা করা সম্ভব না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমরা সব ছবিকেই সুযোগ দিই। এই যে ‘চক্কর ৩০২’ তুলনামূলক স্বল্প পরিসরের ছবি, কিন্তু ভালো ছবি তো। তাহলে এটাকে কি আমরা শো দেব না? না দিলে তারা উৎসাহ পাবে কিভাবে? ছোট-বড় সব ছবিকেই আমরা শুরু থেকে উৎসাহ দিয়ে আসছি। তবু ইন্ডাস্ট্রির অনেকে আমাদের ওপর নাখোশ। এ নিয়ে আসলে বেশি কিছু বলারও নেই।”
ঈদ উৎসবে পর্যাপ্ত বাংলা ছবি থাকার পরও হলিউডের ছবি চালানো হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মেসবাহর ব্যাখ্যা, “দেখুন, আমরা দর্শকের কথা ভেবে শো রাখি। বাংলার পাশাপাশি বিদেশি ছবির মাধ্যমেই তো সিনেপ্লেক্সের দর্শক তৈরি হয়েছে। তাহলে যারা হলিউডের ছবি দেখতে চায়, তাদের কথা ভাবব না? সে জন্য অল্প কিছু শো রাখি। আবার দর্শকের সমাগম না হলে ঘুরেফিরে বাংলা ছবিকেই সেটা বরাদ্দ দিই। গত বছর ‘তুফান’-এর দাপটে হলিউডের ছবিও তো টিকতে পারেনি। এবারও তাই হচ্ছে। যেহেতু এটা একটা ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান, আমরা গ্রাহকের জন্য সব অপশন খোলা রাখতে চেষ্টা করি।”