মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা নাকি এসির বাতাস খেতে যায় দর্শক!
সিনেমা হলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ নতুন কোনো বিষয় না হলেও সিঙ্গেল স্ক্রিনের দর্শক ভাবতে পারে না যে, প্রবেশ মূল্যের কাছাকাছি হবে এসির খরচ। কিন্তু মাল্টিপ্লেক্সের ক্ষেত্রে তেমনই দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর মাল্টিপ্লেক্স নিয়ে এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আরটিভি।
সেখানে বলা হয়, স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ ৪০০ টাকার একটি টিকিটে এয়ার কন্ডিশনবাবদ দর্শকের কাছ থেকে কাটে ১৫৩ টাকা ৫৬ পয়সা, ৩৫০ টাকার টিকিটে কাটে ১৩৪ টাকা ৩৭ পয়সা, ৩০০ টাকার টিকিটে ১১৫ টাকা ১৬ পয়সা।
এসি বাদে বাকি খরচের মধ্যে থাকে প্রবেশ মূল্য, ব্যবস্থাপনা খরচ ও ট্যাক্স। সে হিসেবে প্রবেশ মূল্যের প্রায় কাছাকাছি ব্যয় করতে হয় এসি বাবদ। এর মধ্যে শুধু প্রবেশ মূল্য থেকে একটি অংশ পায় প্রযোজক।
যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাস কর্তৃপক্ষ ৫০০ টাকার টিকিটে ১৯৪ টাকা ৫৫ পয়সা, ৪০০ টাকার টিকিটে ১৫৫ টাকা ৬৪ পয়সা এয়ার কন্ডিশন খাতে কেটে রাখে। লায়ন সিনেমাস এয়ার কন্ডিশনের জন্য কাটে ৩৫০ টাকার টিকিটে ১৪৩ টাকা ১৮ পয়সা, ২৫০ টাকার টিকিটে ১০২ টাকা ২৬ পয়সা এবং ২০০ টাকার টিকিটে ৮২ টাকা।
চলচ্চিত্র নির্মাতারা বলছেন, এয়ার কন্ডিশনার সিনেমা হলের অবকাঠামোর অংশ। চেয়ার, কারপেট, দরজা-জানালার মতো এসিও প্রদর্শকের স্থায়ী খরচের মধ্যে পড়ে। তাই এসিকে টিকিটের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা কখনোই যৌক্তিক হতে পারে না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এসি বাবদ এত বেশি অংক কেটে রাখায় মাল্টিপ্লেক্সের টিকিট চলে গেছে দর্শকদের হাতের নাগালের বাইরে। উৎসবে, পার্বনে দর্শকের ভিড় হলেও টিকিটের মূল্য আকাশচুম্বী হওয়ার কারণে সারাবছর মাল্টিপ্লেক্সে দর্শকদের আনাগোণা কম। তাই চলচ্চিত্র বিনিয়োগে উৎসাহ হারাচ্ছেন প্রযোজকরা।
নির্মাতারা বলছেন, মাল্টিপ্লেক্স দর্শকদের কাছে উচ্চমূল্যে টিকিট বিক্রি করে। প্রযোজক সেখান থেকে পান গড়ে এক চতুর্থাংশ কিংবা তারও কম। তাই দর্শকরা বিপুল পরিমাণে ছবি দেখলেও লাভের মুখ দেখতে পারছেন না প্রযোজকরা। অযৌক্তিকভাবে এসিবাবদ মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মাল্টিপ্লেক্সওয়ালারা।
সিঙ্গেল স্ক্রিন থেকে আয়ের সুযোগ কমে আসায় ছবির পুঁজি তুলে আনাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য মাল্টিপ্লেক্স থেকে আরো বেশি হিস্যা পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংগঠন।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবশেক সমিতি, পরিচালক সমিতি ও প্রদর্শক সমিতির নেতৃবৃন্দ। সেই বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, মাল্টিপ্লেক্সের টিকিটে প্রযোজকের অংশ ঠিক করে দেবে সরকার। প্রায় সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও মাল্টিপ্লেক্সের টিকিটে প্রযোজকের হিস্যা বাড়েনি।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাবেক সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, মাল্টিপ্লেক্সের অবিচার নিয়ে অনেক কথা বলেছি। ৪০০ টাকার একটা টিকিটে প্রযোজক যদি পায় ৪৮ টাকা- এটা খুবই অযৌক্তিক, এটা মেনে নেয়া যায় না।। ২ কোটি টাকা দিয়ে ছবি বানালে সেই ছবি মাল্টিপ্লেক্সে কামাচ্ছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এই টাকার ৫০% যদি প্রযোজক পেত, তবে দেখা যেত, যে কতগুলো মাল্টিপ্লেক্স দেশে আছে- এগুলোতে ছবি চালিয়েই আরেকটা ছবি নির্মাণ করতে পারতেন প্রযোজক। এটার পরিবর্তন আনতে হবে। ব্যবসাটাকে একটা শৃংখলার মধ্যে আনতে হবে।
উল্টোদিকে মাল্টিপ্লেক্স মালিকরা বলছেন, প্রযোজকদের দাবি অযৌক্তিক। বাংলা ছবি চালিয়ে সারা বছর লোকসান গুণতে হয় তাদেরকে, চাইলেই টিকিটে শেয়ার বাড়িয়ে দেয়া সম্ভব নয়। আর দর্শকদের আরাম দিতেই এসি লাগানো হয়েছে।
লায়ন সিনেমাসের কর্ণধার মির্জা আব্দুল খালেক বলেন, দর্শক না থাকলেও সিনেমা হলের এয়ার কন্ডিশনার ঠিকই চলে। একটা হাউজফুল থিয়েটারের জন্য যতটুকু এসি লাগে, একজন দর্শক থাকলেও ততটুকু্ই এসি লাগে। যে কারণে বিশাল অংকের বিদ্যুৎ খরচ চলে আসে হল মালিকের পক্ষে।
যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জাহিদ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমার এখানে সেন্ট্রাল এসি চলে। ফলে এসিবাবদ টিকিটে একটা অংক রাখতে হয়।