Select Page

যে সকল বাংলাদেশি চলচ্চিত্র দেখা মিস করবেন না (৩য় পর্ব) – “নিরন্তর”

যে সকল বাংলাদেশি চলচ্চিত্র দেখা মিস করবেন না (৩য় পর্ব) – “নিরন্তর”

কাহিনী নেই, কাহিনী নেই বলে একটা হাহাকার লক্ষ্য করা যায় অনেক দর্শকের মধ্যে। পরিচালক আবু সাইয়ীদ যেনো দর্শকের সেই হাহাকারটা বুঝতে পারেন, তাই একের পর এক বানিয়ে চলেছেন ভিন্ন স্বাদের কিছু চলচ্চিত্র। তবুও, আমার মতে, দর্শকের অবহেলার শিকারই হয়েছেন তিনি – খুব বেশি ব্যবসাসাফল্য পায়নি তাঁর বেশিরভাগ চলচ্চিত্র। নামেমাত্র লভ্যংশই তুলতে পেরেছে তার মুভিগুলো। তবে একটা পরিতৃপ্তি হয়তো খুঁজে পেতে পারেন পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার আবু সাইয়ীদ – তাঁর বেশ কিছু মুভিই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জিতে নিয়েছিলো সমালোচক পুরষ্কার। তাঁর পরিচালিত অসাধারণ প্রিয় মুভি “নিরন্তর” নিয়ে আলোচনা করবো এই পর্বে।

নিরন্তর (২০০৬)

হুমায়ুন আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাস “জনম জনম” এর কাহিনী অবলম্বনে আবু সাইয়ীদের অন্যতম সেরা একটি চলচ্চিত্র “নিরন্তর”। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ থেকে একাডেমী এওয়ার্ডের জন্যে পাঠানো হয় মুভিটি। ২০০৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত ২ টি আন্তজার্তিক চলচ্চিত্র উৎসবে সমালোচকদের চোখে সেরা মনোনীত হয় চলচ্চিত্রটি। ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেজের রেটিং-এ বাংলাদেশি চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তম মুভিগুলোর একটি এটি – ৫৭ জন রেজিস্টার্ড ইউজারের ভোটে এর রেটিং ৮.৩।220px-Nirontor“নিরন্তর” – কেন এই নামকরণ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে প্রথমেই যে বিষয়টা মাথায় রেখেছিলাম তা হলো পরিচালক আবু সাইয়ীদের কাজের ধরণধারণ। সচরাচর প্রেমকাহিনী, মধুময় সমাপ্তির মুভি তিনি একেবারেই বানাননি। একটা সময়ে চলচ্চিত্র মানেই ছিলো ২-১ ঘন্টার বিনোদন, কিছুটা হাসিঠাট্টা – কিছুটা প্রেম-বিচ্ছেদ এবং অতঃপর মিলন। কিন্তু সেই সুখ-সুখ ধারাটাকে ভেঙ্গে চলচ্চিত্র মাধ্যমকে সমাজের প্রকৃত দর্পনরুপে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে রীতিমত বিদ্রোহ করে বসেন ভিত্তরিও সিকা, লুক গঁদা, পাসোলিনি ও ফেদেরিকো ফেলিনিসহ বেশ কিছু চলচ্চিত্র পরিচালক – তাঁদেরই হাত ধরে সৃষ্টি ও গড়ে উঠে নিওরিয়ালিজম বা সুররিয়ালিজম ধারার। আর বাংলাদেশেও যেন নিয়মিতভাবেই সেই ধারাটাকে অব্যাহত রাখার গুরুদায়িত্বটা কাঁধে নিয়েছেন আবু সাইয়ীদ। সমাজ উপরে উপরে সুন্দরের ভাব বজার রেখে যে অসুস্থতা নিরন্তর বয়ে চলেছে তারই যেনো একটা সামান্য পরিস্ফূটন “নিরন্তর” চলচ্চিত্রটি।forever_flows_02সচ্ছল একটা পরিবারই ছিলো তিথি’দের। তারপরে বাবা’র অন্ধত্ব থেকে পরিবারে আকস্মিক দুর্যোগ নেমে আসে। পরিবারের একমাত্র যে ছেলেটা সে যেনো বুঝেনা সংসারের বেহাল দশার কথা। চাকরি-বাকরির খোঁজ করে তিথি, কিন্তু সেটা যোগাড় করতে না পেরে বাধ্য হয় অন্ধকার পথে পা বাড়াতে। জোড়াতালি দিয়ে সংসারটাকে বয়ে নিয়ে বেড়ায়। একসময় হয়তো সংসারটা গুছিয়ে যাবে, সচ্ছলতা ফিরে আসবে, কিন্তু সমাজের কাছে তিথি একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় – দিনের পর দিন প্রবল অনিচ্ছাসত্তেও নিজের আত্মসম্মানবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে যে অপমান বয়ে নিতে হয় তা থেকে কি তার মুক্তি কখনো মিলবে? অপমানটা কি শুধুই তার একার নাকি পুরো সমাজটার?9007189_gal“তিথি” চরিত্রে অভিনয় করেছেন – “শাবনূর”, তাঁর চটপটে স্বভাবের জন্যে তিনি খুব পরিচিত আগের চলচ্চিত্রগুলোর মাধ্যমে। কিন্তু এ চলচ্চিত্রে একেবারে নতুন এবং পরিণতভাবে আবিষ্কার করবেন দর্শক। অন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ইলিয়াস কাঞ্চনডলি জহুরের অভিনয় তাঁদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত মাত্রারই করতে সক্ষম হয়েছেন।


Leave a reply