১০০০ কোটি টাকা ঋণ নয়, অনুদান হিসেবে চায় হল মালিকেরা
সিনেমা হল সংস্কার ও নির্মাণে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে (১৭ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই তহবিল গঠনসংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এই তহবিল থেকে বিদ্যমান সিনেমা হলগুলো সংস্কার ও আধুনিকায়ন এবং নতুন সিনেমা হল নির্মাণে সাড়ে ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পাবেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে হল মালিকরা বলছেন, রুগ্ণ চলচ্চিত্রশিল্পকে টেনে তুলতে ঋণ দিয়ে তেমন সফলতা আসবে না। ওই তহবিল অনুদান হিসেবে বিতরণ করা হলে চলচ্চিত্রপাড়ায় সুদিন ফিরতে পারে। এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানায় কালের কণ্ঠ।
নব্বইয়ের দশকে দেশে প্রায় দেড় সহস্র সিনেমা হল চালু ছিল। বিভিন্ন সংকটে বন্ধ হতে হতে বর্তমানে মাত্র ১৫০টি হল চালু আছে। তবে এসব হলেও তেমন দর্শক মিলছে না। মূলত উন্নত প্রদর্শনকেন্দ্র না থাকা এবং ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ না হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি এতই নাজুক যে বিনিয়োগের অর্থ ফেরত আসবে কি না—এমন অনিশ্চয়তায় করোনার গত এক বছরে নতুন সিনেমা নির্মাণের সাহস পাচ্ছেন না কেউ। তা ছাড়া ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত এ খাত শিল্প হিসেবে কোনো সুবিধাই পায়নি। ফলে এই শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বেশির ভাগ মানুষ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিনেমা হল নির্মাণ কিংবা সিনেমা নির্মাণ—দুই ক্ষেত্রেই সরকারের বিনা সুদে প্রণোদনা বা অনুদান দেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম সোসাইটির সাবেক সভাপতি আতিউর রহমান লিটন বলেন, ‘সারা দেশে আমার ২০টির বেশি সিনেমা হল ছিল। এখন চালু আছে আটটি। আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা বলে, চলচ্চিত্র ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। আমাদের মূল প্রতিযোগিতা ভারতের সিনেমার সঙ্গে। ভারতের মতো সিনেমা বানানোর এত বড় বাজেট আমাদের জোগাড় করা সম্ভব না। সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হল ও সিনেমা নির্মাণে বিনা সুদে প্রণোদনা দরকার। এক হাজার কোটি টাকার তহবিল নিয়ে সুদসহ পরিশোধ করা আর্থিক সংকটে থাকা হল মালিকদের বেশির ভাগের পক্ষে কষ্টকর হবে। আর শুধু হল হলেই তো হবে না।’
হল মালিকরা জানাচ্ছেন, ২০২০ সালের মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে দেশের সব সিনেমা হল বন্ধের সরকারি নির্দেশ দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন হল বন্ধ থাকলেও বিদ্যুৎ বিল, কর্মীদের বেতন-ভাতা সবই দিতে হয়েছে। অনেক মালিক ভাড়া করে হল চালান, তাদের প্রতি মাসে উচ্চমূল্যের ভাড়া গুনতে হয়েছে। করোনার মধ্যেই কিছুদিন পরে দেশের সব পর্যটনকেন্দ্র খুলে দিলেও প্রায় সাত মাস পর ১৬ অক্টোবর ৫০ শতাংশ দর্শক খালি রেখে হল চালুর নির্দেশ দেয় সরকার। সব মিলিয়ে হলগুলো ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়েছে।
চলচ্চিত্রশিল্পের রুগ্ণ দশা কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে এক হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে, তার নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশের সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের সুস্থ ধারার বিনোদন উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে বিদ্যমান সিনেমা হলগুলো সংস্কার এবং আধুনিক মানের নতুন সিনেমা হল নির্মাণ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সিনেমা হল মালিকদের স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করা হলে সিনেমা হল মালিকরা নতুন নতুন সিনেমা হল নির্মাণের পাশাপাশি বিদ্যমান হলগুলো সংস্কার ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করতে সক্ষম হবেন। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় সিনেমা হল মালিকদের অনুকূলে ঋণ বিতরণের জন্য এক হাজার কোটি টাকার পুনরর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়েছে।
এই স্কিমের আওতায় অংশগ্রহণকারী তফসিলি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেড় শতাংশ সুদে পুনরর্থায়ন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। তবে গ্রাহক পর্যায়ে মেট্রোপলিটন এলাকায় ৫ শতাংশ এবং মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে সাড়ে ৪ শতাংশ হারে সুদ ধার্য করতে পারবে তফসিলি ব্যাংক। পুনরর্থায়ন ঋণ এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ত্রৈমাসিক কিস্তিতে সর্বোচ্চ আট বছর মেয়াদে গ্রাহককে পরিশোধ করতে হবে।
এ তহবিল প্রসঙ্গে প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদুল আলম খসরু বলেন, ‘দীর্ঘদিন লোকসানে থাকায় এক হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে সুদ দিয়ে পরিশোধের সক্ষমতা বেশির ভাগেরই নেই।’ নিখাদ বাস্তবতার নিরিখে ওই অর্থ বিনা সুদে প্রণোদনা বা অনুদান হিসেবে দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।