ছায়াছবির গপ্পো – ব্লাক মানি (মৌসুমি হামিদের প্রথম ছবি)
অখণ্ড অবসর, শরীরের আলসেমি কাটিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম টুপ করে বলাকা বাসে এরপর অভিসার সিনেমা হল। আর কোন উপায় ছিল না রাস্তার জ্যামের জন্যে। হলের অবস্থা ভালো না আগেই জানতাম তবুও গেলাম।
অভিসার হলঃ ইত্তেফাক মোড় থেকে একটু সামনে রাজধানী মার্কেটের পথে। টিকেট মিডল – ৪৫ , রিয়েল ৫৫ , ডিসি ৭৫ । হলের ভিতরে পুরাতন লেপ তোষকের মত গন্ধ। সাউন্ড সিস্টেম ভালো না , গরম , পরিবেশ মোটামুটি । উপরে ইংরেজি সিনেমার আলাদা হল আছে। হল রেটিং – – ০৩/১০
স্পয়লার অ্যালার্ট
[su_spoiler title=”মূল কাহিনী” style=”fancy” icon=”folder-1″]
প্রথম দৃশেই নায়ক। এরপর বেশ কিছু সময় নেই। মিশা সউদাগর অনেক টাকার মালিক কিন্তু তার দরকার সম্মান। তাই এম.পি হতে চায়। এই বাসনা পূরণে সে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলে বড় ভাইকে যে তাকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে ছিল। এখন তার পথের কাঁটা বিরোধী নেতা ডিজে সোহেল। তার সাথে চুক্তি হয় ১০০ কোটি টাকা হলে সে নির্বাচন করবে না । এই ১০০ কোটি টাকা নিয়েই সিনেমার সব কাহিনী।
সাইমন আর কেয়া ছোট বেলার বন্ধু। কেয়া সাইমনকে ভালবাসলেও , সাইমন কেবল টাকার স্বপ্ন দেখে। টাকার জন্য বিদ্যুতের পোলে উঠে যায়। এই দিকে একটা থাপ্পর বরাদ্দ হয়ে যায় কেয়ার পক্ষ থেকে। সাইমন চায় মিনি জিন্স শার্ট পড়া মেয়ে তাকে ভালবাসবে তাই কেয়া একদিন ছোট কাপড় পরে সাইমনকে ইমপ্রেস করতে চায়। কেয়াকে এই অবস্থায় দেখে লোভে পরে যায় বিরোধী নেতা ডিজে সোহেলের ভাই । ২য় নায়িকা মৌসুমি হামিদের আগমন, সে মিশার বোন। সুইমিং পুলে সাঁতার কেটে কেটে। নিরাপত্তার জন্য বাড়ির বাইরে বারণ থাকলে দেয়াল টোপকে বেড়িয়ে পরে এবং বাদরের মত বাড়ির কাঁটাতারে ঝুলে থাকে , নায়ক সাইমন এসে তাকে নামিয়ে নিয়ে যায়। সাইমন তার মামার ভাড়ায় গাড়ি চালায়, মৌসুমি তাকে নিয়ে যায় এক পতিতালয়ে রিপোর্ট তৈরির জন্য। সেখানে গুন্ডা হামলা হলে সাইমন তাকে বাঁচায় , এদিকে সোনালি ( মৌসুমি ) শ্রাবণের ( সাইমন) প্রেমে পরে যায় ।
বিরোধী নেতা ডিজে সোহেল তার ভাইকে জোর করে বিয়ে দিতে চায় কেয়ার সাথে । কেয়া মনে করে শ্রাবণ সোনালীকে ভালবাসে তাই সে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। এদিকে মিশা ১০০ কোটি টাকা দিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে দেয়। শ্রাবণ কেয়াকে বিয়ে থেকে ভাগিয়ে নিয়ে পালায় এবং ওই টাকার গাড়ি ছিনতাই করে তাতে করে দুজনে পালায়। মিশার তো মাথায় হাত , শ্রাবণ কেয়াকে সোনালীর বাসায় রেখে যায় নিরাপদে থাকার জন্য। ফিরে সে দেখে গাড়িতে টাকা টাকা টাকা ! ! ! মামাকে খুন করে ১০০ কোটি টাকা নিয়ে যায় সোহেল। মিশা টাকার জন্য কেয়াকে জিম্মি করলেও সে পালিয়ে যায় কিন্তু ধরা খায় সোহেলের বাহিনীর কাছে ।শ্রাবণ টাকা নিয়ে আসে সোহেলের কাছে থেকে। মিশা তখন শ্রাবণের মাকে জিম্মি করে । মিশা ও সোহেল দু জনেই এখন শ্রাবণের কাছে ১০০ + ১০০ কোটি টাকা চায় । একজনের কাছে জিম্মি সোনালী কেয়া অন্য দিকে জিম্মি শ্রাবণের মা । ধিসুম ধিসুম মারামারি , , পুলিশ রুবেল আসে সব পণ্ড করে গ্রেফতার করে । কোন ভিলেনের মৃত্যু হল না, মাঝে দিয়ে মারা গেল শ্রাবণের মামা।
[/su_spoiler]
নিজস্ব মন্তব্যঃ
>> ছবিটি প্রায় ৩ ঘণ্টা । প্রথম অর্ধেক বেশ এক ঘেয়ে লেগেছে , পরের অর্ধেক হালকা টুইস্ট ছিল । ঘটনা বেশ বিনোদন ছিল।
>> কক্সবাজার বান্দরবান ও উত্তরার দিয়া বাড়িতে শুটিং হলেও এই জায়গা গুলোর আরও অনেক সুন্দর স্পট ছিল যা দেখানো যেত।
>> বেশির ভাগ লোকেশন মনে হয়েছে বালু না হয় বাড়ি
>> সাইমন ও কেয়ার অভিনয় বেশ ভালো ছিল , মৌসুমি হামিদ এভারেজ। তার মধ্যে চিত্রনায়িকা ভাব আসেনি।
>> মৌসুমি হামিদ বেশ লম্বা সম্ভবত ৫ ফুট ৯ ইঞ্ছি। সাইমনের সাথে সাইমনকেই বেটে মনে হচ্ছিল।
>> পোশাক ডিজাইনারের মূল লক্ষ্য মনে হয় ছিল নায়িকার কোমর দেখানো । প্রায় সব জামাই একই ধাঁচের লেগেছে ।
>> কিছু কিছু ক্ষেত্রে দৃশ্যের সাথে পোশাক বেমানান লেগেছে । যেমন একটা গানে সাগর পারে শ্রাবণ আর কেয়া । একজন কোট প্যান্ট পরা আরেকজন লাল গাউন । সাগরের ঢেউ পাশে এসে পড়ছে।
>> একটি দৃশ্যে আফজাল , শ্রাবণকে ভুলে সাইমন ডাকে ।
>> ৪ টি গান , ১টি বিপাশার আইটেম গান । কোনটাই হিট খাওয়ার মত হয় নাই ।
>> হালকা অ্যাকশন পাওয়া গেছে । খারাপ না , পরিমিত ডিজিটাল ইফেক্ট ছিল।
>> মিশার অভিনয় বরাবরের মত ভালো ছিল।
সর্বশেষ , মৌসুমি হামিদের জন্য সিনেমাটা দেখার অনেক আগ্রহ ছিল । ট্রেলার দেখে যতটুকু ভালো লেগেছিল , মৌসুমি হামিদ সিনেমায় তা পূরণ করতে পারে নি । তবে পরিচালক সাফি তাকে খুব একটা কাজ দেখানোর সুযোগ দেয় নি।
বাংলা সিনেমা এগিয়ে যাক , আধুনিক, রুচিশীল , বিশ্বমানের সিনামার অপেক্ষায় থাকলাম। বাংলাদেশে এখন অনেক ভালো সিনেমা হচ্ছে , সবাই হলে গিয়ে সিনেমা দেখবেন। ভালো কিছুর জন্য অনুপ্রেরণা প্রয়োজন। ধন্যবাদ 🙂 🙂 🙂