অনন্য মামুনের পাশে কেউ নেই
পুলিশের করা পর্ণোগ্রাফিক মামলায় কারাগারে রয়েছেন পরিচালক অনন্য মামুন ও অভিনেতা শাহীন মৃধা। এ সময় স্বাধীনধারার কয়েক জন নির্মাতা, মানবাধিকারকর্মী ও রাজনীতি সচেতন মানুষ প্রতিবাদ করলেও পরিচালকের পাশে নেই এফডিসিকেন্দ্রিক সহকর্মীরা।
বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর জানায়, উল্টো পরিচালক অনন্য মামুন ও অভিনেতা শাহীন মৃধাকেই দুষছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি।
পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় বৃহস্পতিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে প্রতিবাদ জানালেও পরিচালকদের স্বার্থ সংরক্ষণে গঠিত সংগঠনটি বলছে, তারা অনন্য মামুনের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করছেন না।
পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, “অনন্য মামুনের কর্মকাণ্ডে পরিচালক হিসেবে আমরা খুবই লজ্জিত; আমরা এটাকে সমর্থন করি না।
“ছবির বিষয়বস্তু রাজনৈতিক হতে পারে, ছবিতে কারও সমালোচনাও থাকতে পারে; কিন্তু ছবিতে তিনি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা শুধু নিন্দনীয়ই নয় একেবারেই পরিত্যাজ্য।”
‘নবাব এলএলবি’ চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত ভাষার জন্য পরিচালকদের ‘মুখ দেখানোর জায়গা থাকবে না’ বলে আশঙ্কা করছেন ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সর্বোচ্চ ৭৫ লক্ষ টাকা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত পরিচালক গুলজার।
“আমরা বরং চাইব এটা যাতে না ঘটে। এমনিতেই মিডিয়া নিয়ে সাধারণ মানুষ ভালো ধারণা করেন না, এই ধরনের ভাষা যখন চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয় তখন মুখ দেখানোর জায়গা থাকবে না। আমরা এর পক্ষে না।
এ দিকে মামুনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ‘বিতর্কিত দৃশ্যের’ অভিনেত্রী অর্চিতা স্পর্শিয়া। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘যখন ওই দৃশ্য ধারণ করা হয়, তখনই আমি পরিচালককে বলেছিলাম ওভাবে না করতে, পুলিশি ঝামেলা হতে পারে। তা–ই হলো। কারণ, সিকোয়েন্সটির উপস্থাপনা ভালো হয়নি। একটি সুন্দর কথাও খারাপভাবে উপস্থাপন করা যায়, আবার খারাপ কথাও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যায়। ওই দৃশ্যে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তার উপস্থাপনা সুন্দর হয়নি।’
সহশিল্পী শাহিন মৃধাকে গ্রেপ্তারের কারণে কষ্ট পেয়েছেন স্পর্শিয়া। তিনি বলেন, ‘ওই সিকোয়েন্সের কারিগর চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক। অভিনেতারা এ জন্য দায়ী হতে পারেন না। শাহিন মৃধাকে আমি আগে চিনতাম না। ছবিতে ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। তার পারিশ্রমিকও কম। তিনি এ রকম বিপদে পড়ায় আমার খুব খারাপ লাগছে।’
পরিচালক সমিতি অনন্য মামুনের পাশে না থাকলেও তার গ্রেপ্তারকে ‘শৈল্পিক স্বাধীনতার পরিপন্থি’ হিসেবে দেখছেন চলচ্চিত্র সংগঠকদের কেউ কেউ।
চলচ্চিত্র সংগঠক বেলায়েত হোসেন মামুন ফেইসবুকে লিখেছেন, “চলচ্চিত্রের স্বাধীনতা আমাদের দেশে নেই; কথাটি বলছি বেশ অনেকদিন হলো কিন্তু চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট মানুষজন বিষয়টি আমলে নেন না। আমলে নিন, কারণ লোকজন জেলে যেতে শুরু করেছে।
…যে আইনের ক্ষমতাবলে এটা ঘটানো গেলো তা একটি খারাপ আইন। এই আইন শিল্পীর শৈল্পিক স্বাধীনতার পরিপন্থি। যদি লড়তে হয় তবে এ টাইপের যতগুলো আইন আছে সে গুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করুন।”
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সেলিব্রেটি প্রোডাকশনের ব্যানারে নির্মিত ছবিটি ওটিটি প্লাটফর্ম আই থিয়েটারে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তি পায়।
মুক্তির এক সপ্তাহের মাথায় পরিচালক ও পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করা শাহীন মৃধার বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করেন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মো. নসিরুল আমিন।
সেখানে বলা হয়, ‘নবাব এলএলবি’ নামের ওই চলচ্চিত্রে ধর্ষণের শিকার এক নারী বিচারের আশায় থানায় গেলে কর্তব্যরত কর্মকর্তা (অভিনেতা শাহীন মৃধা) তাকে (ভিকটিম) অরুচিকর, বিকৃত প্রশ্ন করেন, যাতে পুলিশকে অত্যন্ত খাটো করে দেখানো হয়েছে। এতে পুলিশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।’
চলচ্চিত্র সংগঠক মামুন বলছেন, “চলচ্চিত্রের গল্পে কোনো পেশাজীবীর খারাপ আচরণের অর্থ এই নয় যে, ওই পেশাজীবীদের পুরো সমাজই খারাপ। গল্প বলার ক্ষেত্রে এই টাইপের ‘লাল ফিতা’ বেঁধে দিতে থাকলে বাংলাদেশে সত্যিকারের চলচ্চিত্র আর কখনও হবে না।”
এ দিকে নির্মাতা ও প্রযোজক জসীম আহমেদ ফেসবুকে লেখেন, “ভাই ও বোনেরা, সিনেমা বানানোর জন্য বাক স্বাধীনতা ভীষন জরুরী। ছবি বানানোর আগে ভাবেন এই দেশে এইটা আছে কি না? সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা অবারিত করলেও বাঁক এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে শর্ত সাপেক্ষ রাখছে। আর এই শর্ত সাপেক্ষের সুযোগ নিয়া সরকারগুলা একটার পর একলা কালো আইন করতে করতে মানুষের মৌলিক অধিকারকে এতটাই সীমিত করছে যে চামচামি ছাড়া যাই করবেন ফ্রি আবাস্থল পাইবেন কাশিমপুর বা কেরানীগঞ্জে।”
“যে দেশে আইসিটি আইন থাকে, স্বাধীন দেশের সিনেমায় সেন্সরের নামে পাকিস্তানি কাচি চালানো হয় সেই দেশে কেমনে সিনেমা বানাইবেন? সিনেমা বানানোর আগে আইসিটি আর পাকিস্তান আমলের সেন্সর আইন বাতিল চাওয়া সময়ের দাবি। নাইলে বাকি জীবন লতা- পাতা ফুল- পাকিরে চরিত্র বানাইয়া গল্প ভাবেন। সময়টা খারাপ, সিনেমায় একে ধরার দু:সাহস দেখাইয়েননা!”