Select Page

আলোচিত ও বিতর্কিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’

আলোচিত ও বিতর্কিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’

স্বাধীনতার পরে মুক্তিযুদ্ধ নির্ভর ছবির তালিকায় এক আলোচিত (এবং বিতর্কিত) সংযোজন ‘আবার তোরা মানুষ হ’। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৩ সালের সাত ডিসেম্বর। ছবির পরিচালক ছিলেন খান আতাউর রহমান। কাহিনি ও সংলাপ এবং চিত্রনাট্যের অংশ বিশেষ লিখেছিলেন আমজাদ হোসেন।

ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ফারুক,ববিতা, সুলতানা, রাইসুল ইসলাম আসাদ, আল মনসুর,বাবু, সরকার ফিরোজ এবং খান আতাউর রহমান নিজে। এ দেশের কোটি মানুষ এই ছবিটি দেখেছে। মুক্তিযুদ্ধ ফেরত সাত মুক্তিযোদ্ধার গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছিল এই ছবি। স্বাধীনতার পর সামাজিক অবক্ষয় ও অনাচার, ঘুষ দুর্নীতি বা কালোবাজারি মেনে নিতে না পারা সাত মুক্তিযোদ্ধার প্রাণান্তকর চেষ্টা, যুদ্ধ শেষে জমা না দেয়া অস্ত্র দিয়ে এসব সামাজিক অনাচার বা অবক্ষয় রোধ করার ব্যক্তি প্রচেষ্টার এক ছবি ‘আবার তোরা মানুষ হ’। খান আতাউর রহমান এই ছবিতে ‘বঙ্গবানী’ কলেজের অধ্যক্ষের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন আর সাত মুক্তিযোদ্ধা তার কলেজেরই ছাত্র ছিল।

যুদ্ধ ফেরত মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র হাতে অনেক কিছু কেড়ে নেয়া,পরীক্ষায় নকল করাসহ অস্থিরতা ও খারাপ কাজে জড়িয়ে যাবার ঘটনা দেখানো হয়েছে এই ছবিতে। যুদ্ধ ফেরত সব মুক্তিযোদ্ধা এমন ছিলেন না। ১৬ ডিসেম্বরের পরে যারা মুক্তিযোদ্ধা সেজেছিলেন, যাদের বলা হয় ‘১৬ ডিভিশনের যোদ্ধা’, মুক্তিযোদ্ধাদের ইমেজ ধুলোর সাথে মিশিয়ে দেয়াই ছিল যাদের কাজ, তাদের কর্মকাণ্ডের কোন ইঙ্গিত ছিল না ছবিতে। জোড়ালো কোন আহ্বান ছিল না মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের কর্মকান্ডের বিচার নিয়ে। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের পুনরায় মানুষ হবার আহ্বান জানানোটা নিয়ে তখনও বিতর্ক হয়েছিল।

ছবির দুটি গান আজও কালজয়ী হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রথমটি ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা, তোমাদের এ ঋণ কোনদিন শোধ হবে না’, গানটি গেয়েছিলেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। অন্যটি হচ্ছে ‘তুমি চেয়েছিলে ওগো জানতে’ যেটিতে কন্ঠ দিয়েছিলেন আবিদা সুলতানা। দুটি গানের গীতিকার ও সুরকার খান আতাউর রহমান।

ছবিটি নিয়ে পরবর্তীকালে তীব্র বিতর্ক হয়। একাত্তর সালে খান আতাউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মুক্তিযোদ্ধা, নাট্যজন ও পরিচালক নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু খান আতাউর রহমানকে ‘রাজাকার’ বলায় এ বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। শ্রদ্ধেয় নাট্যজন,অভিনেতা ও পরিচালক হাসান ইমাম সাহেব খান আতাউর রহমানের একাত্তর সালের ভূমিকা নিয়ে কিছু স্মৃতি তুলে ধরেন। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চের পর ‘সবুজ সাদায় আঁকা আমার পাকিস্তানের পতাকা’ গানটি লিখে সুর করেছিলেন খান আতা, গেয়েছিল শিশুরা। টেলিভিশন ও রেডিওতে পাকিস্তানীদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল খান আতা ছিলেন তাদের একজন। বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পরেও তার লেখা নতুন গান প্রচারিত হযেছিল রেডিওতে।

অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা নায়ক ফারুক, সোহেল রানা, আমজাদ হোসেন এবং খান আতার ছেলে সঙ্গীত শিল্পী আগুন এই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন খান আতার পক্ষ নিয়ে। খান আতার নিজেরও বয়ান আছে এ ব্যাপারে।

বিতর্ক এই ছবির পিছু ছাড়বে না কখনো। বাংলা চলচ্চিত্রে খান আতাউর রহমানের অবদানও অপরিসীম। বিতর্ক যতই উঠুক, খান আতাউর রহমানের সেই অবিস্মরণীয় গান, ‘এ খাঁচা ভাঙ্গবো আমি কেমন করে’র মতো ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা, তোমাদের এ ঋণ কোনদিন শোধ হবে না’র মতো এমন অনেক গান মানুষের হৃদয়ে অনবরত বাজবে।

বিতর্কেই হয়তো বিকাশ…তবু জয় হোক বাংলা চলচ্চিত্রের।

পিরামিড প্রত্যাশা

পান্থপথ

২৬ ডিসেম্বর ২০২১


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

আহসান কবির

অভিনেতা ও লেখক

মন্তব্য করুন