Select Page

এক বদমেজাজি নায়কের গল্প!

এক বদমেজাজি নায়কের গল্প!

নাম : নায়ক
ধরন : রোমান্টিক ড্রামা
পরিচালক : ইস্পাহানি – আরিফ জাহান
প্রযোজনা : যাদুকাঠি মিডিয়া লি.
কাস্ট : বাপ্পী চৌধুরী (অভি), অধরা খান (অন্তু), মৌসুমৗ (অদিতি), আমান রেজা (শিহাব), নুসরাত জাহান পাপিয়া (মিতু), শিমুল খান (দুখু ভাই), অমিত হাসান (ইরফান), সুব্রত (অভি’র বাবা), রেবেকা রউফ (অভির মা) প্রমুখ।
শুভমুক্তি : ১৯ অক্টোবর, ২০১৮
দেশ : বাংলাদেশ
ভাষা : বাংলা

নামকরণ : ২ ঘণ্টা ১৮ মিনিটের পুরো ছবিটিই নায়ককে ঘিরে, তাই সম্ভবত নাম ‘নায়ক’ রাখা হয়েছে। এছাড়া আমি তেমন কোনো মিল কিংবা লজিক খুঁজে পাইনি। তাই নামকরণ সুন্দর, কিন্তু যথার্থ মনে হয়নি।

কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ : অভি একজন শর্ট টেম্পারড গাই; অন্য লেভেলের জেদী। তার কাছে অন্যের ভালোলাগা-মন্দলাগার কোনো মূল্য নেই। নিজে যেটা ভালো মনে করে সেটাই ঠিক। সে চায় পুরো দুনিয়াটি তার পছন্দানুসারে চলুক; কারণ ছোটবেলায় তার কোনো ইচ্ছেই পূরণ হয়নি পিতামাতার অতিশাসনের কারণে।

মেধাবী অভি ইন্টার লেভেলে বোর্ডে প্রথম হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে। কিন্তু পরবর্তীতে অভি তার অতিরিক্ত বদমেজাজ, নিজের জিদের প্রতি বারবার অটল থাকা, গুরুজনদের সাথে একের পর এক অসভ্য আচরণ এবং সর্বোপরি নিজের ভালোবাসাকে অপমান করার ফলে পদে পদে তার ভালোবাসায় বাধা আসতে থাকে। অভি কীভাবে এসবের মোকাবেলা করে, আর শেষমেষ তার ভালোবাসাটিকে থাকে কিনা, এটি জানার জন্য আপনাকে ছবিটি দেখতে হবে।

ছবিটির চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন দেলোয়ার হোসেন দিল। যে থিম নিয়ে গল্পটি এগোচ্ছিল তাতে এর চেয়ে আরো বেটার কিছু দেখানো যেতো। কিন্তু গল্পের উপস্থাপনা মোটেও ভালো হয়নি, চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালক সবকিছু সাজাতে গিয়ে পুরোনো মেলোড্রামার আশ্রয় নিয়েছেন। যার কারণে কাহিনী একদম গতানুগতিক হিসেবে ধরা দিয়েছে।

অভির চরিত্রটি খুব ভালভাবেই লেখা হয়েছে। তার স্বভাব, আচরণ, চারপাশের মানুষজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব… সবকিছু বেশ ভালভাবে দেখানো হয়েছে।

সংলাপ মোটামুটি ছিল। মনে রাখার মতো সংলাপ একটিই পেয়েছি, ‘আমার জীবনটা উপন্যাসের, নায়ক ছিলাম আমি; আর তোমাকে বানাতে চেয়েছিলাম নায়িকা।’

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৫৫।

অভিনয় : গল্পানুসারে পুরো ছবিটিই এগিয়েছে বাপ্পী চৌধুরীর কাধে ভর করে। অল্পতেই রেগে যাওয়া হিসেবে বাপ্পীর লুক, স্টাইল, এক্সপ্রেশন সব পারফেক্ট ছিল। মুখভর্তি দাড়ি; মেজাজ হারিয়ে ফেলার সময় দুই আঙ্গুল দিয়ে কপাল চেপে ধরার স্টাইল ভালো লেগেছে। তবে আর অভিনয়ের ঘাটতি বেশ চোখে লেগেছে। এটিই ছবির বড় মাইনাস পয়েন্ট, কারণ অন্যান্য চরিত্রগুলো ছবিতে তেমন একটা ডানা মেলতে পারেনি। পাশাপাশি তার ফিটনেসের দিকে নজর রাখা উচিত ছিল; তাকে অনেক বেশি মেদবহুল মনে হয়েছে।

নতুন হিসেবে অধরা খান মোটামুটি ছিলেন। তার অভিনয়ে ন্যাকামির পরিমাণ কম; অবশ্যই এটা একটা ভালো দিক! তার সৌন্দর্য ও গ্ল্যামারে ধনী ঘরের মেয়ের চরিত্রে মানাতে তেমন অসুবিধা হয়নি। তবে তারও অভিনয় ও এক্সপ্রেশনের যথেষ্ট ঘাটতি আছে। এগুলোর উন্নতি হলে এবং সামনে ভালো কাজ করতে পারলে তিনি অনেকদূর যেতে পারবেন।

মৌসুমী এবং সুব্রত বাদে চরিত্রনুসারে বাকি যারা ছিলেন.. অর্থাৎ আমান রেজা, পুস্পিতা, রেবেকা রউফ, শিমুল খান প্রমুখ; তারা কেউই অতিমানবীয় কিছু দেখাতে পারেননি। অবশ্যই এক্ষেত্রে আমি দূর্বল চিত্রনাট্যকে দায়ী করবো, তাদের চরিত্রগুলো ঠিকঠাক লেখা হয়নি। অমিত হাসান ছিলেন অতিথি চরিত্রে, সেটিও তেমন চমক দেখাতে পারেনি।

অন্যান্যদের তুলনায় অন্তুর বোনের চরিত্রে মৌসুমী এবং অভির বাবার চরিত্রে সুব্রত অভিনয় দেখানোর সুযোগ বেশি পেয়েছিলেন। মৌসুমী একদম ঠিকঠাক ছিলেন, যেমন আশা করেছিলাম ঠিক তেমনটাই পেয়েছি। কিন্তু সুব্রতর ক্যারেক্টার যেমন শক্তিশালী পারফরমেন্স দাবি করে, ঠিক তেমন টা পাইনি। কেন জানি তার পর্দায় উপস্থিতি বেশ দূর্বল ছিল।

শিশুশিল্পীদের মধ্যে আলাল ও দুলাল চরিত্রে থাকা দুজনের অভিনয় ভালো লেগেছে; কিন্তু অভি র ছোটবেলার চরিত্রে থাকা ছেলেটির অভিনয় বড্ড বিরক্তিকর ছিল। আরেকটু গ্রুমিং করিয়ে নেওয়া উচিত ছিল।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৫০।

কারিগরি : প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যাদুকাঠি মিডিয়ার প্রথম ছবি এটি। তারা পয়সা খরচে কোনোরকম কিপটেমি করেনি; যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ছিল ততটুকুই পেয়েছি। সুন্দর সেট, সুন্দর লোকেশন, সবই ভালো ছিল। তবে টেকনিশিয়ানদের দক্ষতা নিয়ে আমার যথেষ্ট আপত্তি আছে। সিনেমাটোগ্রাফিতে মন ভরেনি। দু-একটা ড্রোন শর্ট ছাড়া তেমন চোখ জুড়ানো শর্ট পাইনি। এডিটিং এবং কালার গ্রেডিং মোটামুটি ভালো মানের হয়েছে।

ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে চরমভাবে হতাশ হয়েছি। রোম্যান্টিক মুভিতে যদি আবহ সংগীত ভালো না হয় তাহলে আর দেখার মতো সেরকম অনুভূতি মন থেকে আসে না। এক্ষেত্রেও তাই। মেকআপ আর্টিস্টদের কাজও হতাশ করেছে। প্রাইমারি লেভেলে পড়া অভি বড় হয়ে ভার্সিটিতে যাওয়া-আসা শুরু করলো, কিন্তু তার পিতা-মাতা ঠিক আগের মতোই সজীব-সতেজ রয়ে গেলেন। তাদের চেহারায় বিন্দুমাত্র বয়সের ছাপ দেখা গেলো না; যদি দু-একটা পাকা চুল দেখতাম, তাও মনকে মানিয়ে নিতাম। মনে হয়েছে সুব্রত এবং রেবেকা রউফের বয়স বাপ্পীর ছোটকালের পর আর বাড়েনি, ওখানেই থেমে আছে।

সবার ড্রেসআপ মোটামুটি ভালোই ছিল। গানের কোরিওগ্রাফি দূর্দান্ত হয়েছে। বাবা যাদব যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে বারবার দেখিয়ে দিচ্ছেন এ জায়গায় আমরা বড্ড দূর্বল! তবে হাবিবও খুব একটা খারাপ করেননি।

ওহ, পোস্টার এডিটিং এর কথা আলাদাভাবে বলা উচিত। হলফ করে বলতে পারি, আশেপাশে যারা ছবিটি দেখতে এসেছিলেন তাদের প্রায় ২৫% এসেছেন পোস্টার ভালোলেগেছে তাই। ইস্পাহানি-আরিফ জাহানের মতো এফডিসির বাকি ডিরেক্টররা যদি পোস্টারের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারতেন তাহলে আর আমাদের ভবিষ্যতে এক পোস্টারে ২৪ মাথা দেখতে হতো না।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৬০।

বিনোদন : গান রয়েছে ৪টি। কণ্ঠ দিয়েছেন ইমরান, মিনার, চন্দন সিনহা, সিথি সাহা, কনা’সহ এসময়ের জনপ্রিয় সব শিল্পীরা। সবগুলো গানই আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে, সিচুয়েশন অনুযায়ী মিনারের গাওয়া ‘খণ্ড বিখণ্ড প্রেম’ একদম মিলে গেছে। ছবিতে এই গানটিই সেরা ছিল।

কমেডি সিন প্রায় নেই বললেই চলে; দুখু ভাইয়ের দোকানে হাতেগোনা কিছু কমেডি সিন রয়েছে। জুটি হিসেবে বাপ্পী-অধরা মানানসই হলেও ছবিতে তাদের রোমান্সের ওপর ফোকাস কম ছিল, সে তুলনায় বাপ্পীর স্বভাব তুলে ধরার চেষ্টা ছিল বেশি।

বেশ কিছু ইমোশনাল সিন রয়েছে, তবে সেগুলোও কেমন যেন একটা খাপছাড়া ভাব ছিল। এখানেই ছবিটি চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে; মেকিং ও অভিনয় দর্শকদের সাথে ইমোশনালি এটাচ হতে পারেনি।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৫০।

ব্যক্তিগত : ছবিটির পোস্টার যতটা আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল ট্রেলার দেখার পর সেই উচ্ছ্বাস অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছিল। তারপর আবার বছরের সবচেয়ে প্রতিক্ষিত ছবির সাথে মুক্তি; তাই একদম শূন্য এক্সপ্রেক্টেশন নিয়েই দেখতে গিয়েছিলাম। ছবি দেখার পর আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। গল্পের থিম ভালো হলেও উপস্থাপনার ধরণ ভালো ছিল না; এছাড়া অভিনয়ের দিক থেকেও প্রধান চরিত্রগুলোর যথেষ্ট ঘাটতি ছিল।

রেটিং : ৫.৫/১০

ছবিটি কেন দেখবেন : যাদের মেলোড্রামা ভাল লাগে তারা ছবিটি উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া বাপ্পীর ফ্যানদের জন্য এটি মাস্টওয়াচ! তাদের প্রিয় নায়ক একদম নতুন লুকে এছবিতে ধরা দিয়েছে।


মন্তব্য করুন