ওয়ান ম্যান শো ‘দরদ’
শাকিব খান ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষ নায়ক হিসেবে এখন ক্যারিয়ারের যে পর্যায়ে আছে সেখানে তার নিত্যনতুন এক্সপেরিমেন্ট করে যাওয়া জরুরি। শাকিব সম্ভবত নিজেও বর্তমানে এ দিকটি নিয়ে সচেতন যেটি তার সাম্প্রতিক স্ক্রিপ্ট চয়েজ দেখলে বোঝা যায়। অনন্য মামুনের পরিচালনায় ‘দরদ‘ ছবি তার নতুন এক্সপেরিমেন্টেরই পরিচয়।
মান্না তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা অভিনয় করেছিল ‘আম্মাজান’ ছবিতে। এ ছবিতে তাঁর সাইকোপ্যাথ চরিত্রের অভিনয় ছিল অনন্যসাধারণ। তাঁর ক্যারিয়ারের সাথে এ ছবি তাঁর পরিচিতির জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। শাকিব খানের জন্য অতীতে ‘খুনি শিকদার’ ও ‘টাইগার নাম্বার ওয়ান’ ছবিগুলোর যে সাইকো বৈশিষ্ট্য ছিল তার সাথে কিছুটা ভিন্ন এক্সপেরিমেন্টে ‘দরদ’ তার ক্যারিয়ারে জায়গা করে নিলো। মান্নার সাথে কোনো তুলনার প্রশ্ন এখানে নেই, মার্ক করার মতো বিষয় এতটুকুই যে শাকিব তার মতো ‘দরদ’ ছবিকে সাইকো চরিত্রে ওয়ান ম্যান শো-তে পরিণত করেছে। ছবিতে চরিত্র কম না কিন্তু পুরো ছবির ঘটনার যে সারমর্ম তাতে শাকিব খানই প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়ে ওয়ান ম্যান শো হয়েছে।
অনন্য মামুন ‘দরদ’ ছবির পরিচালক হিসেবে শাকিবকে দিয়ে দুর্দান্ত অভিনয় আদায় করার পাশাপাশি ছবির টপিকের মধ্যে নতুন কিছু দেয়ার চেষ্টা করেছেন যেটি নোটিশ করার মতো।
‘CWS’ বা ‘Celebrity Worship Syndrome’ নামে একটি মানসিক সমস্যাকে গল্পে তুলে ধরেছেন যেটি অবসেশন জাতীয় সমস্যা। গল্পে এটি কিভাবে এসেছে সেটি দর্শক ছবি দেখে জেনে নিক তবে এর ব্যাখ্যাটি এরকম -‘it’s a condition where a person becomes overly obsessed with a celebrity, often to the point of addiction.’
টপিক হিসেবে কমার্শিয়াল ছবিতে এটি শাকিব খানের ক্যারিয়ারে নতুন।
মন খারাপ দেয়ার গল্প এ ছবিতে ছিল যার রহস্য উন্মোচন ছবির শেষটায় এসে উপস্থিত তবে সমঝদার দর্শকের জন্য সম্ভবত প্রথমদিকেই আঁচ করা সম্ভব হবে। শাকিব খান ও সোনাল চৌহানের প্রেম ও সংসারের মোড় ভিন্নদিকে প্রবাহিত হয়ে ছবির গল্প শেষ পর্যন্ত মন খারাপের দিকে গড়ায়।
শাকিব খান ছবির ওভারঅল আকর্ষণ। একই দৃশ্যে কান্না ও সাইকো হাসি দেয়ার সুইচ অন অফ ক্যারেক্টারাইজেশন দেখার মতো ছিল। শুধু শাকিবের কথা বললে এটি তার ক্যারিয়ারের অভিনয়সমৃদ্ধ অন্যতম ছবি। একদম শেষ দৃশ্যে তার অভিনয় দেখলে বর্তমান ইন্ডাস্ট্রির অন্যান্য নায়কদের অভিনয় শিশুর মতো মনে হবে। এটি অন্যান্যদের ছোট করে বলা নয় বরং শাকিবের বর্তমান অভিনয়ের অবস্থানকে তু্লে ধরার জন্য। ‘রাজকুমার’ ছবির ক্লাইমেক্সে শাকিবের অভিনয়শক্তির যে পরিচয় পাওয়া যায় ঠিক তেমনই ‘দরদ’-এর ক্লাইমেক্সেও ছিল। সোনাল চৌহান যেহেতু হিন্দি ছবির নায়িকা তার বাংলা বলাটা ছবিতে থাকবে না সেটা তো স্বাভাবিক তবে ডাবিং করে হলেও তার অভিনয় চমৎকার এবং শাকিব খানের সাথে তার রসায়ন দেখে মনে হবে সে শাকিবের অনেকগুলো ছবির নায়িকা। রাহুল দেব, রাজেশ শর্মা, পায়েল সরকার তাদের চরিত্র ও অভিনয় ছবির গল্পকে এগিয়ে নিয়েছে।
ছবির গান ততটা ওয়ার্ড অফ মাউথ হতে না পারলেও ‘ওরে পাগল মন’ বেশ রিদমিক ও এনার্জেটিক ছিল। এছাড়া ইমরানের কণ্ঠে স্যাড সংটি বেশ ভালো ছিল। ক্লাইমেক্সের বিজিএম ছিল নোটিশ করার মতো।
প্রশ্ন হলো অনন্য মামুনের অন্যান্য ছবির মতো এ ছবিতে সীমাবদ্ধতা যেখানে সেটা হলো ছবির ওভারঅল মেকিং নিয়ে। ছবি তো শুধু ফার্স্ট হাফ বা শুধু সেকেন্ড হাফ নিয়ে নয় পুরোটা মিলিয়েই একটা ছবি। ঠিক সেখানেই অনন্য মামুন ফার্স্ট হাফে স্লো স্টোরি টেলিং-এর পরিচয় দিয়েছেন। কমেডি ছিল দুর্বল। সেকেন্ড হাফেই ছবির মূল গতি এসেছে। এই সীমাবদ্ধতাকে শাকিব খানই সামাল দিয়েছে তারপরেও সীমাবদ্ধতা তো সীমাবদ্ধতাই।
ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থায় শাকিব খানের ছবিই প্রধান ভরসা গতি আনার জন্য সেদিক থেকে ছবিটি সফল হওয়া জরুরি। শাকিব খানের ক্যারিয়ারে অভিনয়সমৃদ্ধ অন্যতম ছবি হিসেবেও এর সাফল্য আসা দরকার। বাকিটা সময়ের উপর নির্ভরশীল।
রেটিং – ৭.৫