
টগর: আদর-পূজাকে ডুবাতে এমন সিনেমাই যথেষ্ট
‘টগর’ সিঙ্গেল স্ক্রিনের অডিয়েন্সকে টার্গেট করে নির্মিত। কিন্তু এইরকম লক্ষ্য-উদ্দেশ্যহীন চলচ্চিত্র তো সিঙ্গেল স্ক্রিনের খেটে-খাওয়া মানুষেরাও পছন্দ করবে বলে মনে হয় না …
[স্পয়লার নেই]
এতিম হিসেবে বেড়ে ওঠা টগর (আদর আজাদ) ও জয়িতা (পূজা চেরি) খুব ভালো বন্ধু। যেহেতু শ্রদ্ধেয় হুমায়ূন আহমেদ (নাকি তার লেখা চরিত্র) বলে গিয়েছেন ‘ছেলে-মেয়ে কখনোই ভালো বন্ধু হতে পারে না’; সেই রীতিকে সম্মান জানিয়ে এখানে টগর-জয়িতা একে অন্যের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে প্রেমের সাগরে ডুবে যায়। প্রেমের সেই ভ্রম কাটাতে টগরের মুখোমুখি হতে হয় ইপিজেডের লোকাল মাফিয়া চক্রের। রয়েছেন একজন নারীবাদী উদ্যোক্তা, মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দুই ধরনের কাজকর্মই তিনি করেন। টগর কীভাবে সবকিছু সামলে তার জীবনকে সুন্দর করতে পারে, জানতে হলে দেখতে হবে ‘টগর’।

সত্যি কথা বলতে আমি গল্প নিয়ে যতটুকু বললাম, এতোটুকুও ঠিকঠাক গুছিয়ে নির্মাতা অলোক হাসান দেখাতে পারেননি। বিশেষ করে সিনেমার প্রথমার্ধ পর্যন্ত আমরা চলচ্চিত্রের মূল চরিত্র ‘টগর’ সম্পর্কে সে রকম কিছুই জানতে পারি না। সে আসলে কী করে এবং আমাদের কেন টগরের জীবনের গল্প দেখা-জানা প্রয়োজন সেটাও আমরা বুঝতে পারি না। এককথায় ‘টগর’ বিনাগল্পে এগোনো একটা সিনেমা, যেখানে রয়েছে ভরপুর স্লো মোশন, ভরপুর ডায়লগবাজি, কথায় কথায় নাচা-গানা আর একের পর এক ফ্ল্যাশব্যাক।
জ্বী, এটা আমি বুঝি যে ‘টগর’ সিঙ্গেল স্ক্রিনের অডিয়েন্সকে টার্গেট করে নির্মিত। কিন্তু এইরকম লক্ষ্য-উদ্দেশ্যহীন চলচ্চিত্র তো সিঙ্গেল স্ক্রিনের খেটে-খাওয়া মানুষেরাও পছন্দ করবে বলে মনে হয় না। গল্পের মূল টাইমলাইন মনে হয়েছে ফ্ল্যাশব্যাক সিকোয়েন্স, বর্তমানে ঘটছে সেরকম কিছুই নেই। আমরা প্রথমে আফটার ইফেক্টস দেখতে পাচ্ছি, পরে গিয়ে এর অতীত কারণ দেখতে পাচ্ছি। এই ফ্ল্যাশব্যাকের খেলা পুরো চলচ্চিত্রজুড়ে ব্যাপকভাবে রয়েছে।
ধরলাম এ চলচ্চিত্র বানানো হয়েছে নিম্নবিত্ত মজুরদের বিনোদন দেয়ার জন্য। কিন্তু আদতে তাদেরকেও কি এ সিনেমা সন্তুষ্ট করতে পারছে? না, ব্যর্থ হচ্ছে। না আছে কোনো সলিড অ্যাকশন সিকোয়েন্স, না আছে সলিড বিটের কোনো জমজমাট গান। গানগুলোতে হিরো আদর আজাদ ও পূজা চেরির উপস্থিতি এতোটাই একঘেয়ে যে, কণ্ঠশিল্পী ইমরান-আতিয়া আনিশার ক্যামিও বরং তাদের থেকে বেশি আকর্ষণীয় লাগছে। এ কথা বলতে আমার পার্সোনালি বেশ খারাপ লাগছে কারণ আদর ও পূজা দুজনই বেশ সম্ভাবনাময় নায়ক-নায়িকা। কিন্তু এরকম সিনেমা তারা আর ১-২ টা করলে তাদের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে। মানুষ পোস্টারে তাদের চেহারা দেখে সিনেমা অ্যাভয়েড করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সাপোর্টিং কাস্টে সুমন আনোয়ার, রোজী সিদ্দিকী, আজাদ আবুল কালাম, শরিফুলের মতো তুখোড় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নেয়া হয়েছে; যা অবশ্যই ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এদের সচরাচর এরকম মশলাদার বাণিজ্যিক সিনেমায় দেখা যায়না। কিন্তু এখানে মনে হলো তাদের নিয়ে যা-তা করিয়ে নেয়া হয়েছে। তাদের পোটেনশিয়াল তো আছে অনেক কিছু দেয়ার, কিন্তু সেই পোটেনশিয়ালিটি নষ্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে সুমন আনোয়ারের চরিত্র নিয়ে একটা বড়সড় টুইস্ট দেয়া হয়েছে, কিন্তু প্রোপার ব্যাখ্যার অভাবে সেটাও তেমন একটা প্রভাব রাখতে পারে না। সুমন আনোয়ার ভালো অভিনেতা কিন্তু লাউড অ্যাকটিং খুব বাজে করেন, এ সিনেমা দিয়ে সেটা ধরা পড়ে গেলো।
আমাদের তরুণ নির্মাতা ও অভিনেতাদের উচিত আরো বেশি ক্রিয়েটিভ কিছু দেখানো। এমন কিছু দেখানো যা দেখে যেনো মনে হয় এটা আমাদের দেশীয় সিনেমা। শুধু গান লিখলেন ‘১০০ পারসেন্ট দেশী’, অথচ পুজা চেরীকে কস্টিউম পড়ালেন সাউথ ইন্ডিয়ান স্টাইলে, তাহলে তো আপনি দর্শকের কাছাকাছি যেতে পারলেন না। বাজেট অবশ্য একটা ফ্যাক্ট, তবে এতোটাও বড় ফ্যাক্ট না যে আপনি চলচ্চিত্রে কোনো গল্পই রাখতে পারবেন না। অথবা ক্রিয়েটিভ অ্যাকশন সিকোয়েন্স রাখতে পারবেন না। অন্তত সিনেমায় এমন কোনো ইউনিক কিছু রাখুন, যেনো এটা দেখতে দর্শক হলমুখী হয়। ‘প্রিয়তমা’র ৪০ মিনিট স্ট্র্যাটেজি হলো এ বিষয়ে কথা বলার জন্য খুব সফল উদাহরণ। ওখান থেকে কি তাহলে আপনারা কিছুই শিক্ষা নিলেন না?