Select Page

পরবাসিনী – চমৎকার কনসেপ্টকে অগোছালোভাবে উপস্থাপন

পরবাসিনী  – চমৎকার কনসেপ্টকে অগোছালোভাবে উপস্থাপন
প্রাক কথা – কখনও কি আপনার মনে প্রশ্ন এসেছে কেন এলিয়েনরা পৃথিবীতে আসলে শুধুই আমেরিকায় আসে? কেন প্রত্যেকবার আমেরিকানরা শুধু এলিয়েন দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আর সবসময় আবার জিতেও যায়!!! কারণটা সবারই জানা। এলিয়েন নিয়ে মূলত হলিউড সিনেমা বানায় তাই এলিয়েনরা সবসময় আমেরিকায় যায় এবং পৃথিবীর আর কোন দেশকে তারা চিনে না !!!
আমার এইটা নিয়ে আজীবন আক্ষেপ ছিল। ২০১৪ সালে প্রথম জানতে পারি পরবাসিনী সিনেমাটির কথা। তখন থেকেই আগ্রহ ছিল সিনেমাটি দেখার। তাই আজকে বলাকায় ফার্স্ট শোতে দেখে ফেললাম পরবাসিনী। সিনেমার পরিচালক স্বপন আহমেদ সিনেমা হলেই ছিলেন। ছবি দেখতে হলে ঢুকার আগে ওনার সাথে কথাও হল কিছুক্ষণ।

এবার আসি পর্যালোচনায় –
সিনেমা – পরবাসিনী
ভাষা – ৯০% বাংলা ১০% ইংরেজি
পরিচালক – স্বপন আহমেদ
অভিনয়ে – ইমন, সব্যসাচী চক্রবর্তী, জুন মালিয়া, রিত মজুমদার, সোহেল খান ও নাম না জানা প্রমুখ বিদেশী (মূলত ফ্রান্সের) অভিনেতাবৃন্দ।
প্রথমে আসি পরিচালনা ও চিত্রনাট্যতে। পরবাসিনী স্বপন আহমেদ পরিচালিত ২য় ছবি। লাল টিপের তুলনায় এই ছবিতে তার মুন্সিয়ানা আরও ভালো হয়েছে । কিন্তু কাজে বেশ তাড়াহুড়া লেগেছে। আসলে বাজেট নিয়ে প্রচণ্ড সংগ্রাম করতে হয়েছে পরিচালক কে। আমার কাছে মনে হয়েছে ছবির চিত্রনাট্য অনেক এলোমেলো ছিল। হয়ত প্রযোজক বাজেট কমাতে প্রচুর কাটছাঁট করেছেন চিত্রনাট্যতে। তাই অনেক ঘটনা যেগুলো আরেকটু বিস্তারিত দেখানো দরকার ছিল সেগুলো ঠিকমত দেখানো হয় নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কন্টিনিউটি সমস্যা ছিল।
এবার আসবো সিনেমার কনসেপ্টে। সিনেমার কনসেপ্ট ভালো ছিল কিন্তু সেটিকে ভালো মত উপস্থাপনা করা হয় নি । মানুষ কে নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত দেখে একটি এলিয়েন সম্প্রদায় সিদ্ধান্ত নেয় তারা মানুষ জাতিকে ধ্বংস করে দিবে । পরিচালক এখানে মেসেজ দিতে চেয়েছেন আমরা যেন নিজেরাই নিজেদের ধংস ডেকে না আনি , আমরা যেভাবে নিজেদের ভেতর সংঘাতে লিপ্ত এবং পৃথিবীর সম্পদ নষ্ট করছি , জীববৈচিত্র ধংস করছি তাতে আমাদের ধ্বংস অনিবার্য হয়ে যাবে। এই মেসেজ টা খুব সুন্দর করেই উপস্থাপন করা যেত। কিন্তু সমস্যা হয়েছে অন্য জায়গায়।
পরিচালকের কারণে নাকি প্রযোজকের কারণে জানি না কেন একটি সাই ফাই সিনেমাতে নায়ক নায়িকার প্রেম ও রোমান্স কে এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হল !!! সিনেমার গানগুলো সুন্দর, কিন্তু আসলেই কি সাই ফাই সিনেমার সাথে যায় এসব রোমান্টিক গান? আর একজন গোয়েন্দা এজেন্ট হিসাবে ইমনের চরিত্র যেভাবে উপস্থাপন করা দরকার ছিল সেভাবে বলিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করা হয় নি।
অভিনয় প্রসঙ্গে একটা কথা বলতেই হয়, সব্যসাচী চক্রবর্তী অতুলনীয়। কিন্তু ইমন এবং রিত মজুমদারের অভিনয়ে বেশ নারভাসনেস খুজে পেয়েছি। তাদের নিজ নিজ চরিত্রের জন্য আরও গ্রুমিং দরকার ছিল। এছাড়া বাকিরা স্বাভাবিক অভিনয় করেছেন।
ছবির সিনেমাটোগ্রাফি ছিল অনেক বেশি চমৎকার। বিভিন্ন চমৎকার লোকেশনে করা দৃশ্যায়নগুলো বেশ ভালো লেগেছে। ফ্রান্সের কিছু কিছু সাংস্কৃতিক দিকও তুলে ধরা হয়েছে যেগুলো ভালো লেগেছে।
গ্রাফিক্সের কাজ মোটামুটি মানের ছিল। সত্যি বলতে আমি বিলিয়ন ডলারের হলিউড মুভির মত গ্রাফিক্স এমনিতেও আশা করি নি। কিছু কিছু জায়গায় ভিএফএক্সের কাজ ভালো ছিল। তবে এলিয়েনদের দৃশ্যায়নগুলো মন্টু মিয়ার এনিমেশনের মত লেগেছে। অভারঅল এই সেক্টরে উতরে গেছে।
সিনেমার কিছু কিছু সংলাপ যেমন খুবই ভালো ছিল আবার কিছু কিছু সংলাপে খাপছাড়া ছিল। তবে সোহেল খানের কমেডি সংলাপগুলো আবার ভালোই উপভোগ্য লেগেছে।
এখন সব মিলিয়ে যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় পরবাসিনী কেমন লেগেছে? আমি বলব গতানুগতিক বাংলা সিনেমার চেয়ে বেশ ভালো। আপনি যদি হলিউডের মত প্রেক্ষাপট, ভিএফএক্স আশা করেন তাহলে আপনার কাছে পরবাসিনী ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু যদি ভাবেন যে ১০-১৫ কোটি টাকার বাজেটে কতটুকু কোয়ালিটি থাকা উচিত তাহলে আমি বলব পরবাসিনী দেখে আসুন। কারণ আমাদের সিনেমা আমরা না দেখলে নতুন কোন পরবাসিনী আসবে না, শুধু ভারতীয় সিনেমা আমদানী হতে থাকবে।
আমার ব্যাক্তিগত রেটিং ১০ এ ৭।
আমাদের বাংলাদেশের সিনেমা দেখতে থাকুন, আমাদের সিনেমার পাশেই থাকুন।


মন্তব্য করুন