Select Page

পাত্তা না দেয়া ছোকড়াকে শাবনূরের টানা ৪০ দিন শিডিউল; তারপর ইতিহাস!

পাত্তা না দেয়া ছোকড়াকে শাবনূরের টানা ৪০ দিন শিডিউল; তারপর ইতিহাস!

২৩-২৪ বছরের তরুণটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্য অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। তার ধ্যান-জ্ঞান সিনেমা। এর মধ্যে জাকির হোসেন রাজুর সহকারী হয়ে কাজ করেছেন। এখন নিজের পুরোদস্তুর পরিচালক হওয়ার পালা। প্রথম সিনেমায় নায়িকা হিসেবে তার পছন্দ শাবনূর। কিন্তু বাংলা সিনেমা শাসন করা নায়িকা এই ‘ছোকড়াকে’ পাত্তা দেবেন কেন?

কিন্তু অবাক বিষয় হলো সেই তরুণকে শাবনূরই কিনা ৪০ দিন শিডিউল দিয়ে দিলেন। তিনি আর কেউ নন; মোস্তাফিজুর রহমান মানিক, যার প্রথম সিনেমা ‘দুই নয়নের আলো’।

সিনেমাটির ১৮ বছর পূর্তিতে প্রথম আলোর কাছে গল্পের ঝুলি খুলে দিয়েছেন পরিচালক মানিক।

তিনি বলেন, ‘আমি “ভালোবাসা কারে কয়” নামের একটি সিনেমার সহকারী হিসেবে কাজ করি। সেই সিনেমার নায়িকা ছিলেন শাবনূর। তখন থেকেই চিনতেন। পরে একদিন আপাকে বললাম, আপনাকে নিয়ে আমি একটি সিনেমা বানাব। কিন্তু তিনি কোনো গুরুত্বই দিলেন না। আমার গল্পের জন্য তাকেই দরকার। উপায় না পেয়ে আমার বস জাকির হোসেন রাজু ভাইকে বললাম। সেটা আবার আরেক গল্প।’ 

সব শুনে রাজু শাবনূরকে ফোন দিয়ে বললেন, ‘আমি একটি সিনেমা বানাব। তোমার সঙ্গে একটি ছেলে দেখা করবে।’ আমি শাবনূরের বাসায় গেলাম। তাকে গল্প শোনালাম। গল্প ও গানগুলো শুনে আপা দারুণ খুশি। পরে জানতে চাইলেন, ‘সিনেমা বানাবে কে?’ বললাম আমি। শুনে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। প্রথমে ভেবেছিলেন, পরিচালক জাকির হোসেন রাজু সিনেমাটি নির্মাণ করবেন। কিন্তু গল্প ভালো লাগায় আমাকে তেমন কিছু বলতে পারছিলেন না।’

এরপর শাবনূর টানা ৪০ দিন শুটিংয়ে শিডিউল দিলেন। এক বছর পরে, এপ্রিল-মে মাসে শুটিং হবে। এদিকে পরিচালক একদিন শাবনূরকে বললেন, একটি দৃশ্য আছে শর্ষেখেতের মধ্যে। ডিসেম্বরে সেই দৃশ্যের শুটিং করলে ভালো হয়। এদিকে শাবনূর যাবেন অস্ট্রেলিয়া। দুই দিন শাবনূর শিডিউল দিলেন। কিন্তু দুই দিনই কুয়াশায় শুটিং করা গেল না। পরে আরেক দিন সকাল আটটায় শাবনূর শিডিউল দিলেন। পরিচালক দোটানায় পড়ে গেলেন। তিনি শুনেছিলেন শাবনূর সকালে ঠিকমতো শুটিংয়ে যান না। পরে দেখলেন ঠিক সময়ে প্রস্তুত হয়ে আছেন এই চিত্রনায়িকা। সিঙ্গাইরে শুটিং হবে। সেই শুটিং ১২টার শেষ হলো। পরে পরিচালক শাবনূরকে বললেন, ২টার মধ্যে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে। আজ তার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। শুনে শাবনূরই ঠিকমতো পরিচালককে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছে দিলেন। শুটিংয়ের প্রথম দিনের এই ঘটনাই পরিচালককে ভালো কাজের অনুপ্রেরণা দিয়েছিল।

মোস্তাফিজুর রহমান মানিক ও শাবনূর

মোস্তাফিজুর রহমান মানিক বলেন, ‘তখন শাবনূরের শিডিউল পাওয়া অনেক কঠিন ছিল। প্রথম দিনের শুটিং করতে গিয়ে দেখলাম তিনি অনেক সহযোগী একজন অভিনেত্রী। তখনই মনে হয়েছিল আমাদের কাজটি ভালো হবে। তিনিসহ সব সহকর্মীর সহযোগিতা আমাকে আশাবাদী করেছিল। সেই সিনেমা থেকে শাবনূর ক্যারিয়ারে প্রথম ও একমাত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া আমার জন্য ছিল দারুণ আনন্দের খবর। এটা তাঁর জন্য কাঙ্ক্ষিত পুরস্কার ছিল। আমি একবার শাবনূরের জন্মদিনে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনার বিশেষ এই দিনে কী উপহার দেব। শুনে শাবনূর বলেছিলেন, আপনি আমার জীবনের বড় উপহারটি দিয়েছেন।’

শাবনূরের ক্যারিয়ারে অনেক বাণিজ্যসফল ও সমালোচক প্রশংসিত সিনেমা থাকলেও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন মাত্র একবার। ২০০৫ সালে অবশেষে কাঙ্ক্ষিত পুরস্কারের দেখা পান এই অভিনেত্রী। এটি ছিল ‘দুই নয়নের আলো’ সিনেমার জন্য। সিনেমাটি শ্রেষ্ঠ গায়ক ও গায়িকা শাখায় দুটি পুরস্কার পেয়েছিল।

আলোচিত এ চলচ্চিত্রে শাবনূরের বিপরীতে ছিলেন ফেরদৌস। আরো দুটি চরিত্রে ছিলেন রিয়াজ ও শাকিল খান।


About The Author

Leave a reply