Select Page

যে কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেন অনুদান কমিটির চার সদস্য?

যে কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেন অনুদান কমিটির চার সদস্য?

রোববার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির চার জ্যেষ্ঠ সদস্য সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বরাবর পদত্যাগপত্র দিয়েছেন তাঁরা। তারা হলেন মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, মোরশেদুল ইসলাম ও মতিন রহমান।

চিঠিতে জানানো হয়, অনুদান কমিটি সদস্যদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে, মন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্তে সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। চার সদস্যের স্বাক্ষর করা ওই চিঠিতে তারা লিখেছেন, ‘অনুদান কমিটির সদস্য হিসেবে আমাদের এর আগেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের দুঃখজনক অভিজ্ঞতা আর কখনো হয়নি। এ অবস্থায় অনুদান কমিটির সদস্য হিসেবে থাকা আমাদের জন্য সম্মানজনক ও যুক্তিযুক্ত মনে না হওয়ায় আমরা চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা হিসেবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন আটজন পরিচালক। তবে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান বাছাই কমিটি’র সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও অনুদান পায়নি ‘হীরালাল সেন’ চলচ্চিত্রটি। এর প্রতিকার চেয়ে কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন।

এ নিয়ে মোরশেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওটা একটা গবেষণা হয়েছে। সেটাকে চিত্রনাট্য বলা যাবে না। প্রথমে সেটি জমা পড়েছিল প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে। আমরা ফেরত পাঠানোর পর আবারও জমা হলো ফিচার ফিল্ম হিসেবে। দুবারই সেটি সর্বোচ্চ নম্বর পায়। একই স্ক্রিপ্ট কীভাবে ডকুমেন্টারি ও ফিচার ফিল্ম হিসেবে সর্বোচ্চ নম্বর পায়?’

তবে অন্যান্য বিভাগেও বেশি নাম্বার পাওয়া চলচ্চিত্রের বদলে অনুদান পেয়েছে কম নাম্বার পাওয়া চলচ্চিত্র।

মোরশেদুল ইসলাম জানান, অনুদান পাওয়া ছবিগুলোর মধ্যে এমন ছবিও আছে, যেটা একেবারে মানহীন ও তৃতীয় শ্রেণির। কমিটির সদস্যদের প্রায় সবাই সেই চিত্রনাট্যকে অনুদান না দেওয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত মানেনি মন্ত্রণালয়।

গত বছর ২৪ ডিসেম্বর ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান বাছাই কমিটি’র সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আজহারুল হকের নেতৃত্বে ২২টি চলচ্চিত্রকে নম্বরের ভিত্তিতে চূড়ান্ত অনুদান কমিটির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু দেখা গেছে, শিশুতোষ শাখায় সর্বোচ্চ নম্বর ৬৬ দশমিক ২৯ নম্বর পাওয়া নূরে আলমের ‘কুড়কুড়ির মুক্তিযুদ্ধ’ ছবিটিকে অনুদান না দিয়ে ৬২ দশমিক ২৯ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আবু রায়হান মো. জুয়েলের ‘নসু ডাকাত কুপোকাত’ ছবিটিকে অনুদানের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।

একইভাবে প্রামাণ্যচিত্র শাখায় সর্বোচ্চ নম্বর (৭৫ দশমিক ৪৩) পাওয়া মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের ‘হীরালাল সেন’ চলচ্চিত্রটিকে অনুদান দেওয়া হয়নি। এই শাখায় অনুদান পেয়েছে হুমায়রা বিলকিসের ‘বিলকিস বিলকিস’ ও পূরবী মতিনের ‘মেলাঘর’ ছবি দুটি। বাছাই কমিটি এ ছবি দুটিকে দিয়েছেন যথাক্রমে ৫৫ দশমিক ৭১ এবং ৪৭ দশমিক ৮৬ নম্বর।

প্রথম আলোর আরেক প্রতিবেদনে চূড়ান্ত অনুদান কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, কোনো নম্বরযুক্ত তালিকার ভিত্তিতে অনুদানের সিদ্ধান্ত নেননি তাঁরা। শুরুতে নম্বরযুক্ত তালিকা দেওয়া হলেও সেটার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিতে চাননি তাঁরা। নম্বর যুক্ত হলে তাঁদের তেমন কিছুই করার থাকে না। নম্বরের বদলে বরং ছবিটি কেন অনুদান পাওয়ার যোগ্য, সেই মন্তব্যসহ বিবেচনার জন্য চূড়ান্ত কমিটিকে দেওয়া যেতে পারে। এ বছর সেভাবেই তাঁদের সামনে দেওয়া হয়েছে।

তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো চলচ্চিত্র এ বছর অনুদান পেয়েছে কি না, জানতে চাইলে ওই সদস্য বলেন, ‘পেয়েছে।’ এ ছাড়া আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলচ্চিত্রে অনুদান দেওয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই বাছাই কমিটির নম্বরের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয় চূড়ান্ত কমিটি। তবে এবারই প্রথম নম্বরবিহীন তালিকা চেয়েছিল চূড়ান্ত কমিটি। ফলে তালিকার নিচের দিকে থাকা ছবিও মনোনয়ন পেয়ে গেছে।

অনুদানের সাধারণ শাখায় যৌথভাবে তৃতীয় স্থান পেয়েছিল তৌকীর আহমেদের ‘অদ্ভুত আঁধারে’ এবং জাহিদুর রহিম অঞ্জনের ছবি ‘মেকআপ বক্স’। কিন্তু এ ছবি দুটির বদলে অনুদানের জন্য বিবেচনা করা হয়েছে অষ্টম অবস্থানে থাকা আকরাম খানের ‘বিধবাদের কথা’ ও একাদশ অবস্থানে থাকা হোসনে মোবারক রুমির ‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’ ছবি দুটি।


Leave a reply