Select Page

‘রান’ আউট মুভি রিভিউ   

‘রান’ আউট মুভি রিভিউ   

স্টার সিনেপ্লেক্সের ভেতরে দর্শনার্থীদের বসার জায়গা। চারপাশে শো চলছে এমন সিনেমার পোস্টার। অনেকেই পোস্টারের পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছে। হন্যে হয়ে খুঁজেও রান আউটের পোস্টার পেলাম না। ওয়ারী থেকে সীমা ভৌমিক, পূজার ছুটিতে বন্ধুকে নিয়ে সিনেমা দেখতে এসেছেন। সঙ্গে ষষ্ঠ শ্রেণী পড়ুয়া ছোট বোন। পোস্টার খুঁজছিলাম কারণ, এই সিনেমাটি ১৮ প্লাস। পোস্টারে এমন উল্লেখ ছিল। ভাইয়ের দুই ছেলে ও নিজের এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন আরেক মধ্য বয়স্কা মহিলা। স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের নিয়ে কেন ১৮ প্লাস মুভি দেখতে এলেন, এমন প্রশ্ন ছিল অপেক্ষারত অনেক মানুষের। কেউ কেউ ধারণা করছিল প্রবেশের সময় স্কুল পড়ুয়াদের বাধা দেয়া হবে। বিনা বাধায় তারা হলে প্রবেশ করে এবং কর্তৃপক্ষ আন্তরিকতার সঙ্গে সবার মতো তাদেরও আসন নিশ্চিত করেন।

[**স্পয়লার অ্যালার্ট**]

শহরের কুখ্যাত সন্ত্রাসী কালা মিজানের খুনের মধ্যদিয়ে সিনেমা শুরু হয়। কালা মিজান পতিতার কাছ থেকে ফিরছিল। কিশোর (নায়ক সজল) ফিরছিল অফিস থেকে। সিঁড়ি পেড়িয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে কালা মিজান পড়ে কিশোরের সামনে। সম্ভবত দেহ ব্যবসা ও অফিসের কাজ একই ভবনে চলছিল। গুলিবিদ্ধ মিজানকে দেখে হাবাগোবা কিশোর দৌড়ে গিয়ে অন্য নায়কদের মতো প্রথমে হাতে রক্ত মাখালেন তার পর ‘হেল্প হেল্প’ বলে চিৎকার শুরু করলেন। পাঁচটা বাংলা সিনেমা দেখা দর্শক ও চোখবুজে বলে দিতে পারেন এরপর কী হবে। পুলিশ আসবে, নায়কের হাতে রক্ত দেখে তাকে ধরে নিয়ে যাবে। টর্চার করে সহজ সরল নায়ককে রাতারাতি সন্ত্রাস বানিয়ে ছাড়বে। রান আউট প্রচলিত ধারার বাইরে না গিয়ে তাই করল। ক্যামেরার বুম, ফ্ল্যাশ লাইট দেখে চমকে ওঠা ছেলেটাকে শহরের শীর্ষ সন্ত্রাসী বলে প্রচার শুরু করল মিডিয়া। অথচ সাংবাদিকতার ছাত্র হিসেবে জানি, দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে খুনী বলার অধিকার সাংবাদিকের নেই। আর দশটা বাংলা সিনেমার মতো পুলিশ উঠে পড়ে লাগলো, কিশোরের মুখ থেকে খুনের হ্যাঁমূলক স্বীকারোক্তি আদায় করতে। মারতে মারতে পুলিশেরই গা ব্যথা হওয়ার দশা। পানিতে চুবালেন, লাঠিপেটা করলেন, ধমকালেন। স্বীকারোক্তি আদায় করতে পারলেন না। মিজান খুনের ঘটনায় অন্ধকার জগতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। প্রয়াত মিজানের গড ফাদার ব্যবসায়ী তালহা সাহেব কোণঠাসা। তার প্রতিদ্বন্দ্বী গড ফাদার তারিক আনাম খোশ মেজাজে আছেন। তারা সবাই টাকা, অস্ত্র, মেয়ে মানুষ যে কোন কিছুর বিনিময়ে কিশোরকে চায়। বলা-কওয়া নেই কিশোরকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। অতি উৎসাহী মিডিয়ার এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। ছাড়া পেয়ে ভাড়া বাড়িতে এলে দেখা যায় বাড়িওয়ালার মেয়ে কিশোরের জন্য কেঁদে কেটে একাকার। পরদিন সহকর্মীরা কিশোরকে অফিসে দেখে চমকে ওঠে। শহরের শীর্ষ সন্ত্রাসী তাদের সঙ্গে অফিস করছে, চমকে ওঠার মতো ঘটনা। প্রশ্ন থেকে যায় পাশাপাশি ডেস্কে বসে কাজ করেও এতদিনে তারা বিষয়টা আবিষ্কার করতে পারে নাই। এমডি স্যার রুমে ডেকে কিশোরের স্যালারি ডাবল করে দিলেন। বিনিময়ে তাকে শুধু অফিসে ছায়া এড়িয়ে চলতে হবে। বাড়িওয়ালাও ইনিয়ে-বিনিয়ে বাড়ি ছাড়া করল। সমাজ থেকে প্রায় এক ঘরে হয়ে যাওয়া কিশোর ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলে ডিবি পরিচয়ে ভদ্রলোক তার উপর নজরদারি রাখছেন মর্মে তাকে শহর ছেড়ে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দেন। যদিও একটু পরেই কিশোর তারিক আনামের লোক দ্বারা অপহৃত হলে তখন সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা ডিবির লোক কই ছিলেন সে প্রশ্নের কূলকিনারা খুঁজে পাওয়া যায় নাই।

অপরাধ জগতে কিশোরের অভিষেক স্মরণীয় করতে পার্টির আয়োজন। ‘রান’ দেখিয়ে আইটেম গানে উপস্থিত হলেন নাইলা নাইম। সিনেমার নাম ‘রান’ আউট কেন এবার পরিষ্কার হলাম। আর দশটা বাংলা নায়িকার চেয়েও বাজেভাবে নাচলেন নাইলা। ভেজা শরীর দেখিয়েই পাস মার্ক পাওয়ার চেষ্টা করলেও তার কপালে পাস জুটল কী না তা দর্শকই ভাল বলতে পারবেন। নাচের চেয়ে বেশি দৃষ্টিকটু ছিল এক্সপ্রেশন। সজল একটু হেল্প করতে পারতেন। হয়ত হেল্প করাতেই এই পরিমাণ ইম্প্রুভড হয়েছিল! ছেলে থানা হাজতে, অতঃপর হাজত থেকে অপরাধ জগতে। স্কুল শিক্ষিকা মা শহরে এসে কিশোরের বাড়িওয়ালার মেয়ের সঙ্গে এখানে সেখানে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। যাকে তাকে দেখে কিশোর বলে দৌড়ে যাচ্ছেন। যদিও ছেলেকে একবারও মায়ের খোঁজ করতে দেখা যায় নাই। জেনিথ ধীরে ধীরে কিশোরের প্রতি দুর্বল হয়ে পরছেন। চাকরি বাঁচাতে অফিসের চেয়ারম্যানের কাছে নিজেকে সপে দিতে হয়। সপে দিতে হয় একই অফিসের এমডির কাছেও। ক্রমান্বয়ে বেড শেয়ার করতে করতে একসময় জেনিথের পেটে সস্তান আসে। জেনিথ নিজেও জানে না এই সন্তানের বাবা কে। তারিক আনাম সন্তান নষ্ট করতে চাপাচাপি শুরু করলে জেনিথ বেঁকে বসেন।

কিশোরের শক্তিতে সম্রাজ্য ফিরে পেয়েছে তারিক আনাম। এমতবস্থায় ময়লাওয়ালা সেজে জেনিথের বাড়ি থেকে পালায় কিশোর। পালিয়ে দেখা করে সেই বাড়িওয়ালার মেয়ের সঙ্গে। এখন জানা গেলো তারা ভয়াবহ প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন অনেক আগ থেকেই। অন্ধকার পথ ছেড়ে প্রেমিকা নিয়ে আত্মগোপন করলেন। পুরনো ভাঙ্গা বাড়িতে উঠে প্রেমিকা নীলার ইচ্ছে হলো গোসল করার। এ রকম পরিত্যক্ত বাড়িতে নায়িকার গোসলের খায়েশ কেন জাগল তা কোটি টাকার প্রশ্ন। সে দৃশ্য আবার নজর এড়াল না কিশোরের। মধ্যবিত্ত চেতনা কোথায় হারাল কে জানে! দ্রুতই গান শুরু হওয়ায় অল্পের উপর দিয়ে বাঁচা গেল। তাদের ঘনিষ্ঠ দৃশ্য যখন চলছিল আমার পাশের সিটে বসা সেই স্কুল বালকদের দিকে তাকিয়ে দেখি এক জন চোখ বন্ধ করে আছে। বাকিরা মনে মনে হাসছে। তারিক আনাম কিশোরকে দিয়ে প্রতিপক্ষের তিন শ’ বিঘা জমির দখল প্রায় নিয়ে নিচ্ছিলেন এমন সময় কিশোর লাপাত্তা হওয়ায় প্রতিপক্ষ শিবিরে স্বস্তি নেমে আসছে। জেনিথের উপর চাপ বাড়তে থাকে। পাঁচ দিনের মধ্যে কিশোরকে ধরে না আনলে তার মেয়েকে মেরে ফেলবে তারিক আনাম। কিশোরের প্রেমিকাও ঝামেলা শুরু করেছে। ফেরারি জীবন তার ভাল লাগছে না। হয় কিশোরকে নিয়ে, নয়তো কিশোরকে রেখেই তিনি সুস্থ জীবনে ফিরে যাবেন। যার কথা পুরো সিনেমায় মনে করতে দেখা যায় নাই, সেই নায়িকার জন্য কিশোরের দরদের শেষ নেই। সিনেমা শেষে দর্শক প্রতিক্রিয়া ছিল দেখার মতো। অন্ধকার জগতের প্রতিটা চরিত্র মনে হয় পানির বদলে মদ খেয়েছেন। নাইলা নাইমের পাশাপাশি নিয়মিত ‘রান (উরু)  আউট’ করেছেন তারিক আনাম। কিশোরের মাকে গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যগুলোতে দেখা যায় নাই। নায়িকার চরিত্রটা থেকেও ছিল না। এর চেয়ে না থাকলেই ভাল হতো। রোমান্টিক গানে রক মিউজিক ছাড়া বাকিটা ভালই ছিল। প্রচুর অপ্রাসঙ্গিক দৃশ্য সিনেমার লাইটিং আর মেকিং এ ভেরিয়েশন আনার প্রচেষ্টাকে ম্লান করে দিয়েছে।

দৈনিক জনকণ্ঠ প্রকাশিত

প্রকাশিত : ২৯ অক্টোবর ২০১৫


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

লেখক ও সাংবাদিক

মন্তব্য করুন