Select Page

রিভিউ/ ‘কসম বাংলার মাটি’তে নিজেকে মহামূর্খ প্রমাণ করলেন পরিচালক

রিভিউ/ ‘কসম বাংলার মাটি’তে নিজেকে মহামূর্খ প্রমাণ করলেন পরিচালক

[২০০০ সালে মুক্তি পায় মনোয়ার খোকন পরিচালিত ‘কসম বাংলার মাটি’। প্রথম সারির তারকাদের নিয়ে এর আগে একাধিক সিনেমা নির্মাণ করলেও এবারেরটি বি গ্রেডের উপকরণে ঠাসা। শাকিব খান ছিলেন এ সিনেমার নায়ক। ছিলেন রাজিবের মতো অভিনেতা। আর নায়িকা ছিলেন মুনমুন ও ময়ূরী; যারা কিনা ‘অশ্লীল যুগের’ সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। পরে পুরুষ অভিনেতারা পুনর্বাসিত হলেও এ অভিনেত্রীরা ব্রাত্য হয়ে পড়েন ঢালিউডে। ‘কসম বাংলার মাটি’র রিভিউ প্রকাশ হয়েছিল আজকের কাগজে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া পেপার কাটিং থেকে লেখাটি সংগ্রহ করছে বিএমডিবি। সেখানে লেখার কোনো শিরোনাম ও রিভিউয়ারের নাম নেই। ব্যবহৃত শিরোনাম বিএমডিবির দেয়া।]

কথায় বলে ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। অর্থাৎ যার যার চরিত্র সেটা সে যে কোনো জায়গাই থাক না কেনো তা প্রকাশ পাবেই। সম্প্রতি ‘কসম বাংলার মাটি’ ছবিটি দেখে, এর বিভিন্ন সংলাপ শুনে এরকমই মনে হয়েছে। এ ছবির পরিচালক মনোয়ার খোকন, কাহিনী ও সংলাপ রচয়িতা ছটকু আহমেদ এতে তাদের চরিত্রেরই হয়তো রূপায়ন করেছেন। এ ছবির একটি সংলাপ- ‘দেশে মূর্খের সংখ্যাই বেশি, তাই মূর্খের রাজত্বই থাকবে’। যারা মূর্খ তারাই কেবল এ ধরনের কথা বলতে পারে। এ ধরনের সংলাপের ছবি নির্মাণ করে পরিচালক নিজে যে একজন মহামূর্খ তাই প্রমাণ করলেন।

এ ছবিতে আরও অনেক আপত্তিকর সংলাপ রয়েছে— যা দেশ ও জাতির জন্যে খুবই ক্ষতিকর। যেমন— যে জাতির মেরুদণ্ড নেই, তার আবার শিক্ষা (!) এ বলে ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’ লিখিত পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। এমন সংলাপ ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার দৃশ্য সেন্সর বোর্ড কী করে মুক্তি দিলো তা ভাবতেও অবাক লাগে। এ ধরনের দৃশ্য কি শিক্ষার বিরুদ্ধে নয়? শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড লিখিত পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা কি দেশ ও জাতির জন্যে ক্ষতিকারক নয়?

এ ছবিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের পর্দানশীল মহিলাদের অত্যন্ত হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এ ধরনের ধর্মীয় কোনো বিষয়কে হেয় প্রতিপন্ন করে ছবি নির্মাণ করা কি সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেয়া নয়? এরকম বিষয়কে উপস্থাপন করে কাহিনীকার ছটকু আহমেদও যে মহামূর্খ তারই প্রমাণ দিলেন। কোনো বোরখা পরা মেয়ে কি এদেশে কখনো পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে বোরখা খুলে হাফপ্যান্ট পরে মারপিট করে? ‘কসম বাংলার মাটি’তে মূর্খ কাহিনীকার ও মূর্খ পরিচালক তাই দেখিয়েছেন।

এ ছবিতে বোরখা পরা মেয়েদের এতোই অপদস্থ করা হয়েছে— যা খুবই বেদনাদায়ক। মুনমুন ও ময়ূরী দুই বোন বোরখা পরে কলেজে যায়। কলেজের বান্ধবীরা ওদের বোরখা ছিনিয়ে নেয়। গান গায়, ‘শোন বোরখাওয়ালি তুমি বড়োই নখরুওয়ালি। ঢেকে তুমি রেখো না গো গোলাপেরও কলি…’। এ ধরনের অশ্লীল কথার গান গেয়ে, বিকৃত অঙ্গভঙ্গির নাচ দেখিয়ে বোরখা খুলে নায়িকাদের সুইমিং পুলে ভিজানো এটা কি আজগুবি নয়?

এ ছবিতে নায়িকারা বোরখাকে তাদের বাবার কবরের পাশে কবর দেয়। বোরখা কবর দিয়ে পরিচালক মনোয়ার খোকন কি মুসলমান নারীদের লাজ-লজ্জা মান-ইজ্জতে আঘাত করেননি। এ ছবিতে বাংলাদেশের পুলিশকেও অতি হেয় প্রতিপন্ন করেছেন পরিচালক। যদিও পুলিশ এদেশে সৎ নয় তবুও সন্ত্রাসীদের দোসর হিসেবে পুলিশকে দেখানো কি দেশবাসীর কাছে গোটা পুলিশ বাহিনীকে ছোটো করা হয়নি?

‘কসম বাংলার মাটি’ ছবিতে গান আছে আটটি। প্রেমের গান পাঁচটি। এর মধ্যে তিনটি গানের কথাই অশ্লীল। গানগুলোতে নাচের অঙ্গভঙ্গি আরো বিশ্রী।

এ ছবিতে পরিচালক ধর্ষণের একটি অভিনব কায়দা আবিষ্কার করেছেন। মনে হয় পরিচালক নিজেও এ ধরনের নারী ধর্ষণে অভিজ্ঞ। ময়ূরীকে ধর্ষণ করতে গিয়ে ভিলেন লিটন কল্পনায় রোমান্সের দৃশ্যে চলে যায়। গান শেষে দুজন আবার ধস্তাধস্তি শুরু করে। এতক্ষণ কি ময়ূরী তবে ভিলেনের শরীরের উত্তাপ নিচ্ছিলেন? আসলে বাংলা ছবিতেই এরকম আজগুবি বিষয় সম্ভব। যেখানে মহামূর্খদের রাজ্য সেখানে সবই সম্ভব।

এ ছবিতে নায়িকারা ক্যারাতি শিক্ষা নেয়। কিন্তু ছবির মারপিটে কোনো ক্যারাতের প্রয়োগ নেই। ফাইট ডিরেক্টরও যে মহামূর্খ এখানে। তারও প্রমাণ মিলে। ‘কসম বাংলার মাটি’ ছবিটি দেখে এটাই মনে হয়েছে যে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে এখন মূর্খদের বসবাস। ওটা মূর্খদেরই রাজ্য বলে এ ছবির পরিচালক প্রমাণ করেছেন।


Leave a reply