Select Page

সিনেমা-শূন্য ঈদ, কার কেমন ক্ষতি…

সিনেমা-শূন্য ঈদ, কার কেমন ক্ষতি…

ঈদ আমাদের দেশের সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব। আরো নির্দিষ্ট করে যদি বলি, আমাদের দেশে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এর আমেজ অন্যান্য যেকোনো উৎসবের তুলনায় অনেক বেশি৷ দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর এই দিন মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের মাঝে খুশি বয়ে নিয়ে আসে। অন্যান্য সাধারণ জনগণের মতো বাংলা সিনেপ্রেমীদের জন্য ঈদ অত্যন্ত স্পেশাল।

ঈদের দিনের পরিকল্পনায় তারা দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় রেখে দেন পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধবদের সাথে নতুন চলচ্চিত্র উপভোগের জন্য। তবে এবার এই রীতিনীতিতে ছেদ পড়বে৷ ঈদে মুক্তির রেসে টিকে থাকা সকল প্রযোজক নিশ্চিত করেছেন, এবার তাদের ছবি পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরে মুক্তি পাচ্ছে না।

চলচ্চিত্র মুক্তি থেকে সরে আসার পেছনে সবার প্রধান কারণ একই, করোনা আতংক। ইংরেজি পঞ্জিকা অনুসারে এবারের ঈদ হতে পারে ২৪/২৫ মে (চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল), অথচ এদিকে কয়েক দফায় বাড়িয়ে দেশে সাধারণ ছুটি ৩০ মে বর্ধিত করা হয়েছে। দিনের পর দিন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় এটা মোটামুটি আন্দাজ করা যায়, ঈদের আগে পরিস্থিতি আনুকুল্যে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। উপরন্তু পরিস্থিতি আনুকূল্যে থাকলেও সিনেপ্রেমীদের মধ্যে করোনা আতংক দীর্ঘসময় ধরে বিরাজ করবে। তাই সাধারণ ঈদের ছবিতে যেমন দর্শক সমাগম হয়, এবারের ঈদে সেটা হবে না।

তবে এবার বেশকিছু চলচ্চিত্র ঈদে মুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিল; যেমনঃ এম.এ রাহিম পরিচালিত “শান”, সানী সানোয়ার ও ফয়সাল আহমেদ পরিচালিত “মিশন এক্সট্রিম”, শাহীন সুমন পরিচালিত “বিদ্রোহী”, রবিন খান পরিচালিত “মন দেব মন নেব”, শামীম আহমেদ রনী পরিচালিত “বিক্ষোভ” ইত্যাদি। এছাড়া অনন্য মামুন গত মার্চ মাসে “নবাব এল.এল.বি” নামে একটি চলচ্চিত্রের নাম ঘোষণা করেন। এর মধ্যে প্রথম চারটির শ্যুটিং আগেই শেষ হয়েছিল, কিছু পোস্ট প্রডাকশনের কাজ বাকি ছিল। “বিদ্রোহী” এর পরিবেশক শাপলা মিডিয়া ইতোমধ্যে ৪৫ টি হল বুকিং দিয়ে ফেলেছিল। “মিশন এক্সট্রিম” দেশ ও দেশের বাইরে কিংবা দেশে মুক্তির দু-এক সপ্তাহের মধ্যে বিদেশে মুক্তির পরিকল্পনা সাজিয়েছিল। এছবির পাশাপাশি “শান” ছবি সংশ্লিষ্টরা ভিন্নধর্মী প্রচারণার জন্য পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছিল, পরিবেশক জাজ মাল্টিমিডিয়া চেষ্টা করছিল ভালো কিছু হল বুক করার। “মন দেব মন নেব” সবার আগে ঈদে মুক্তির জন্য ডেট রেজিষ্ট্রেশন করেছিল। এসকল পরিকল্পনা ভেস্তে গেলো করোনার মহামারী প্রকোপে।

এক্ষেত্রে বড় আকারের ভক্তকুল থাকার কারণে ছবির মান যেমনই হোক শাকিব খান অভিনীত ছবিগুলো (“বিদ্রোহী” ও “নবাব এল.এল.বি”) হয়তো পরবর্তীতে নিরাপদ সময়ে মুক্তি দিয়ে কোনোরকমে বাজেট কভার দিতে পারবে। মাঝারি খরচে তৈরি করা ছবিগুলো মানসম্মত হলে সেগুলোও প্রত্যাশা অনুযায়ী দর্শক হয়তো পাবে। কিন্তু বড় বাজেটের ছবির প্রযোজকদের প্রযোজকরা আর্থিকভাবে ক্ষতির আশংকায় পড়তে পারে, বিশেষ করে “মিশন এক্সট্রিম” ও “শান”। দুইটি ছবি বড় বাজেটের এবং ঈদকে টার্গেট করেই নির্মাণ করা। আর সাধারণত ঈদের ছবিগুলোর বাজেট তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। এসময়টায় দর্শকেরা সিনেমাহলে জীবনমুখী গল্পের তুলনায় ‘লার্জার দেন লাইফ’ অভিজ্ঞতা নিতে বেশি পছন্দ করে। তাই পছন্দমতো চলচ্চিত্র পাওয়া গেলে দর্শকের রিপিটেশন হয়, তাই ব্যবসাও অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি হয়। যদি ঈদ কিংবা ঈদের পর করোনা প্রকোপ কেটেও যায়, তবে মানুষের মধ্যে এই আতংক কাটতে কয়েক মাস লেগে যাবে। দর্শক সহজে সিনেমাহলের সামনে সমাগম করতে চাইবে না। এটি সব ধরনের চলচ্চিত্রের জন্যই বিরাট বড় হুমকি। সব চলচ্চিত্রই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে থাকবে।

তবে ঈদে ছবি মুক্তি না পাওয়াতে সবথেকে বড় ক্ষতি হবে সিনেমা হলমালিকদের। বিগত কয়েকবছরের ব্যবসায়িক দিক পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কিছু ব্যতিক্রম চলচ্চিত্র বাদ দিলে ব্যবসায়িক দিক থেকে বছরের সবথেকে লাভজনক ছবিগুলো সফল হয়েছে পবিত্র ঈদে মুক্তি পেয়ে। হলমালিকরাও ব্যবসায়িক লাভের আশায় এই সময়টার অপেক্ষায় চাতক পাখির মতন চেয়ে থাকেন। প্রতিবছর পঞ্চাশের অধিক বন্ধ সিনেমাহল এক-দুই সপ্তাহের জন্য ঈদের ছবি প্রদর্শন করে শুধুমাত্র দশক চাহিদা এবং আর্থিক লাভের কথা মাথায় রেখে।

গত ৬ মার্চের পর সারাদেশে কোনো নতুন ছবি মুক্তি না পাওয়ায় এ ক্ষেত্রে তারা বিশাল বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। সিনেমাহলের পরিবেশ তো ঠিক রাখতে পারছেনই না, উপরন্তু এই অবস্থায় তারা কর্মচারীদের সম্মানি দিতেই হিমশিম খাবেন। ফলশ্রুতিতে হয়তো আরো দ্রুতবেগে সিঙ্গল স্ক্রিনগুলো বন্ধ হয়ে সংখ্যাটি এক ডিজিটের কোঠায় চলে আসতে পারে। এটা হলে আমাদের চলচ্চিত্র এক গভীর খাদে আটকে যাবে৷ যেখান থেকে অদুর ভবিষ্যতে হয়তো উঠে দাঁড়ানো যাবে। কিন্তু কবে, সেটা আমরা কেউ জানি না।

অন্যদিকে দীর্ঘ লকডাউনের কারণে ক্ষতি শিকার তারকা থেকে স্পটবয় সবাই। কাজের পরিবেশ না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ থাকবে। এ ছাড়া ঈদের ছবি মুক্তি না পাওয়া বড় তারকারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বেশি। যার প্রভাব পরবর্তী সিনেমাতেও পড়বে।


মন্তব্য করুন