Select Page

৩০ বছর পর পরিচালনায় ফিরছেন ‘পুরস্কার’-খ্যাত সি বি জামান

৩০ বছর পর পরিচালনায় ফিরছেন ‘পুরস্কার’-খ্যাত সি বি জামান

কিশোর অপরাধী সংশোধনাগার নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘পুরস্কার’ নিয়ে আজো কথা হয়। সেই ছবির পরিচালক সি বি জামান ৩০ বছর পর নির্মাণে ফিরছেন।

তার নতুন চলচ্চিত্রের নাম ‘অ্যাডভোকেট সুরাজ’। রোববার (৪ আগষ্ট) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনাড়ম্বর পরিবেশে প্রযোজনা-পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান ‘এসএইচকে গ্লোবাল’ এর সঙ্গেে এই চলচ্চিত্রের পরিচালক হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তী পরিচালক সি বি জামান।

চুক্তিপত্রটিতে স্বাক্ষর করেন সি ব. জামান এবং এসএইচকে গ্লোবালের চেয়ারম্যান শামস হাসান কাদির। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন এসএইচকে গ্লোবাল এর সিইও ইমদাদুল ইসলাম (যিকরান), স্বনামধন্য পরিচালক শিল্পী বিশ্বাস এবং সি.বি. জামান এর ছেলে সি.এফ. জামান (চৌধুরী ফরহাদুজ্জামান)।

এ বিষয়ে সি বি জামান বলেন, ‘আমার মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বশেষ ছবি ‘কুসুম কলি’, যেটা ১৯৯০ সালে মুক্তি পেয়েছে। এরপর অনেক প্রযোজকই আমার কাছে এসেছে ছবি বানানোর জন্য তবে সেগুলির গল্প এবং প্ল্যান আমার পছন্দ না হওয়ার কারণে এতদিন ছবি পরিচালনা করিনি। এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটির প্ল্যান এবং ‘অ্যাডভোকেট সুরাজ’ চলচ্চিত্রের গল্প আমার কাছে ভালো লাগায় আবারও ৩০ বছর পর পরিচালনা করতে যাচ্ছি।’

এ প্রসঙ্গে এসএইচকে গ্লোবালের চেয়ারম্যান শামস হাসান কাদির বলেন, ‘আমাদের দেশের কালচার হচ্ছে; আমরা গুণিজনদের সম্মান দেই উনারা আমাদের কাছ থেকে চলে যাওয়ার পর। অথচ উনারা আমাদের মাঝে থাকা অবস্থায়ই উনাদেরকে সম্মান জানানোটা আমাদের উচিত। সেই ধারা চালু করারই প্রথম প্রয়াস আমাদের জীবন্ত কিংবদন্তী সি.বি. জামান স্যারকে আমাদের ‘এডভোকেট সুরাজ’ চলচ্চিত্রের পরিচালক হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা।’

শামস হাসান কাদির আরো বলেন, ‘আমরা শুধু উনাকেই না বাংলাদেশের সিনিয়র পরিচালক, শিল্পী-কলাকুশলীদের একটা লিস্ট করেছি, ধারাবাহিকভাবে উনাদেরকে নিয়ে একসাথে কাজ করবো।’

পরিচালক সি.বি. জামান নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেন ১৯৬৬ সালে লাহোর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর হিসেবে। ১৯৭৩ সাল হতে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সরাসরি চলচ্চিত্র পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ সময়ে তিনি নির্মাণ করেন একে একে ঝড়ের পাখি (১৯৭৩), উজান ভাটি (১৯৮২), পুরস্কার (১৯৮৩), শুভরাত্রি (১৯৮৫), হাসি (১৯৮৬), লাল গোলাপ (১৯৮৯) ও কুসুম কলি’র (১৯৯০) মতো কালজয়ী চলচ্চিত্র। এর মধ্যে ব্যবসায়িক সফলতার পাশাপাশি ‘পুরস্কার’ ১৯৮৬ সালে ৯টি ক্যাটাগরির ভেতরে ৬টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও ‘শুভরাত্রি’ বাচসাস পুরস্কারে ভূষিত হয়।

জাতীয় পুরস্কার পাবার পাশাপাশি পুরস্কার চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের ‘গোয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’, ‘দিল্লী ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ ও রাশিয়ার ‘তাশখান্দ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে’ প্রদর্শিত ও প্রশংসিত হয়। শুধু তাই না, সেইসাথে প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র হিসেবে জাপানের ‘এনএইচকে টিভি’ পুরস্কারের কপিরাইট কিনে নেয় এবং নিজেদের দেশে তা প্রদর্শিত করে।

এছাড়াও তৎকালীন সময়ে তার সহকারীদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজন পরবর্তীতে টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে সফলতার সাথে নিজেদের নাম উজ্জ্বল করেন যার মধ্যে হানিফ আকন দুলাল, সালাহ্উদ্দীন লাভলু, শিল্পী চক্রবর্তী ও জাকির হোসেন রাজু অন্যতম।

এছাড়াও তিনি বেশ কয়েকটি স্বল্প দৈর্ঘ্য ও প্রামান্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, যার মধ্যে ডিএফপি’র ‘নুরুর সমস্যা’ প্রামান্যচিত্রটিতে প্রথমবারের মতো তিনি ক্যামেরার সামনে আনেন আজিজুল হাকিম ও সালাহ্উদ্দীন লাভলু’র মতো অভিনেতাদের।

তিনি কাজ করেছেন অনেকের সাথেই কিন্তু তাদের মধ্যে খান আতাউর রহমান ছিলেন এমন একজন মানুষ যাকে তিনি নিজের গুরু ও সবচাইতে কাছের বন্ধু হিসেবে ভাবেন। ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ থেকে শুরু করে ‘এখনো অনেক রাত’ পর্যন্ত খান আতা’র প্রায় সব ছবিতেই তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন।

শুধু তাই না, খান আতাউর রহমান ও তাহের চৌধুরীকে সাথে নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ‘প্রমোদকার’ চলচ্চিত্র গোষ্ঠী। এই প্রমোদকার নামেই তারা একত্রে পরিচালনা করেন বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ৪ চলচ্চিত্র; ‘ত্রিরত্ন’ (১৯৭৪), ‘সুজন সখী’ (১৯৭৫), ‘দিন যায় কথা থাকে’ (১৯৭৯) ও ‘হিসাব-নিকাশ’ (১৯৮২)।


মন্তব্য করুন