Select Page

৪০ বছর পর স্বীকৃতি পেলেন ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’র গীতিকার

৪০ বছর পর স্বীকৃতি পেলেন ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’র গীতিকার

সিনেমার মাধ্যমে প্রথমে বাংলাদেশ, পরে ভারতে জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’ গানের গীতিকার হিসেবে প্রয়াত সৈয়দ আসাদউদ্দোল্লা সিরাজীর নামে কপিরাইট সনদ দিয়েছে কপিরাইট অফিস। অথচ প্রায় ৪০ বছর ধরে গানটির গীতিকার হিসেবে মনিরুজ্জামান মনির এবং সুরকার আলম খানের নাম ব্যবহার হয়ে আসছিল।

তবে সুরকারের কপিরাইট কার নামে হবে, সে বিষয়টির সুরাহা করা যায়নি। কপিরাইটস অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরীর বরাত দিয়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদন করেছেন দেশ রূপান্তরের পাভেল রহমান।

১৯৮২ সালে এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে ‘প্রাণ সজনী’ চলচ্চিত্রে এ গানটি জনপ্রিয়তা পায়। বর্তমানে বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে গানটির গীতিকার হিসেবে মনিরুজ্জামান মনির এবং সুরকার আলম খানের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে বলে গেল বছরের শুরুর দিকে কপিরাইট অফিসে অভিযোগ করেন আসাদউদ্দোল্লা সিরাজীর উত্তারিকারী সৈয়দা গুলরুখ সিরাজী। তিনি দাবি করেন, গানটি ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত একটি গ্রন্থে সংকলিত রয়েছে এবং আসাদউদ্দোল্লা সিরাজীর মাজারে তার ভক্তরা গানটি নিয়মিত পরিবেশন করেন। প্রমাণ হিসেবে এর একটি ভিডিও চিত্র কপিরাইট অফিসে দাখিল করেন তিনি।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কপিরাইট অফিস মনিরুজ্জামান মনির এবং আলম খানের কাছে ব্যাখ্যা চায়। সেখানে মনিরুজ্জামান মনির গানটির গীতিকার নন বলে স্বীকার করেন। তবে আলম খান লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন, ‘প্রাণ সজনী’ চলচ্চিত্রের পরিচালক ১৯৮২ সালে তাকে গানটির কথাগুলো দিয়েছিলেন। পরে তিনি গানটির সুরারোপ করেন এবং সিনেমাটি ১৯৮৩ সালে মুক্তি পায়। আলম খান গানটির সুরকারের কপিরাইট দাবি করেন।

রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, ‘গানটির গীতিকার হিসেবে যেহেতু মনিরুজ্জামান মনির নিজেই সত্যতা জানিয়েছেন, ফলে গীতিকার হিসেবে প্রয়াত আসাদউদ্দোল্লা সিরাজীকে গীতিকারের স্বত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু আলম খান সুরকারের স্বত্ব দাবি করেছেন। এখন গীতিকারের অনুমতি ছাড়া তো সুর করা যায় না। আসাদউদ্দোল্লা সিরাজী ১৯৬৫ সালে গানটি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে আলম খান দাবি করেছেন, তিনি সিনেমার পরিচালকের কাছ থেকে গানের কথা পেয়ে সুরারোপ করেছেন। ফলে বিষয়টি একটু জটিল হয়ে আছে। এ জন্য কপিরাইট অফিস গীতিকারের কপিরাইট সনদ দিলেও সুরকারের বিষয়টি এখনো মীমাংসা করতে পারেনি।

জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, তথ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে গানটি মূল গীতিকারের অনুমতি ছাড়া ‘প্রাণ সজনী’ চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হয়েছে, যা কপিরাইট আইন অনুযায়ী বৈধ হয়নি। অতএব সিনেমার প্রযোজক কর্র্তৃক গানটি অন্যত্র বিক্রয়, ব্যবহার বা রিমেক করার বৈধ অধিকার নেই। কেউ গানটি ক্রয় করে ব্যবহার করতে গেলে প্রকৃত গীতিকারের অবর্তমানে তার উত্তরাধিকারীদের অনুমতি নিতে হবে। তাদের অনুকূলে কপিরাইট সনদ ইস্যু করা হয়েছে।

এ দিকে বিষয়টি নিয়ে কিছু প্রশ্ন তোলেন গায়ক-গীতিকার-সুরকার হাবিব মোস্তফা। তিনি ফেসবুকে লেখেন—

ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে-

গানের মূল গীতিকার কে?

গানটি মনিরুজ্জামান মনিরর নামে প্রচলিত।কিন্তু গানের মূল গীতিকার সৈয়দ আসাদউদ্দৌলা সিরাজী। তিনি ইসলামী পূণর্জাগরণের কবি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর পুত্র। গানটির মূল গীতিকারের পক্ষ্যে তথ্য প্রমানসহ আমাদের টিম কাজ করেছে বিগত পাঁচ বছর। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে প্রকাশিত আসলাম আহসান সম্পাদিত বাংলাদেশের সিনেমার স্মৃতি জাগানিয়া গান বইয়ে তা সবিস্তারে সন্নিবেশিত রয়েছে। সম্প্রতি আসাদউদ্দৌলা শিরাজীর মেয়ে সৈয়দ গুলরুখ মহল শিরাজী কপিরাইট অফিসে আবেদন করে গানটির গীতিকার হিসেবে তার পিতার নাম লিপিবদ্ধ করেন।

আমার প্রশ্ন:

১. ১৯৮২ সালে প্রকাশিত প্রাণ সজনী সিনেমায় অ্যান্ড্রু কিশোরর কণ্ঠে ব্যবহৃত উক্ত গানের গীতিকার হিসেবে মনিরুজ্জামান মনিরের নাম কীভাবে যুক্ত হলো?

২. যদি ভুলক্রমে উক্ত নাম যুক্ত হয়ে থাকে, তাহলে মনিরুজ্জামান মনির কেন প্রকৃত সত্য প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ ৩৯ বছর সময় নিলেন?

৩. চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত গানের সুরকার হিসেবে আলম খানের নাম ব্যবহৃত হয়েছে।প্রকৃত সত্য হলো: গানটির মূল গীতিকার সৈয়দ আসাউদ্দৌলা সিরাজী একজন সাধক কবি ছিলেন। নিজে লিখতেন, নিজেই সুর করতেন, স্বকণ্ঠে গাইতেন। তিনি মাজারপন্থী সাধক হবার কারণে মাজারে মাজারে তার সুরারোপিত একটি মৌলিক সুরে গানটি গীত হতো। তাহলে উক্ত গানে আলম খানের নামে প্রচলিত সুরের প্রকৃত মালিক কে? এটা কি আসাদউদ্দৌলার করা সুর নাকি আলম খানের মৌলিক সুর? যদি আলম খানের মৌলিক সুর হয়ে থাকে, তাহলে তিনি কি গানের মূল স্রষ্টা আসাদউদ্দৌলার কাছে অনুমতি নিয়ে পুনরায় নতুন সুর করেছিলেন?

সিনেমার বাইরেও ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’ একাধিকবার রিমেক হয়। এর মধ্যে ফুয়াদ আল মোক্তাদিরের সঙ্গীতায়োজনে আনিলার গানটি ভীষণ জনপ্রিয় হয়। এ ছাড়া গান বাংলা চ্যানেলের ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ অনুষ্ঠানে এ গানে পারফর্ম করেন ভারতীয় শিল্পী কৈলাশ খের।


Leave a reply