অঙ্গার: যে ছবিকে দর্শক আপন ভাবতে পারেনি
চরিত্রগুলোর দেশ কোথায়? তাদের ধর্ম কি জাত কি? এটা কি বাংলাদেশ নাকি পশ্চিমবঙ্গের পাহাড় ঘেরা কোন অঞ্চল? কেউ কথা বলে প্রমিত বাংলায় কেউ ঘটি টানে কেউ বা বাঙ্গাল। নাম গুলো শুনতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মত হলেও তারা একবার ও ভগবান বলে না বরং মাজারে যায়। এমন অদ্ভুত সব পরিচয়হীনতায় ভুগেছে দর্শকেরা। কলকাতা ও ঢাকার কোন দর্শকই চরিত্রগুলো আপন ভাবতে পারেনি। ছিল এক তুমুল পরিচয় সংকট। তবে আশিষ বিদ্যার্থীর বাঙ্গাল ভাষা অনেকটা নিজেদের মনে হয়েছিল ঢাকার দর্শকদের।
শুরুটা দারুন ছুয়ে গেছে। কিছুক্ষন দর্শককে ধরে রেখেছিল কাহিনীর প্রাথমিক উত্তেজনা। তারপর সব কিছুই ঝিমিয়ে পড়লো। নায়ক নায়িকা কেউ ই প্রধান হয়ে উঠতে পারিনি। নায়ক বা নায়িকা কাউকেই যথেষ্ট জায়গা দেওয়া হয়নি নিজেকে দর্শকের মনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। পুরো গল্পটাই খাপছাড়া, নায়ক একটা সময়ে আশ্রয়দাতার হত্যকারীকে খুন করতে উদ্দ্যত হয়। আশ্রয়দাতার প্রতি যে তার কোন আবেগ বা ভালোবাসা থাকতে পারে তার কোন যৌক্তিক কারন দেখানো যায় নি। নায়িকার সাথে নায়িকার বাবার দেখা হয় শেষের দিকে। নায়িকার যে পরিবার আছে তা কোন ভাবেই বোঝা যাইনি আগেভাগে। তবে শেষের দিকের বেশ কিছু সিকোয়েন্স এর মধ্য গাঢ়তা ছিল ঠিক যেমন প্রথমে ছিল। মাঝখানের পুরোটা সময় ছিল কেমন অগোছালো, মেকি। গল্পের কোন উল্লেখযোগ্য মোড় নেই। পুরো গল্পটা যেন দর্শক জেনে ছবি দেখতে এসেছে তাই নতুন কিছু দেখতে হয়নি তাকে।
চিত্রনাট্যে পেশাদারিত্বের কোন ছোয়া নেই, খানিকটা দায়সারা ধরনের। ভালো পরিচালক যে সব সময় ভালো চিত্রনাট্যকার হবেন এমন কোন কথা নেই।
বাণিজ্যিক ছবির গান এমন হলে ব্যাবসা করা মুসকিল। গানের চিত্রধারণের কথা না হয় নাই বললাম। আমাদের পাড়ার ছেলেরা এর চেয়ে ভালো মিউজিক ভিডিও নির্মান করে। বাংলা ছবির বাজেটের যে কি দুর্দশা তা গানগুলো দেখলেই সহজে বোঝা যায়। আইটেম গান দেখার সময় মনে হচ্ছিল যাত্রার আসরে বসে আসি। কোরিওগ্রাফী বলে কোন শব্দ আছে তা কিছুক্ষনের জন্য ভুলে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশীদের গাওয়া দুটি গান খুব ভালো না হলেও ভালো হয়েছে। তবে কলকাতার সংগীত পরিচালক আকাশের একই ধারার গানে দর্শক বিরক্ত। সব কিছুকে উতরে ইমনের ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড মন ছুয়ে গেছে।
আউটডোর শুটিং লোকেশন এক কথায় অসাধারন। তবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এক জায়গায় শুটিং না করলে ভালো হতো। ইনডোরের সাজসজ্জা বেশ প্রকৃত মনে হয়েছে, গ্রাম বাংলায় ছোয়া সেখানে পেয়েছি।
সকল অভিনেতা অভিনেত্রী ভালো তবে জলি নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে পারেনি হয়তবা তার জন্য জায়গাটা প্রস্তুত ছিল না। গল্পে নায়ক নায়িকার কোন গুরুত্ব না থাকায় ওম-জলি কেমন অভিনয় করেছে তা কাউকে ভাবাইনি। রজতাভ, খরাজ নিজেদের মত করেছে সবটুকু। তবে আশিষ বিদ্যার্থীর বলা প্রতিটি সংলাপেই ছিল তার দুর্দান্ত প্রতাপের ইঙ্গিত, মাঝে মাঝে হয়ে উঠেছিলেন অঘোষিত নায়ক। বাড়ীর বউঝিদের চরিত্রে যারা ছিলেন তাদের দিকে কেউ লক্ষ্যই করেনি। তবে শেষ দৃশ্য শিরিন বকুল খানিকক্ষনের জন্য হলেও স্তম্ভিত করেছিলেন দর্শকদের।
দৃশ্যধারন মানসম্পন্ন। প্রকৃতিকে এমন বড় ফ্রেমে তুলে ধরা নিতান্তই কষ্টের কাজ ছিল। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পরিচালক যথেষ্ঠ ভালো করেছেন। ছবিটি ভালো ব্যাবসা করবে না তবে টাকা উঠে আসবে আশা করি। এমন ছবিও দরকার আমাদের এই দুঃসময়ে।
আমার রোটিং: ৪/১০
ছবির নাম: অঙ্গার
পরিচালক: ওয়াজেদ আলী সুমন
অভিনেতা/ অভিনেত্রী: ওম, জলি, আশিষ বিদার্থী, রজতাভ দত্ত, খরাজ মুখর্জী প্রমূখ
সংগীত: ইমন সাহা, আকাশ
ব্যানার: জাজ মাল্টিমিডিয়া