Select Page

অজ্ঞাতই থেকে গেল অজ্ঞাতনামা

অজ্ঞাতই থেকে গেল অজ্ঞাতনামা

%e0%a6%85%e0%a6%9c%e0%a7%8d%e0%a6%9e%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be

‘অজ্ঞাতনামা’ ঢাকায় মেইনস্ট্রিম প্রদর্শনীতে খুব বেশী সাড়া ফেলতে পারেনি। অনেক হলে দুই তিন দিন চলার পর নামিয়ে ফেলে। অযুহাত ছিল একই সময়ে আয়নাবাজি মুক্তি পেয়েছিল। কিছু একটা বানিয়ে ফেললেই সিনেমা হয়না। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি বলে একটা পূর্ব ধারণা নিয়ে ছবিটা দেখতে বসেছিলাম। তা হলো কোন অসামঞ্জস্য থাকতে পারে। তবুও তৌকির আহমেদের ছবি বলে আশ্বস্থ ছিলাম -ছবিটি নড়বড়ে হবেনা। ইমপ্রেস তো ইমপ্রেসই। এরা যে ব্যতিক্রম দেখাবেনা তারই প্রমাণ দিল অজ্ঞাতনামায়।

থিম নির্বাচন ভালোই। বিদেশে আদম পাচার সংশ্লিষ্ট। প্রতিটি পাত্র পাত্রী নিজেদের সেরাটুকু দিয়েছেন। কিন্তু ছবির কংকালটাই যেখানে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, সেখানে মাংসের ভূমিকা অপ্রাসংগিক। ভিত্তিমূলটাই ভুয়া হলে বাকিটুকুর কী মূল্য থাকলো? সমসাময়িক প্রেক্ষাপট নিয়ে ছবি বানালে ছবিতেও সমসাময়িকতার প্রেক্ষিতে চরিত্র সংলাপ থেকে কাহিনীর গাঁথুনি সবই সমসাময়িক ওই প্রেক্ষাপট অনুযায়ী যুক্তিযুক্ত হওয়া চাই। এর ব্যত্যয় হলে সেটা মোটা দাগের অযৌক্তিক ত্রুটি হিসেবে চোখে পড়ে।

যেহেতু ছবিটি আজকেই শেষ প্রদর্শনী ছিল এবং আর কোন হলে রিলিজ পাবেনা, তাই সমালোচনার সুবিধার জন্য স্পয়লার যুক্ত একটা উদাহরণঃ মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী ছেলের মৃতদেহ ঢাকা বিমান বন্দর থেকে পুলিশের অনুরোধে ছেলের বাবা গ্রামে নিয়ে আসে। ঘটনাচক্রে প্রমাণ হয় ওই লাশ তার ছেলের নয়। বিদেশ থেকেই ভুলে তার ছেলের লাশের বদলে অন্য কারো লাশ কফিনে ভরে দিয়েছে। কফিন, ডকুমেন্টস সব জায়গায় তার ছেলের নামই লেখা। আরো প্রমাণ হয় তার ছেলে বেঁচে আছে। লাশেই গন্ডগোল।

ছবিতে দেখানো হয় লেটেস্ট মডেলের বাইক, এন্ড্রয়েড ফোন। এমন একটা সময়ে আধুনিক একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার লাশের প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিৎ হওয়ার পরেও গ্রামবাসীদের দিয়ে ওই লাশ আবার ঢাকায় পাঠায়। লাশের বাবা যেখানে নিশ্চিৎ হয়েছেন এই লাশ তার ছেলের নয়। সুতরাং ওই বেওয়ারিশ লাশের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট থানা ই বুঝে নিয়ে যা করার করবে। গ্রামবাসীরা সহায়তা করতে পারে এটুকুই। এখানেই কাহিনী সমাপ্তিযোগ্য। লাশটি ঢাকায় ফেরত পাঠিয়ে লাশের দায়িত্ব নেয়া নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের টানা হেঁছড়া দেখানোর জন্য সেটা অযৌক্তিকভাবে ঢাকা পাঠানো পরিচালকের জরুরী ছিল। কারণ ওই টানাহেঁছড়াতেই কাহিনীর বিস্তার।

ঢাকার মতো জনবহুল শহরে এতো বড় একটা ট্রাকের উপর একটা বিদেশী বেওয়ারিশ লাশ নিয়ে কিছু গ্রাম্য লোক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দৌঁড়ছেন এবং লাশের দায়ভার কোন মন্ত্রণালয় নিচ্ছে না, পাশাপাশি কোন চ্যানেলের সাংবাদিকও এটা কাভার করছেনা, এমনকি ওই পরিস্থিতি গুলোতে ট্রাক ঘিরে স্বাভাবিক উৎসুক জনতার ভিড় হওয়ার কথা- তাও নেই। এটা অবাস্তব একটা ব্যাপার। এই সময় টুকুতে মানুষ মানুষের জন্য, লাশে হিন্দু মুসলমান ভেদাভেদ নেই, সবাই মানুষ- এ ধরনের উচ্চকিত কিছু নীতিবাক্য দিয়ে মূল ফল্টটা ঢাকার ব্যর্থ্য প্রয়াস। বাবার মৃত্যু সংবাদ, কবর খোঁড়া ইত্যাদি একজন ৯ বছরের ছেলের সামনে করলেও সে ৫ বছরের ছেলের মতো কবুতর নিয়ে খেলে, পাতার নৌকা বানিয়ে পানিতে ভাসায়। এখানে আবার আর্ট, মন্তাজ, আবস্ট্রাক্টের কথা বলে এসব জায়েজের সুযোগ নেই। কারণ পরিচালক ছবিটি কী উদ্দেশ্যে বানিয়েছেন তা স্টার্টিং ক্রেটিড লাইন দেখানোর সময় ৫ লাইনের একটি লেখায় সংক্ষেপে বলে দিয়েছেন। লেখাটি পর্দায় ২ মিনিট ব্যাপী ছিল। মানে শুরুতেই স্পষ্ট করেছেন এটা মানব পাচার রোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষেই তৈরি। আর্ট ফর আর্ট সেইক -এমন একটি ধারণা বিকল্প ঘরাণার ছবিগুলোর জন্য বলা হয়। এখানে ওই ধরণের কিছু ব্যর্থ প্রয়াস ছিল- ব্যর্থ একারণে যে ছবির কংকালই ঠিক ছিল না।

তৌকির এখন চট্টগ্রামে ‘হালদা’র শুটিং নিয়ে ব্যস্ত। একটা প্রতিবেদনে দেখলাম তিনি হালদা নদীতে ‘নৌকা বাইচ’ এর শুটিং করছেন। তিনি বোধহয় জানেন না চট্টগ্রাম অঞ্চলে ‘নৌকা বাইচ’ এর কোন সংস্কৃতি কোন কালে ছিল না। এটা মূল বঙ্গ অঞ্চলের কালচার। অঞ্চলভিত্তিক এবং পিরিয়ডিক ফিল্মে এ ধরণের সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলোতে গুরুত্ব না দিলে অনেক ভালো ছবিও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।


Leave a reply