অদূরদর্শী পরিকল্পনায় এনালগ এফডিসি
গত মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। সেই ঘোষণার সিংহ ভাগই বাস্তবায়ন হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু অধরা রয়ে গেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা [বিএফডিসি]। সংস্থাটির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণে ২০১১ সালে একনেকের বৈঠকে ৫৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের অদক্ষতা ও অদূরদর্শী পরিকল্পনার কারণে এখনো ডিজিটাল হয়নি এফডিসি।
অর্থ বরাদ্দের নীতিমালা অনুযায়ী তিন অর্থবছরে তিন কিস্তিতে এ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে হিসেবে প্রথম কিস্তি অর্থাৎ ২০১১-১২ অর্থবছরের টাকা পাওয়া যায় ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে। প্রথম কিস্তির অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মধ্যে দুটি ক্যামেরা কেনার জন্য ধরা হয়েছিল ৬ কোটি টাকা। কিন্তু টেন্ডার ড্রপকারী প্রতিষ্ঠানটির কাগজপত্রে ক্যামেরা ও ডেলসোমিটার মেশিন সম্পর্কে অসামঞ্জস্য তথ্য থাকায় এফডিসি কর্তৃপক্ষ এ দুটি বিষয়ের টেন্ডার বাতিল করে এবং সংশ্লিষ্ট অর্থ সরকারের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
এফডিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, টেন্ডার ড্রপের পরে ক্যামেরা ও ডেলসোমিটার মেশিনের অর্থ বাদ দিয়ে সরকারের কাছ থেকে তিন কোটি ৯০ লাখ টাকার একটি চেক নেওয়া হয়। এ টাকার মধ্যে কালার এনালাইজার মেশিন, প্রিন্টিং মেশিন, মাইক্রোবাস এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ খরচ হয়েছে তিন কোটি ৩৩ লাখ টাকা। বাকি ৪৭ লাখ টাকা ইতোমধ্যে সরকারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
এফডিসির একটি সূত্র জানায়, প্রথম অর্থবছরের টাকা দিয়ে সবকিছু কেনা সম্ভব হতো। কিন্তু বেশ কিছু সমস্যার কারণে ওই অর্থবছরের কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। এসব সমস্যার মধ্যে ছিল এক বছরের স্থলে মাত্র ছয় মাস সময় পাওয়া, হঠাৎ করে দুই দফা এমডি পরিবর্তন, প্রজেক্ট পরিচালক (কারিগরি) সাঈদ নূর আলমের ট্রেনিংয়ে চলে যাওয়া ইত্যাদি। পরে ২০১২-১৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থের পরিমাণ ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এ অর্থ দিয়ে দুটি ডিজিটাল ক্যামেরা, একটি কালার গ্রেড সুট মেশিন, একটি ডিজিটাল এডিটিং মেশিন ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কেনার কথা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় তাও যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়নি।
এ বিষয়ে এফডিসির প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে আর কোনো জটিলতা নেই। চলতি বছরের মধ্যেই এফডিসিকে আধুনিকভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে ডাবিং, প্রিন্টিং মেশিন, লাইট, কালার অ্যানালাইজারের যন্ত্রাংশ এসে পৌছেছে। ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে যন্ত্রাংশগুলো আমদানি করেছে আরটিআই নামক একটি প্রতিষ্ঠান। অল্প সময়ের মধ্যে আসছে ডিজিটাল এডিটিং মেশিন, তিনটি ক্যামেরা ও সেন্টার স্টোর সিস্টেম। এতে ব্যয় হচ্ছে ১১ কোটি টাকা। তিনি জানান, এ মাসের মধ্যেই ওয়ার্ক অর্ডার জমা দেওয়া হবে এবং আগামী তিন মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
প্রকল্প কর্মকর্তা আরও জানান, আগের অর্থ ফেরত গেলেও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আবার ফান্ড রিলিজ করানো হয়েছে। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এফডিসিকে আধুনিক করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এদিকে চলচ্চিত্রকাররা বলছেন, মাত্র ৫৯ কোটি টাকা দিয়ে এফডিসিকে ডিজিটালাইজ করা মোটেও সম্ভব নয়। কারণ নব্বই দশকের শেষ ভাগে যখন এ প্রকল্প পরিকল্পনাটি সরকারের কাছে পেশ করা হয় তখন ডিজিটাল করার কথা এতে উল্লেখ ছিল না। শুধু আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প নামে পরিকল্পনা পত্র জমা দেওয়া হয়। একনেক সেভাবেই অর্থ বরাদ্দ দেয়। এফডিসি কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল পরে প্রকল্প পরিকল্পনাটি সংশোধন করে ডিজিটাল করার জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়া। এখন যা হবে তা হচ্ছে ডিজিটালের নামে জোড়াতালি দিয়ে একটি হ-য-ব-র-ল ব্যবস্থা তৈরি করা। এতে নির্মাতারা উপকৃত হবেন কি-না তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ এ প্রকল্পে ডিজিটাল ব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ পোস্ট প্রোডাকশনের কোনো ব্যবস্থা থাকছে না।
এ বিষয়ে প্রকল্প কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, এফডিসিকে যাতে পূর্ণভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে গড়ে তোলা যায় সে জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে নতুন করে মোট অর্থের অতিরিক্ত ১৭ পার্সেন্ট টাকা বেশি চাওয়া হয়েছে এবং আধুনিকায়নের সময়সীমা ২০১৫ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, মন্ত্রণালয় আমাদের এ প্রস্তাব পাস করলে এফডিসি আর অ্যানালগ থাকবে না।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন