অনন্তের স্বার্থে ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’
বাংলা সিনেমায় অনন্তের আগমন অনেকেই ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ করেনি। সেই থেকে আজ অবধি অনন্তকে নিয়ে সোশাল মিডিয়া থেকে শুরু করে নানা জায়গায় আলোচনা সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। অনেকদিন পর শাকিব খানের বাইরে ঢাকাইয়া বাণিজ্যিক সিনেমার আরেকজন নায়ক মধ্যবিত্ত তরুণদের আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছে। আগে যেখানে কোন বাংলা বাণিজ্যিক সিনেমা নিয়ে আলোচনা ‘খোঁজ-দ্যা সার্চ’ করেও পাওয়া মুশকিল হত এখন সেখানে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো আলোচনা চোখে পড়ছে। আর ঠিক এখানেই অনন্তের গুরুত্ব।
ঢাকার পোলা অনন্তের (ছবিতে ঢাকার পোলা ভেরি ভেরি স্মার্ট শিরোনামে একটা গান আছে। যদিও এক টিভি ইন্টারভিউতে বর্ষা গানটা শুনে অন্য জেলার পোলাদের নাখোশ না হতে বলেছেন) ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা-What Is Love’ চট্টগ্রামে মুক্তি পেয়েছে সিনেমা প্যালেসে। সিনেমা প্যালেস চাঁটগা শহরের বেশ পুরোনো সিনেমা হল। একদিকে বিখ্যাত লালদিঘী ময়দান অন্যদিকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ও বিভাগীয় গ্রন্থাগার, আর একটু গেলেই বিপনী বিতান (স্থানীয় ভাষায় নিউ মার্কেট)। বলা যায় চাঁটগা শহরের গুরুত্বপুর্ণ জায়গায় সিনেমা প্যালেসের রাজকীয় অবস্থান। বাংলা সিনেমার সেই রাম ও রাজ্য কিছুই আর নাই কিন্তু ১৯২৮ সালে থিয়েটার হল থেকে প্রেক্ষাগৃহে রূপান্তরিত হওয়া সিনেমা প্যালেস জরাজীর্ণ প্রাসাদের মত কালের স্বাক্ষী হয়ে এখনও ঠিকে আছে।
দ্বিতল এই হলে আসন আছে হাজার খানেক। আসনগুলো মান্ধাতার আমলের, মাথার উপর ফ্যান চলছে অবশ্যই কিন্তু বাতাস আপনাকে অনুভব করে নিতে হবে। অনন্ত তার সিনেমায় প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে গর্ব বোধ করেন। এটা গর্ব করার ব্যাপারই বটে। কিন্তু এই গর্ব ধারণ করার মত অবকাঠামো কি আমাদের হলগুলোর আছে? প্যালেসে যে দুইটা প্রজেক্টরের মাধ্যমে ছবি দেখানো হয় তা ৫০ বছরের পুরানো! অনন্তের ঘুষিতে ভিলেনের চাইতে দ্বিগুণে কেঁপে উঠে সিনেমার পর্দা। অনন্ত তার কাজ করছেন বাকি কাজ সরকার ও হল কর্তৃপক্ষের।
এবার সিনেমায় আসি। ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’র কাহিনী, সংলাপ এবং পরিচালনা করেছেন অনন্ত নিজে। চিত্রনাট্য লিখেছেন ছটকু আহমেদ। অনন্ত সিনেমাতেও অনন্ত আর বর্ষা হয়ে যায় মেঘলা। দেশের মশহুর সুপার স্টার ও ব্যবসায়ী অনন্তের সাথে পরিচয় ঘটে মডেল হওয়ার খায়েশ নিয়ে শহরে আসা মেঘলার। এরপর অনন্ত নিঃস্বার্থভাবে মেঘলার জন্য বাড়ি-গাড়ি করে দিতে থাকে। অনন্তের জবানে এ ভালবাসা হল নিঃস্বার্থ। অনন্ত কি পারবে এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা শেষ পর্যন্ত বজায় রাখতে? কিংবা মেঘলা কি পারবে অনন্তের এই নিঃস্বার্থ ভালবাসার দাম দিতে?
অনন্তের অভিনয় আগের চাইতে উন্নতি করেছে। যদিও ডায়ালগ ডেলিভারি এখনো দুর্বল। ভাল করার একটা চেষ্টা তার মধ্যে আছে যেটা অব্যাহত রাখতে হবে। ছবির চিত্রায়ন ও একশন দৃশ্যগুলোও ভালই ছিল। বর্ষার অভিনয়ের চাইতে গ্ল্যামারময় উপস্থিতি দিয়ে সিনেমা টেনে নিয়ে গেছেন। ভিলেন চরিত্রে কাবিলা ও মিশা তাদের নামের প্রতি সৎব্যবহার করেছেন। কাবিলা ছবিতে কমেডির অভাব কিছুটা পূরণ করেছেন।
সিনেমাতে গান আছে ৭ টি যা প্রচলিত সিনেমার তুলনায় একটু বেশিই বলা যায়। গানগুলোর কথা, সুর, লোকেশন ও চিত্রায়ন মোটামুটি ভাল বলা যায়। তবে গজল আঙ্গিকের সাজনা গানটা ছিল বেশ শ্রুতিমধুর।
‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’র প্রধান দুর্বলতা এর কাহিনী ও চিত্রনাট্যে। শুরু থেকেই অনন্তের প্রতি মেঘলার ভালোবাসা ঠের পাওয়া যাচ্ছিল। তদুপরি মেঘলার সব চাওয়া-পাওয়া, স্বপ্ন একের পর এক পূরণ করে যাচ্ছিল অনন্ত। মেঘলার প্রতি অনন্তের একাগ্রতারও কোন কমতি ছিল না। তবুও দেখা গেল অনন্তকে ছেড়ে মেঘলা বার বার চলে যাচ্ছে। কেন এই আচরণ মেঘলার? সিনেমাতে এর কোন সদুত্তর খুঁজে বের করা মুশকিল। অনন্তের জবানে অবশ্য একটা জবাব পাওয়া যায়। অনন্ত মদ খায় না তাই মেঘলার এভাবে চলে যাওয়া। মেঘলাকে ফিরিয়ে এনে ক্ষমা করে মহানুভব অনন্ত। এই একই ঘটনা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বার বার দেখানো হয় যা এক সময় দর্শকের বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়ায়। অনন্তের এই মহানুভবতা প্রচারের জন্যই যেন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। অনন্তের ব্যবসাপাতি, সমাজ সেবা, সততা এসব দেখানোই যেন ছিল সিনেমার উদ্দেশ্য। অনন্তের স্বার্থেই এই ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’। তুলনায় মেঘলা চরিত্র একপেশে ঠেলে রাখা হয়। অনন্তের ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ ফুটিয়ে তোলাই ছিল এই চরিত্রের নিয়তি। মেঘলাকে বিকশিত হয়ে উঠার কোন সুযোগই নির্মাতা দেননি।
সিনেমার এক পর্যায়ে দেখা যায় অনন্ত শুটিং করতে গিয়ে পড়ে আহত হন। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়। পুরো সপ্তাহ তাকে হাসপাতালে কাটিয়ে দিতে হয়। হাসপাতালের বেডে দেখা গেল অনন্তের শরীরের এক পাশ দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে যেন কোন ছুরি বা গুলিতে আঘাত পাওয়ার চিহ্ন। এসব অসঙ্গতি একটা সিনেমাকে হাসির খোরাকে পরিণত করে।
শেষ একশন দৃশ্য শুটিং করতে জলিলের আহত হওয়ার খবর ঐ দৃশ্যের নিচে লিখে দেয়া ছিল চরমভাবে দৃষ্টিকটু। উপরন্তু এর ফলে বাস্তবের অনন্তের সাথে সিনেমার অনন্তের ফারাক করার কোন সুযোগ দর্শকদের দেয়া হল না। অবশ্য ছবি মুক্তির আগে থেকেই প্রচার করা হচ্ছিল এটা অনন্তের বাস্তব জীবনের উপর নির্মিত। এখন নিঃস্বার্থ দর্শক যদি অনন্ত-মেঘলার সাথে অনন্ত-বর্ষার দাম্পত্য সম্পর্কে মিলিয়ে ফেলেন, তাতে দর্শকদের খুব বেশি দোষ দেয়া যাবে না।
অনেক সময় অসঙ্গতিপূর্ণ কাহিনীও দর্শকদের কাছে উপভোগ্য করে তোলা যায়। দর্শকরা সে সব সিনেমা গ্রহণও করে। বলিউডে এরকম অনেক সিনেমা আছে যা সুপার ডুপার হিট হয়। বাংলা সিনেমা এখনো এ পর্যায়ে যায় নাই। ভাল বাংলা সিনেমা যা দেখে দর্শকরা বিনোদিত হবে, উপভোগ করবে এমন সিনেমার বানানোর পথে ফের যাত্রা শুরু করেছে এই দেশের সিনেমা। বাংলা সিনেমার দুর্দিনে বিশাল পুঁজি, উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে অনন্তের আগমন এই যাত্রার ‘স্পিড’ বাড়াবে বলেই আমার ধারণা।
অনন্তের ছবিতে এই বিষয়টা নিয়ে দর্শকরা খুব একটা কথা বলেন নি, আমার চোখে পড়েছে প্রথম স্পষ্ট করে বলেছিলেন একুয়া রেজিয়া । এই রিভিউটা তুলনামূলক ভাবে ভালো বিশ্লেষণ করেছে – কারিগরী বিশ্লেষণের পাশাপাশি এ ধরনের রিভিউ-ও প্রয়োজন। ধন্যবাদ লেখককে।
Ame Mode Hotey Chai.Amar Sopno Ame Actor Hovo.please Accepet Me..Apnader Movie Amar Valo lage.Ame Movie Pagol Akta Boy.Ame movie dekhe Sopne Nayok Hoye jai..Amar Sopno Please Amake Help Me Kebabe Ame Amar Sopno Puron Korte Pari.I love you Dhallywood.Bangla movie..Boss Always Miss You.