Select Page

অনুদান নাকি বলিদান!

অনুদান নাকি বলিদান!

image_1354_375793বছর গড়ালেই সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু দীর্ঘ হচ্ছে না মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির তালিকা। সরকারি অনুদান নিয়ে এক ধরনের লাপাত্তা হয়ে যাচ্ছেন পরিচালক। কেউ কেউ মাঝপথে শুটিং আটকে বসে আছেন। কালের কন্ঠ পত্রিকায় এসবের ফিরিস্তি  লিখেছেন খায়রুল বাসার নির্ঝর। তথ্যবহুল লেখাটি বিএমডিবি-র পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে দেয়া হলো-

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম খোকন বলছিলেন, ‘আমার জানামতে নীতিমালায় উল্লেখ আছে, চলচ্চিত্রে অনুদান পেতে হলে পরিচালকের কমপক্ষে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু এ নীতি কবে থেকে পরিবর্তন হলো কে জানে! দুই-তিন বছর ধরে যাঁরা অনুদান পেয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই চলচ্চিত্র পরিচালনায় কোনো অভিজ্ঞতা নেই।’ তাঁর এই অভিযোগের একটা যৌক্তিক ভিত্তি আছে। ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত সরকারি অনুদান পেয়েছে প্রায় ৩০টি চলচ্চিত্র। কিন্তু মুক্তির তালিকা দেখলে হতাশ হতে হবে। এক-চতুর্থাংশ ছবিও প্রেক্ষাগৃহের মুখ দেখেনি এ পর্যন্ত। শুটিং শেষ হয়েছে এমন ছবির সংখ্যাও খুব কম। বেশির ভাগ পরিচালকই অর্ধেক শুটিং করে বসে আছেন। অনেকে তো এখনো সেটাও শুরু করতে পারেননি। একটু খোঁজ নিলে জানা যাবে, যেসব পরিচালক অনুদান নিয়ে বসে আছেন, তাঁদের প্রায় সবারই চলচ্চিত্র পরিচালনায় কোনো পূর্বাভিজ্ঞতা নেই। ‘বিশেষ ক্ষমতাবলে’ তাঁরা অনুদান পেয়ে যান এবং ছবি না বানিয়ে বছরের পর বছর এই টাকা আটকে রাখেন।

২০০৯ সালে যে ছয়টি ছবি অনুদান দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে সজল খালেদেরকাজলের দিনরাত্রি‘ এবং নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর ‘গেরিলা‘ মুক্তি পেয়েছে। ‘ছেলেটি’ টাইটেলের একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্রের নির্মাণকাজ শেষ করে বসে আছেন সামিয়া জামান। মুক্তির কোনো খবর নেই। একই বছর অনুদানপ্রাপ্ত আখতারুজ্জামানের ‘সূচনা রেখার দিকে’, কাজী মোরশেদের ‘একই বৃত্তে’ এবং ‘বেলাল আহমেদের ‘অনিশ্চিত যাত্রা’র অবস্থা একেবারেই অনিশ্চিত। এই পরিচালকরা এখনো শুটিংই শুরু করতে পারেননি। তবে এর আগের বছর ২০০৮ সালের অবস্থা মোটামুটি ভালো। এ বছরের মোট তিনটি ছবির মধ্যে মোরশেদুল ইসলামের ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ও শাহাজাহান চৌধুরীর ‘মধুমতি’ হলের মুখ দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। কিন্তু জুনায়েদ হালিমের ‘স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের গল্প’ ছবিটি যেন আসলেই একটা দুঃস্বপ্ন! পরিচালক এত দিনে দৃশ্য ধারণ শুরু করতে পারেননি। এখন তাঁর ‘দুঃস্বপ্ন’ কবে নাগাদ সুস্বপ্নে রূপান্তরিত হবে, সেই শুভক্ষণের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো গতি নেই।

২০১০ সালে অনুদান পাওয়া ছয়টি ছবির মধ্যে দুইটি মোটামুটি এগিয়ে আছে অন্যদের তুলনায়। পিএ কাজলের ‘মুক্তি’ ও নির্মলেন্দু গুণের গল্প অবলম্বনে মাসুদ পথিকেরনেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ‘-এর শুটিং শেষ হয়েছে। আগামীকাল থেকে মুরাদ পারভেজ তাঁর ‘বৃহন্নলা’ ছবিটির শুটিং শুরু করতে যাচ্ছেন। বাকিগুলো মানিক মানবিকের ‘শোভনের স্বাধীনতা’, সেলিনা হোসেনের উপন্যাস অবলম্বনে ফারুক হোসেনের ‘কাকতাড়ুয়া’- এই ছবিগুলোর ভাগ্যেও চরম দুর্দশা। অনুদানপ্রাপ্তির পর অনেক দিন কেটে গেলেও কোনো সাড়াশব্দ নেই এসব ছবির পরিচালকদের।

২০১১ সালের ছবিগুলোর অবস্থা মোটামুটি আশাতীত। অনুদানপ্রাপ্ত চারটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবির মধ্যে তিনটির শুটিং শেষ হয়েছে। এ তালিকায় আছে তানভীর মোকাম্মেলেরজীবনঢুলি‘, গাজী রাকায়াতের ‘মৃত্তিকা মায়া’ ও দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘হেডমাস্টার’। মারুফ হাসান আরমানের ‘নেকড়ে অরণ্যে’র কোনো খবর নেই। একই অবস্থা প্রশান্ত অধিকারীর ‘হাডসন এর বন্দুক’ ও ‘সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকীর ‘একা একা’ শিশুতোষ চলচ্চিত্র দুটির। গত বছর অনুদান পাওয়া সাতটি ছবির মধ্যে একমাত্র শাহ আলম কিরণ তাঁর ‘একাত্তরের মা জননী’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে হাত দিতে পেরেছেন।

সময়মতো ছবি জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন এমন কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁরা ছবির বাজেটকে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্তু সরকার এখন প্রতিটি চলচ্চিত্রের জন্য ৩৫ লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছে। ২০১০ সালের আগে এই অর্থের পরিমাণ ছিল ২৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া এফডিসি থেকে ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়। এই কারিগরি সহায়তা নিয়ে পরিচালকদের অভিযোগ আছে। এখনকার ডিজিটাল চলচ্চিত্রের যুগে এফডিসির সেকেলে প্রযুক্তি কোনো কাজে লাগাতে পারেন না তাঁরা।

চলচ্চিত্র অনুদানসংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা এবং পরিচালক- এই দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মাঝপথে অপচয় হচ্ছে দেশের কোটি কোটি টাকা। যে উদ্দেশ্য নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ২০০৭ সাল থেকে আবার সরকারি অনুদানের প্রথা চালু করা, তা পূরণ হওয়া তো দূরের কথা! উল্টো এক বিরাট অঙ্কের অর্থের বলিদান করা হচ্ছে! জানতে চাইলে বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় দিলেন দায়সারা জবাব, ‘এ বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যেই মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। নির্ধারিত দিন পার হয়ে যাওয়ার পরও যাঁরা এখনো ছবি জমা দেননি, তাঁদের খুব শিগগিরই নোটিশ করা হবে।’ প্রশ্ন থেকেই যায়, আসলেই কি এই সমস্যার কোনো সমাধান হবে? সরকারের লগ্নি করা কোটি কোটি টাকার উপকার পাবে জনগণ?

শহীদুল ইসলাম খোকন বললেন, ‘এভাবে অল্প অল্প অনুদান ছয়-সাতটি ছবির জন্য না দিয়ে বড় বাজেটের একটি অথবা দুটি ছবি হাতে নিলে দর্শক ভালো কিছু পেত। তা ছাড়া স্ক্রিপ্ট দেখে ছবি বাছাই করার যে প্রথা, সেটি বন্ধ করা উচিত। মেকিং ভালো না জানলে তো ভালো স্ক্রিপ্ট দিয়েও কোনো লাভ হবে না। আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, আমাদের চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির কোনো প্রতিনিধি অনুদান কমিটিতে নেই। সব কিছু নিয়েই আমরা তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি, খুব শিগগিরই একটা সমাধান আসবে।’

সুত্র: কালের কন্ঠ


Leave a reply