অপূর্ব নির্মাণ ‘মায়াশালিক’
ধীরলয়ে শুরু হওয়া একটি খুব সাধারণ কিন্তু একই সাথে দ্রুতই ভালো লাগতে শুরু করা প্রেমকাহিনী শুধুমাত্র সময়কাল পরিবর্তনের কারণে কতটা জটিলভাবে রহস্য আর রোমাঞ্চে ভরা জার্নিতে নিয়ে যেতে পারে তার জলজ্যান্ত প্রমাণ বিঞ্জে রিলিজ পাওয়া শিহাব শাহীনের ওয়েবফিল্ম ‘মায়াশালিক’।
হলিউড, কোরিয়ান, বলিউড বা দক্ষিণী সিনেমায় এমন কনটেন্ট নিয়ে কাজ দেখার সুযোগ হলেও আমাদের এখানে এমন কাজের সংখ্যা খুবই কম সেই হিসেবে অপূর্ব এবং সাদিয়াকে নিয়ে ভালবাসার ভিন্নরকম গল্পের ‘মায়াশালিক’ নিঃসন্দেহে উপভোগ্য একটি ওয়েব ফিকশন।
শুরুটা খুব সুন্দর আর সরল তাই গল্প বুঝতে বা গল্পের সাথে রিলেট করতে আমাদের কোনো অসুবিধা হয়না। একটি অ্যাক্সিডেন্টে পঙ্গুত্ব বরণ করা আর্মি অফিসার অভি কিছু সময় একাকী থাকা এবং একটা গল্প লেখার ইচ্ছা থেকে হাজির হয় কোলাহল থেকে দূরে সবুজে ঘেরা একটি বাগান বাড়িতে। বাড়ির মালিক বেশ কিছুদিনের জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। তাই নিজের মতো করে সেখানেই থাকতে শুরু করেন অপূর্ব। এক বৃষ্টিভেজা দিনে রং নাম্বারের একটা ফোনকল গল্পের গতি অন্যদিকে নিয়ে যায়। অভির জীবনে আবির্ভাব ঘটে সারার। একটি চঞ্চল, স্নিগ্ধ তরুণী সারার সাথে ফোনালাপেই ভালোবাসা তৈরী হয় অভির…
এরপর গল্প যতো এগোয় আমাদের মুগ্ধতা বাড়ে। অভি আর সারার জীবনে এরপরে কি ঘটে সেটা জানতে হলে দেখতে হবে ‘মায়াশালিক’। তবে অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যতের মাঝে যোগসূত্রের ওপর ভিত্তি করে বেশকিছু ফিকশন আমাদের দেখা হবার কারণে কখনো কখনো ‘মায়াশালিক’-এর গল্প একটু আকটু চেনা বা জানা মনে হলেও শিহাব শাহীনের নির্মাণশৈলীর ওপর ভর করে বেশ ভিন্নধর্মী হিসেবে মেনে নিতে কষ্ট হয়না। সঙ্গে সাবলীল সংলাপ, অসাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, মন এবং চোখে প্রশান্তি এনে দেয়া সিনেমাটোগ্রাফি, শ্রুতিমধুর গান সবমিলিয়ে ‘মায়া শালিক’ রোমান্টিক ঘরানার এই সময়ের অন্যতম সুন্দর নির্মাণ।
এই গল্পে ল্যান্ডফোনের প্রেম এসেছে, এসেছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ এবং তার লেখা পড়া অসংখ্য তরুণ-তরুণীর অনুভূতি।
অপূর্ব নিঃসন্দেহে রোমান্টিক ঘরানার ফিকশনে এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত এবং জনপ্রিয় অভিনেতা। তবে মোটামুটি একই রকমের গতানুগতিক গল্পতে তার অভিনয় মাঝে বেশ বিরক্তি এনে দিলেও ‘মায়াশালিক’ সাম্প্রতিক সময়ের তার সেরা কাজ সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। অভি হিসেবে স্ক্রিনে নিজের দক্ষতা দিয়ে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন তাকে কেনো রোমান্টিক কিং বলা হয়ে থাকে।
এই ফিকশনে যার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ এবং অবাক করেছে তিনি সাদিয়া আয়মান। সারা চরিত্রের মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন নব্বই দশকের সেই স্নিগ্ধ এবং লাবণ্যময়তায়। সাধারণ, সাবলীল এবং সহজাত অভিনয় দিয়ে তিনি স্ক্রিনে জাদু ছড়িয়েছেন বললে ভুল হবেনা। সামনের দিনে তিনি বৈচিত্র্যময় অভিনয়ে আরো মুগ্ধতা ছড়াবেন সেটাই কাম্য। শহীদুজ্জামান সেলিম, ইমতিয়াজ বর্ষণ বা টুনটুনি সোবহান যতটা সময় পেয়েছেন নিজেদের ছাপ রেখেছেন।
ওয়েবফিল্মটি ভালো লাগার অন্যতম কারণ অসাধারণ সুন্দর লোকেশন, কামরুল ইসলাম শুভর সিনেমাটোগ্রাফি এবং সাদাত হোসাইনের লেখা কথায় সন্ধির মিউজিক। এই যুগলবন্দীর রেশ থেকে যায় অনেকটা সময়। চিত্রনাট্যকার জাহান সুলতানা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
শিহাব শাহীন আমাদের দেশের অন্যতম সেরা রোমান্টিক ঘরানার নির্মাতা একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তবে এই নির্মাতা ওটিটি যুগে ‘আগস্ট ১৪’ বা ‘সিন্ডিকেট’-এর মতো পুরোপুরি ভিন্নধারার নির্মাণে যেমন চমকে দিয়েছেন তেমনি আবারো ১ ঘন্টা ৫৪ মিনিট ব্যপ্তির ‘মায়াশালিক’ দিয়ে প্রমাণ করলেন কেন এই ঘরানায় এখনো তিনি অনন্য! সময় থাকলে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বিঞ্জে দেখে নিতে পারেন দুই সময়কালের যোগসূত্রের প্রেমের গল্পটি।