অভিনেত্রী শিমু হত্যা: যা জানা গেল
ঢাকার কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে সোমবার দুপুরে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশটি বস্তায় ভরে ফেলে রাখা হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। কে বা কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। তার অপমৃত্যুর খবর দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে চলচ্চিত্র অঙ্গনে।
মনে করা হচ্ছিল, ২৮ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নির্বাচনে এটি ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে।
এমনিতে শিমু বেশ কয়েক বছর ধরে চলচ্চিত্র সূত্রে আলোচনায় ছিলেন না। করোনার মধ্যে হঠাৎ এই চিত্রনায়িকাকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদসদ্যপদ হারানো ১৮৪ জনের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে সোচ্চার হতে দেখা গেছে। তিনি ছিলেন ভোটাধিকারবঞ্চিত চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক। ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে এফডিসির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন অন্য সহকর্মীসহ।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ভোটাধিকার হারানোর ক্ষোভে ফেসবুক আর ইউটিউবে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদককে নিয়েও নিজের মতামত জানিয়েছিলেন শিমু। চলচ্চিত্রে লম্বা সময় ধরে কাজ না করলেও ছোটপর্দায় তাকে দেখা যেত।
তবে পুলিশ শিমু হত্যার রহস্যা উদঘাটন করেছে বলে জানায়। তার স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। অভিনেত্রীর লাশ গুম করতে বন্ধু ফরহাদ সহায়তা করেছেন নোবেলকে।
মঙ্গলবার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সরদার। পুলিশ বলছে, দাম্পত্য কলহের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ আরও জানায়, গত রোববার সকাল সাতটা থেকে আটটার মধ্যে যেকোনো সময় শিমুকে হত্যা করা হয়। যে গাড়ি ব্যবহার করে শিমুর লাশ গুমের চেষ্টা করা হয়েছে, সে গাড়ি জব্দ করে থানায় নিয়েছে পুলিশ। অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।
সোমবার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী রমজানুল হক বলেন, লাশটি টুকরা করে দুটি বস্তায় ভরে ফেলে রাখা হয়। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত শিমুর গলায় একটি দাগ রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
১৯৯৮ সালে বরেণ্য পরিচালক কাজী হায়াতের ‘বর্তমান’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে শিমুর ঢালিউডে অভিষেক ঘটে। একই পরিচালকের ‘মিনিস্টার’ নামের আরেকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। প্রথম চলচ্চিত্রে তাকে চিত্রনায়ক মান্নার বোনের চরিত্রটি দেন কাজী হায়াৎ। আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে তিনি এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানালেন, মান্নার অনুরোধে শিমুকে চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ দিয়েছিলেন।
দুই দশক আগে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করা শিমু একটানা ছয় বছর পর্যন্ত কাজ করে গেছেন। এই সময়টায় তিনি অনেক প্রতিষ্ঠিত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। সে তালিকায় আরও আছেন চাষী নজরুল ইসলাম, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, এ জে রানা, শরিফুদ্দিন খান, এনায়েত করিম, শবনম পারভীন। মান্না ছাড়াও অভিনয় করেছেন রিয়াজ, অমিত হাসান, বাপ্পারাজ, শাকিব খান, জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিমসহ অনেক গুণী ও জনপ্রিয় অভিনেতার বিপরীতে।
শিমু সর্বশেষ ২০০৪ সালে ‘জামাই শ্বশুর’ ছবিতে অভিনয় করেন। এরপর তাঁকে আর চলচ্চিত্রে অভিনয়ে দেখা না গেলেও টিভি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতে দেখা যায়।
শিমুর ফেসবুকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বিপণন বিভাগে কাজ করার পাশাপাশি একটি প্রোডাকশন হাউস পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ব্যবসায়ী সাখাওয়াত আলীমের সঙ্গে তার বিয়ে হয় ২০০৪ সালে। তাদের ঘরে দুই সন্তান।
সূত্র/ প্রথম আলো