Select Page

আগাগোড়াই দুর্দান্ত ‘ইনসাফ’

আগাগোড়াই দুর্দান্ত ‘ইনসাফ’

ডিজিটাল সময়ের কমার্শিয়াল ছবির জগতে পারফেক্ট বিনোদন দিতে পারার মতো পরিচালক হাতেগোনা কিছু এসেছে যাদের ছবি দেখে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা যায়। সঞ্জয় সমাদ্দার তাদের একজন হয়ে উঠলেন। চলচ্চিত্রে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল টলিউডে জিতের প্রোডাকশনে ‘মানুষ’ ছবিতে। ঢালিউডে তাঁর প্রথম কমার্শিয়াল ছবি হয়ে গেল ‘ইনসাফ’। এখানে প্রথম ছবিতেই তিনি দুর্দান্ত এক কমার্শিয়াল ছবি উপহার দিয়েছেন।

‘ইনসাফ’ আগাগোড়াই দুর্দান্ত ছবি। ট্রেলার দেখে অনেকে ভেবেছিল শুধুই ভায়োলেন্স কিন্তু না এতে স্ট্রং গল্প, রোমান্স, মন খারাপ করে দেয়া মুহূর্ত, পারফেক্ট ফিনিশিং, আনএক্সপেক্টেড ক্যামিও এসব মিলিয়ে দুর্দান্ত কম্বিনেশন তৈরি করা হয়েছে।

এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী ইউসুফের কেস নিয়ে তুলকালাম পরিস্থিতি দিয়ে ছবির গল্পের শুরু। তারপর ক্রমাগত সেখান থেকে অন্যায় ও নিপীড়নের শিকার একটি পরিবারের অসহায়ত্ব এবং ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রলয়ঙ্করী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার সাসপেন্স।

শীর্ষ সন্ত্রাসী ইউসুফের চরিত্রে শরিফুল রাজ অ্যাকশন অবতারে হাজির। শাকিব খানের ‘অরা’-র পর রাজের বডি ল্যাংগুয়েজ বলে দেয় পরবর্তী ‘অরা’ হয়ে ওঠার সব গুণ তার মধ্যে আছে। অ্যাকশন সিকোয়েন্সে জাস্ট মাইন্ডব্লোয়িং অভিনয় তার। শুধু কি তাই! কান্নার অভিনয় যেটি ডিজিটাল সময়ের বেশিরভাগ নায়কের ক্ষেত্রে দুর্বলতার মধ্যে থেকেছে রাজ সেখানেও রিয়েল ভাইব দিতে সক্ষম। তার ক্যারিয়ার গ্রাফে এখন পর্যন্ত যা আছে তাতে পরিণত একজন অভিনেতার ছাপ সুস্পষ্ট পাশাপাশি ‘ইনসাফ’-এ নায়কোচিত পারফেকশনে হাজির।

রাজের পরেই নবাগত তাসনিয়া ফারিণ ছবির দ্বিতীয় সেরা পারফর্মার হয়ে উঠেছে। এন্ট্রি সিনেই নায়িকা হিসেবে তাকে পাশমার্ক দেয়া যায়। গোয়েন্দা পুলিশের চরিত্রে ফারিণ মানিয়ে গেছে এবং অভিনয়েও পরিণত ও অভিজ্ঞ ছাপ রয়েছে। মনেই হবে না এটি তার প্রথম ছবি।

তৃতীয় যে চরিত্রকে বলতে তা হলো মোশাররফ করিম। ছবিতে তার পরিচয় ‘বিশ টাকার ডাক্তার’ কিন্তু এই বিশ টাকার ডাক্তার কি করতে পারে তা দর্শকের ধারণার বাইরে, ছবি দেখে জেনে নিতে হবে। মোশাররফ করিমকেও অ্যাকশনে মারাত্মকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তার চরিত্রটিকে ওভারঅল বিশেষ চরিত্রে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

চতুর্থ আসে ফজলুর রহমান বাবুর চরিত্র। তাকে বাবা চরিত্রে ইমোশনাল করে তুলে ধরা সম্ভবত সহজ কারণ তিনি দরদ দিয়ে বাবা চরিত্রকে ধারণ করেন। রাজ-বাবু বাবা-ছেলের বেস্ট মুহূর্ত ছিল রাজ ফুলকপির বড়া খেতে পছন্দ করত বাবু তাকে ভেজে দেয় আর রাজ কাঁদতে কাঁদতে খেতে থাকে যখন পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়েছে। দুজনের তখনকার অভিনয় ছিল হার্ট টাচিং। এরপর আসবে মিশা সওদাগরের চরিত্র। টিপিক্যাল ভিলেন ইমেজের বাইরে গিয়ে নিজেকে তুলে ধরাটা তার চরিত্রে নোটিশ করার মতো। ভয়ঙ্কর ভিলেন হয়েও তার কমিক ডায়লগ ছবিতে ভালো কমেডি যোগ করেছে। বাদবাদি সব চরিত্র এ চরিত্রগুলোকে দাঁড় করানোর উপাদান বলা যায়।

ছবির বিজিএমের কথা না বললেই নয়। অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলোতে অসাধারণ বিজিএম ছিল স্পেশালি শরিফুল রাজের অ্যাকশন টাইমে। ফারিণের ইন্টারোগেশনের সময়ও বিজিএম নোটিশ করার মতো ছিল।

ডায়লগ এ ছবিতে মিক্সড ক্যাটাগরির ছিল। পরিস্থি অনুযায়ী একাধিক ডায়লগ মনে ধরে।

শরিফুল রাজ –

১. ‘ইউসুফদের জন্ম দেয়া যায় না ওরা তৈরি হয়।’

২. ‘এ লাইনে একটাই অপশন মৃত্যু না হয় মাফিয়া, মাঝামাঝি কোনো অপশন নাই।’

৩. ‘বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করছে ভালো কাজ করছে কিন্তু অসম্মানিত হয় নাই এমন একটা মানুষ দেখান তো।’

মিশা সওদাগর –

১. আমি সুশীল শাহীন, বাসা নিকেতন।

২. ইউসুফ হইল ক্ষণিকের পোলা, নিজে মইরা গিয়া অনেকের ইনকামের ব্যবস্থা কইরা গেছে।

মোশাররফ করিম—

সব খারাপ লোকগুলো দেশের ভালো জায়গায় বসে আছে। সিস্টেম পাল্টাতে হবে। আমলাদের মানুষ করতে হবে। এরা টাকা কামাবে গরিব মেরে আর সামান্য সর্দিকাশিতে বিদেশ যাবে চিকিৎসা করতে আর গরিব মরবে বিনা চিকিৎসায়। ওদেরকেও দেশেই চিকিৎসা নিতে বাধ্য করতে হবে তাহলে ওরা বুঝবে বাকিদের কষ্ট।

ছবির গানের মধ্যে আইটেম সং ‘আকাশেতে লক্ষ তারা ২.০’ ইতোমধ্যে আলোচিত হয়েছে। তাসনিয়া ফারিণের পারফরম্যান্স দারুণ ছিল। রাজ ও মোশাররফও গানটিতে ভূমিকা রেখেছে। হাবিবের ‘তোমার খেয়ালে’ রোমান্টিক গানটি প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়া টাইটেল ট্র্যাকও এনার্জেটিক ছিল।

জেফারের কালারফুল উপস্থিতির গানটিও ভালো ছিল।

‘ইনসাফ’ ছবির নামকরণই ছবিটিকে ভিন্নতা দিয়েছে। যেখানে কোনো চরিত্রকে প্রধান আমি আপনি বানিয়ে দিতে পারব হয়তো কিন্তু গল্পের ডিমান্ড অনুযায়ী মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে গল্পই এর নামকরণকে আমূল বদলে দিয়েছে। সমাজই যেখানে সমাজকে চ্যালেঞ্জ করছে ‘ইনসাফ’ দিতে। এটাই এ ছবির বিশেষত্ব।

রেটিং – ৮/১০


About The Author

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

Leave a reply