আমাদের সিনেমাগুলো এত সুন্দর যে সত্যিই মুগ্ধ হয়ে যাই: প্রধানমন্ত্রী
সীমিত সুযোগ ও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকলেও এগুলোর মধ্যেই নির্মিত হওয়া বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকে ভূয়সী প্রশংসায় ভাসিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি চলার পথে বা কারও কাছ থেকে সিনেমাগুলো পেলে সেগুলোও আগ্রহভরে দেখে নিজেকে চলচ্চিত্রপ্রেমী হিসেবে দাবি করেন তিনি। খবর ঢাকা ট্রিবিউন।
বুধবার (২৩ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২০-এ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি জানি সুযোগটা খুব সীমিত। তার মধ্য দিয়ে প্রোডাকশনগুলো এত সুন্দর হয়, আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়ে যাই।”
সিনেমার প্রতি নিজের ভালোবাসার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যদিও আমি হলে যেয়ে সিনেমা দেখতে পারি না। মাঝে মাঝে প্লেনে যখন যাই, তখন সবসময় আমি আমাদের দেশের সিনেমাগুলো দেখি। অনেকে সিনেমা করে আমাকে পেনড্রাইভে পাঠান, সেটাও আমি দেখি। আমার ভালোই লাগে আমার দেশের সিনেমাগুলো দেখতে।”
তিনি আরও বলেন, “শিল্প-সাহিত্যের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের জন্য আমাদের বাসা সব সময় উন্মুক্ত ছিল। ধানমন্ডি লেক কাটা হয়েছে, আমরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসায়। তখনও বাড়িটা সম্পূর্ণ হয়নি। কিন্তু লেকের পাড়ে অনেক সময় অনেক শুটিং হতো। সেখানে অনেক শিল্পীরাই আসতো এবং তাদের বসার জায়গাটা ছিল আমাদের বাড়ি। আমার মা নিজের হাতে তাদের চা-নাস্তা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন এবং উৎসাহ দিতেন।”
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “সিনেমা শিল্প একটা সময় খুবই বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া, করোনাভাইরাস মহামারির সময় চলচ্চিত্রক্ষেত্র যে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা যেহেতু কোভিড মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি, আমি চাই এ শিল্পটা আরও গড়ে উঠুক। শিল্পী, কলা-কুশলী সবাই যাতে সুযোগ পায় সে জন্য ট্রাস্ট ফান্ড তৈরি করে দিয়েছি। আমরা সিড মানির ব্যবস্থাও করেছি।”
চলচ্চিত্রের উন্নয়নে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে ও ট্রাস্ট ফান্ড তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বলেন, “আমি চাই যারা বিত্তবান তারা বেশি করে এই ফান্ডে টাকা রাখেন। আমাদের বহু চিত্রশিল্পীরা যখন বয়োঃবৃদ্ধ হয়ে যান, অসুস্থ হয়ে পড়েন সকলের করুণ অবস্থা হয়। আমি সরকারে থাকি আর বিরোধী দলে থাকি সবসময় খোঁজ-খবর রাখতাম। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি সবাইকে সহযোগিতা দিতে। বিপদে-আপদে তারা যেন চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা পেতে পারেন, সেজন্য এ ফান্ড করেছি।”
আধুনিক যুগে চলচ্চিত্রের উন্নয়নের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যদিও এখন তথ্য-প্রযুক্তির যুগ, আমাদের সিনেমা শিল্পটা আসলে অনেকটা সেই অ্যানালগ সিস্টেমেই রয়ে গিয়েছে। সেটাকে আমি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন করতে চাই। মানুষের বিনোদনের সুযোগ সিনেমা। তারা দেখতে চান। যারা মালিক তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তাদের সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আসলে মাঝখানে একটু ভাটা পড়ে যাওয়াতে অনেকে সেই উদ্যোগে ছিল না। এখন আমরা ১ হাজার কোটি টাকার আলাদা ফান্ড তৈরি করে রেখেছি। আমি চাই আমাদের জেলা-উপজেলা সব জায়গায় সিনেপ্লেক্স নির্মাণ হোক। যেখানে যেন আধুনিক প্রযুক্তিতে চলচ্চিত্র দেখানো যায়।”
শেখ হাসিনার ভাষ্যমতে, চলচ্চিত্রে জীবন দর্শন প্রকাশ পায়। ইতিহাসের বার্তাবাহক চলচ্চিত্র। তাই বিনোদনের সঙ্গে শিক্ষামূলক নির্মাণে উৎসাহ দিয়ে নির্মাতাদের প্রতি তার আহ্বান, “বিনোদনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ সংস্কার, মানুষকে শিক্ষা দেওয়া, মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা এবং দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া—চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে আহ্বান জানাবো, আমাদের স্বাধীনতা অর্জন, আমাদের গণমানুষের যে আত্মত্যাগ এবং আমাদের এগিয়ে চলার পথ যেন মানুষের কাছে আরও ভালোভাবে উপস্থাপন হয়। মানুষ যেন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে পারে এবং আমাদের নতুন প্রজন্ম যেন নিজেদের জীবন আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে। সেভাবেই শিল্পগুলো তৈরি করে আপনারা মানুষের সামনে উপস্থাপন করবেন।”