আমি, তুমি, সে সবাই ‘প্রেম পিয়াসী’
এমন অনেক লোকজনের সাথে আপনার অামার দেখা সাক্ষাৎ হয় যারা বলে প্রেম তারা জীবনে করেনি কিংবা তারা প্রেম পছন্দ করে না। ইউটিউবে ‘সবার জীবনে প্রেম অাসে’ গানের একটা লিংকে দেখেছিলাম একজন লিখেছে ‘এটা ফালতু গান, সবার জীবনে প্রেম অাসে না।’ তার জীবনে কখনো নাকি অাসেনি তাই সে গানটিকে গ্রহণ করতে পারেনি। অাক্ষেপ করে বলা অাসলে। ঘটে কিন্তু এটাই যেখানে প্রেম সবার জীবনেই অাসে।সেটা গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই প্রথম দেখা মেয়েটি কিংবা যাকে দেখে ভালো লাগার পরেও কখনো বলা হয়নি যে তাকে ভালো লাগত। মেয়েটি হয়তো খেয়াল করত অাবার সময়ের ব্যবধানে ভুলে যেত। অনেকদিন বাদে দেখা হলে সে মেয়েটি রাহুল দেব বর্মনের ‘রুবি রায়’ গানের মতো বলত ‘তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি।’
প্রেম এভাবেই অাসে বলা বা না-বলায়।লোকে সবাই ‘প্রেম পিয়াসী‘, স্বীকার করুক বা না করুক। প্রিয় নায়ক সালমান শাহর ‘প্রেম পিয়াসী’ সিনেমাটি প্রেমের চিরন্তন সেই অাকাঙ্ক্ষা থেকেই বানানো। নির্মাতা রেজা হাসমত-এর অসাধারণ কাজ। প্রিয় জুটি সালমান শাহ-শাবনূরের স্মরণীয় সিনেমা।
‘মনে যারে চায়
তারে কি ভু্লিতে পারি লোকেরও কথায়’
গানের এ কথাগুলো কিন্তু এমনি এমনি আসে নি। আমরা যে যেখানে থাকি না কেন, যে যেই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করি না কেন অামাদের বন্ধু-বান্ধব-সহপাঠী বা অন্যান্যদের মধ্যে প্রেম করা ছেলেমেয়ের অভাব নেই। ছেলেমেয়ের প্রেম তাদের অভিভাকরা মেনে নেয় না এটাকে অনেকেই চট করে সিনেমাটিক বলে দিলেও এটাই সত্য। ঘটেই যাচ্ছে এ ঘটনা।মা-বাবা মেনে না নেয়াতে তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিয়ে নেয়। এর বাইরে ধর্ম-সমাজ-রাষ্ট্রের বাধাও থাকে।তখনও জুটিগুলো নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেয়।এর পুরোটাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত গড়ায়। তাই রোমিও-জুলিয়েটকে শেকসপিয়র মৃত্যুতেই পরিণতি দেন। বলিউডের ‘ইশাকজাদে’ সিনেমার অর্জুন-পরিণীতি জুটির পরিণতিও মুত্যুতে গড়ায় এবং তা মর্মান্তিক। সিনেমার অাগে যশরাজ ফিল্মসের প্রোডাকশন একটা জরিপের খবর দেয় যেখানে বলা হয় প্রতিবছর ভারতবর্ষে এমন আত্মহত্যাকারী প্রেমের জুটির সংখ্যা অনেক।
সালমান-শাবনূর জুটির প্রেম এ সিনেমায় ধর্মের বাধা পাশাপাশি সমাজ-সংসারের বাধা। এ বাধাকে কাটানোর শক্তি অাসলে মা-বাবাদের পক্ষেও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই সিদ্ধান্তের বিষয়টাতে সময় বেশি লাগে বা না চাইলেও বাস্তবতার কারণে অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করে। এসময় দুটো ঘটনা ঘটে –
* বাধ্য হয়ে নিজেদের স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে অন্যকে বিয়ে করে
* অন্যকে বিয়ে করাটা প্রতারণা ভেবে নিজেকেই শেষ করে
এর মধ্যে পরেরটাই ঘটে বেশি। আর এর বাইরে অার একটা ঘটনা ঘটে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করে পরে যা হয় হবে এই ভেবে। এ সিনেমায় তা ঘটেনি। অাত্মহত্যাই ঘটেছে। ধর্ম অালাদা হওয়ায় সালমান-শাবনূর দুজনই অাত্মহত্যা করে। বিয়ের দিন শাবনূর সাত পাকে বাঁধা পড়ার পরে নিজেই গলার মালা ছিঁড়ে নিজের ঘরে এসে বিষক্রিয়ার ট্যাবলেট অনেকগুলো গিলে মুখে রক্ত নিয়ে মরে যায় বাবা রাজিবের কোলে। সালমানের মা অানোয়ারা শাবনূরদের বাড়িতে শেষ পর্যন্ত গিয়েছিল নিজের লাজলজ্জা বিসর্জন দিয়ে ছেলের জন্য রাজিবের সাথে কথা বলতে। কিন্তু কাজ হয়নি। ফিরে এসে ঘরে ঢুকতেই আনোয়ারার চোখ দুটো বড় বড় হয়। ছেলে সালমানের লাশ তখন সিলিং ফ্যানে ঘুরপাক খাচ্ছে। বুকফাটা অার্তনাদে ফেটে পড়ে মা অানোয়ারা। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। শেষে দেখা যায় স্বর্গে হাত ধরে হাঁটছে স্বর্গীয় সালমান-শাবনূর।
যারা অাজো ভালোবাসার জন্য ধর্মের ভয়, লোকলজ্জা, সমাজ-সংসারের চাপানো নিয়মের সাথে যুদ্ধ করে ভালোবাসতে জানে, নিজেদের সংগ্রামে ঘর বাঁধতে জানে, ভালোবাসার জন্য মরতে পারে তাঁরা প্রেম পিয়াসী।যারা তাদের দেখে ভালোবাসতে চায় বা কাউকে ভালোবেসে জানাতে পারেনি তারাও প্রেমপিয়াসী।
সিনেমায় সালমান শাহ-র সিলিং ফ্যানে ঝুলে থাকার সময়টাতে চোখ ভিজে যাবে সালমানের বাস্তব পরিণতির সাথে মেলানোর সময়।হত্যাকারীরা সালমানকে হত্যা করে সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে দিয়েছিল।এদেশের প্রেমপিয়াসী মানুষ তখন সিনেমার মতোই মা অানোয়ারার সাথে একটা অদেখা দৃশ্যের কল্পনাকে সঙ্গী করে ডুকরে কেঁদেছে।
সালমানকে মেরে ওরা ভুল করেছে কারণ ওরা জানে না মরে গিয়ে আরো জীবিত হয়ে উঠেছে এবং অমরত্ব পেয়েছে অজস্র ভক্ত হৃদয়ে।
ধন্য সেই প্রেমপিয়াসী সালমান…