Select Page

আশিকীঃ বিনোদনের পূর্নাঙ্গ প্যাকেজ, কিন্তু…

আশিকীঃ বিনোদনের পূর্নাঙ্গ প্যাকেজ, কিন্তু…

Aashiqui-2পেছন থেকে দেখেই ফারিয়াকে পছন্দ হয়ে যায় অংকুশেরফারিয়া তো আরও ধাপ এডভান্স। অংকুশের ‘বড় মন’ এর প্রমাণ পেয়ে তার শুধু পছন্দই হয় না, দেশে ফোন করে মাকে হবু জামাইয়ের কথা জানানোও হয়ে যায়। দুজনের প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয় ট্রেনে, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ স্টাইলে, স্টাডি ট্যুরে যাওয়ার পথে। সেখানে স্বভাবসুলভ দুজনের খুনসুটি দিয়ে শুরু। তারপর নানা মজাদার ঘটনার পরে প্রেম। তারপরই মূল কাহিনীর শুরু। তাদের দুজনের মিল হওয়া অসম্ভব, কারণ অংকুশের সাথে ফারিয়ার ‘দাদা’র পূর্ব শত্রুতা। কি নিয়ে সেই শত্রুতা আর সেই শত্রুতা অংকুশ ফারিয়ার ‘আশিকি‘কে কোথায় নিয়ে যায়, তা নিয়েই কাহিনী ‘আশিকি’র।

কাহিনীতে নতুনত্ব নেই। তারপরও যেভাবে কাহিনী এগিয়েছে সেটা ভালো ছিল। রোমান্টিক স্টোরি, তাই নায়ক নায়িকার প্রেম ও রোমান্সকে বেশ সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অংকুশ ফারিয়ার অন স্ক্রিন কেমিস্ট্রি উপভোগ্য ছিল। কাহিনীবিন্যাস ভাল ছিল। প্রথম অর্ধ জুড়ে শুধুই ননসেন্স কমেডি আর রোমান্স। এ অংশ সবশ্রেণির দর্শককেই কমবেশি বিনোদন দেবে। ইন্টারভাল পয়েন্টটা আগ্রহ উদ্দীপক। ইন্টারভালের পর কিছুটা ফ্ল্যাশব্যাক। এটাই কাহিনীর কি পয়েন্ট। তারপর আবারও কিঞ্চিত নভেলটি, কিছুটা একশন, কিছুটা কমেডির মাধ্যমে কাহিনীর একটা অনুমিত ক্লাইম্যাক্সের দিকে এগিয়ে যাওয়া। তবে এই অংশের কমেডি কিছুটা হলেও সেন্সিটিভ ছিল, এবং কাহিনীর এগিয়ে চলায়ও কমবেশি অবদান রেখেছে। সবমিলিয়ে আড়াই ঘন্টা দর্শককে বিনোদন দেয়ার মালমসলা ভালোই ছিল। তবে সবখানে দর্শকের আগ্রহ ধরে রাখতে পেরেছে, এমনটা বললে ভুল বলা হবে।

সংলাপও যথেষ্ট বিনোদনদায়ক ছিল। অংকুশের সামর্থ্য ও তার স্ট্রং পয়েন্টগুলো মাথায় রেখে সংলাপ দেওয়া হয়েছে। এবং অংকুশের লাউড অভিনয়ে এবং কিছু সত্যিকারের ভাল ফিজিক্যাল এক্সপ্রেশনে সেগুলো চমৎকারভাবে উৎরে গেছে। কিন্ত কথা হল, সংলাপে হিন্দি ইংরেজির ব্যবহার অত্যধিক বেশি। ব্রিটেনের পটভূমিতে কাহিনী, তাই ইংরেজির ব্যবহার মেনে নেয়া যায়। কিন্তু এত হিন্দি কেন? যতই সাবটাইটেল দেয়া থাকুক নিচে, এটা স্রেফ মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশী সেন্সর বোর্ডে নাকি বাংলা ও ইংলিশ ছাড়া অন্য ভাষা গ্রহনযোগ্য না। তাহলে হিন্দি টাইটেলের, এত এত হিন্দি সংলাপওয়ালা এই ছবি সেন্সর বোর্ডের বাধা পেরোল কিভাবে? কারও কাছে কি কোন সদুত্তর আছে?

গান মোটামুটি ছিল। ‘বৃষ্টি ভেজা’ গানটা সুন্দর ছিল, কিন্তু ছবির মাঝে এর বিভিন্ন সিনের কাটা পড়াটা খারাপ লেগেছে। গানের শুরুর দিকে স্লো মোশনে হাত ধরে অংকুশ ফারিয়ার হেঁটে যাওয়ার দৃশ্যটা অনেক ভাল লাগে। ওটা কেন বাদ দেয়া হল কে জানে! এছাড়া কাহিনীর সিচুয়েশনের সাথে দারুণভাবে মিলে যাওয়ায় ‘টোপর মাথায় দিয়ে’ গানটা সাময়িকভাবে হলেও দর্শককে আনন্দ দেবে।

ডিরেকশনেও নতুনত্ব কিছু তেমন ছিল না। তবে যেহেতু পুরোটাই ব্রিটেনের বিভিন্ন জায়গায় শ্যুট করা, লোকেশনের সর্বোচ্চ সেরা ব্যবহারটা করা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সেটায় সফল ‘আশিকি‘। সবমিলিয়ে একটা স্মার্ট প্যাকেজ ছিল। নবাগতা নুসরাত ফারিয়ার থেকে ভাল কাজই আদায় করে নিয়েছেন ‘ডিরেক্টরদ্বয়’।

এবার আসা যাক অভিনয়ে। অংকুশ অভিনেতা হিসেবে হয়ত খুব বেশি ভাল না কিন্তু একজন কমার্সিয়াল হিরো হিসেবে তাকে ফুল মার্ক দেয়াই যায়। বাংলাদেশের শাকিব খান বা কলকাতার জিৎ-দেবদের মত হয়ত তার এখনো পর্দায় ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ ইমেজ তৈরি হয়নি তবু নিজের লিমিটেড সক্ষমতার মাঝেই অংকুশ সাধারণ দর্শকদের আকর্ষণ করতে পারেন। তার অভিনয় মোটামুটি, তবু অনস্ক্রিন প্রেজেন্সের জোরে প্রতিটি দৃশ্যই জমিয়ে দিতে পেরেছেন। আর ছবির লো পয়েন্টের দৃশ্যগুলোকেও অন্তত ঝুলে যেতে দেননি। তারপরও বলতেই হয়, তার অভিনয়ে দেখার মত নতুনত্ব কিছু ছিল না। তার কলকাতার ছবিগুলোর কথা ছেড়েই দিই, এ দেশে মুক্তিপ্রাপ্ত আগের দুই ছবির অংকুশের সাথেও এই অংকুশের বিন্দুমাত্র তফাৎ নেই।

এবার আসি নুসরাত ফারিয়ার ব্যাপারে। যতটা খারাপ তিনি করবেন বলে অনুমান ছিল, তারচেয়ে ভালই করেছেন তিনি। কিন্তু আলাদা করে উল্লেখযোগ্য কিছু পাইনি তার অভিনয়ে। হ্যাঁ, কনফিডেন্স লেভেল হয়ত অন্য আর দশটা নবাগতার চেয়ে বেশিই ছিল। তবে আশানুরূপভাবেই তার ডায়লগ ডেলিভারী হতাশাজনক। ছবির সিকোয়েন্সের সাথে সাথে বাচনভঙ্গি পরিবর্তনের বিষয়টি একেবারেই ছিল না। বাংলা সংলাপ আর কয়টাই বা বলেছেন, তবে সেগুলোর উচ্চারণ ইংলিশ মিডিয়াম ধাঁচের হলেও শুদ্ধ ছিল এটাই যা আশার কথা। সবমিলিয়ে অভিনয়ে শুরুটা তার মোটামুটি ভালই হয়েছে, কিন্তু এখনো বহুপথ পেরুনো বাকি। অন্যান্য চরিত্রভিনেতা সবাই-ই ভাল ছিলেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রাজার অভিনয়। অংকুশের পাঞ্জাবি বন্ধুর অভিনয়ও নজর কেড়েছে। একটি বিশেষ চরিত্রে মৌসুমীকে ভালই লেগেছে। কিন্তু ক্লাইম্যাক্সে তার অনুপস্থিতিই বুঝিয়ে দেয় পরিচালকদের কাছে তার চরিত্রটা কতটা অগুরুত্বপূর্ণ ছিল। মৌসুমীর সাথে ফারিয়া কিংবা ফারিয়ার বাবা-মার কি একবারও দেখা করিয়ে দেয়া যেত না?

শেষ করার আগে একটু অন্য বিষয়ে কথা বলি। আমার শোনা মতে এ ছবির খরচ নাকি পুরোটাই জাজ করেছে। তারপরও মৌসুমী বাদে প্রধান চরিত্রাভিনেতাদের মধ্যে এ দেশের কেউ নেই কেন? কন্ঠশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশি কয়েকজনের নাম থাকলেও ছবিতে তাদের কাজ অনুপস্থিত কেন? নায়ক নায়িকা দুজনের চরিত্রই ভারতীয় কেন? এবং আরও একবার বলছি, বাংলা ছবির নাম হিন্দি ভাষায় কেন আর সংলাপেও হিন্দির এত বাহুল্য কেন?

যাইহোক, মোটের উপর আশিকি ভাল ছবি। ঝকঝকে প্রিন্ট, মনোমুগ্ধকর লোকেশন, মোটামুটি ভাল কাহিনী, ভাল প্রচারনা – এইসব কিছুর বদৌলতে ‘দেশপ্রেমিক’ হওয়ার সুযোগ নষ্ট করে দর্শক হলে যেতেই পারে। এবং দেখার পর ‘দেশের শত্রু’ বিবেচিত হওয়ার আশংকা মাথায় রেখেও যদি তারা আশিকিকে পয়সা উসুল ছবি দাবি করে, তাদের উপর হা রে রে রে বলে গালি বর্ষনে ঝাঁপিয়ে পড়ার কোন যুক্তি আমি দেখি না।


Leave a reply