ইমপ্রেসের বাইরে এবার অস্কার যাত্রা
অস্কারে বিদেশি ভাষা বিভাগে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো সিনেমা নিয়ে বিতর্ক বেশ আগে থেকেই। প্রায় বছরই ইমপ্রেস টেলিফিল্মের সিনেমা এ উৎসবে যাচ্ছিল। সমালোচনাও কম হচ্ছিল না। এবার যাচ্ছে জাজ মাল্টিমিডিয়া ও কলকাতার এসকে মুভিজের ‘ডুব’, পরিচালনা করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তবে প্রশ্ন উঠতেই পারে প্রতিযোগিতায় থাকা ‘কমলা রকেট’ কি এ সিনেমার চেয়ে দেশের শিল্প-সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব বেশি করে না? হোক না ইমপ্রেসের সিনেমা।
‘ডুব’ ৯১ তম অস্কারের আসরে বিদেশি ভাষার প্রতিযোগিতায় লড়াই করার জন্য বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত হয় গত রোববার। রাজধানীর এক রেস্তোরাঁয় এই ছবির নাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের অস্কার কমিটি।
জাগো নিউজ জানায়, প্রশ্ন উঠেছে, যৌথ প্রযোজনার ছবি হিসেবে ‘ডুব’-কে অস্কারের জন্য নির্বাচন করা কী বৈধ না অবৈধ? অন্য দেশের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মিত ছবি অস্কারে পাঠানোর নিয়ম আছে কী? অনেকে এ দাবিও করছেন, যৌথ প্রযোজনার ছবিকেই কেন বেছে নেয়া হলো অস্কারের জন্য? দেশের একক প্রযোজনার কোনো ছবি কী যোগ্যতা রাখেনি? এসব প্রশ্নকে ঘিরে জমে উঠেছে তর্ক-বিতর্ক।
অবশ্য, এই বিতর্ককে দোষও দেয়া যায় না। এমনটাই মনে করেন ‘ডুব’ ছবির বাংলাদেশি প্রযোজক জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই অভিজ্ঞতাটা প্রথম। এর আগে কখনো বাংলাদেশ থেকে যৌথ প্রযোজনার কোনো ছবি অস্কারে পাঠানো হয়নি। তাই এটা নিয়ে কথা হবেই। অনেকেই এই নিয়মের ব্যাপারে জানেন না। তবে আমি নিশ্চিত করে বলছি যৌথ প্রযোজনার ছবি অস্কারের জন্য অযোগ্য নয়। আর সেটা জেনেই আমরা ছবিটি জমা দিয়েছিলাম।’
এদিকে অস্কারের নীতিমালা ঘেঁটেও দেখা গেল যৌথ প্রযোজনার ছবির জন্য অস্কারে কোনো নিশেধাজ্ঞা নেই। অস্কারের নীতিমালায় ১৩ নম্বর নীতিটি বিদেশি ভাষার ছবির প্রতিযোগিতার জন্য। সেখানে বেশ কিছু বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া আছে। তবে কোথাও বলা নেই যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত কোনো ছবি যোগ দিতে পারবে না।
এছাড়া নীতিমালার নির্দেশনায় উল্লেখ আছে, অস্কারে যে ছবিটি পাঠানো হবে সেটি অবশ্যই ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে মুক্তি দিতে হবে। সেই যোগ্যতার প্রশ্নেও পাশ মার্ক পেয়েছে ‘ডুব’। আনুষ্ঠানিকভাবে ছবিটি ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছিলো। কিন্তু অস্কারকে মাথায় রেখে ছবিটি ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ভোলার একটি সিনেমা হলে ‘ডুব’ মুক্তি দেয়া হয়েছিলো। বেশ গোপনেই করা হয়েছিলো কাজটি। দর্শককে হলে আনা উদ্দেশ্য ছিলো না। ছবিটি যে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই মুক্তি দেয়া হয়েছে সেই সার্টিফিকেট পাওয়াই ছিলো মূল উদ্দেশ্য।
‘ডুব’র এই গোপন মুক্তি নিয়ে সমালোচনাও হয়েছিলো। সংবাদও প্রকাশ হয়েছিলো বিভিন্ন গণমাধ্যমে। সমালোচনা যাই হোক, ছবিটি সেপ্টেম্বরে মুক্তি পেয়েছে সেই প্রমাণ দেখিয়েই অস্কারে যাবার জন্য অনুমতি পেয়েছে।
এদিকে রোববার সিনেমার বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে নির্মাতা ফারুকী বলেন, “চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার যে বিষয়টা সেটা হলো, পৃথিবীর সব দেশই তাদের সেরা ছবিটা অস্কারে পাঠানোর জন্য মনোনীত করে। এর মধ্যে ত্রিশ-চল্লিশটা ছবি আসে যেগুলো মেজর অ্যাওয়ার্ডস পেয়ে এসেছে, হলিউড রিপোর্টার, ভ্যারাইটিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বগণমাধ্যমে যাদের ভূয়সী প্রশংসা এসেছে। এ ছবিগুলোর যে কোন ছবিই কিন্তু নমিনেটেড হতে পারে। সেখানে একটি ক্যাম্পেইন প্রচার করতে হয়, যাতে একাডেমীর ভোটাররা ছবিটা সম্পর্কে জানতে পারে, এবং ছবিটা দেখে। এ ধরণের ক্যাম্পেইন আমরা তো বাংলাদেশ থেকে কখনো করি না। তারেক ভাই (তারেক মাসুদ, নির্মাতা) হয়তো খুব সামান্য কিছু করেছিলো ‘মাটির ময়না’ চলচ্চিত্রের জন্য। আমাদের প্রযোজক সেটা করে কিনা দেখি।”
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সিনেমার একটা ক্রমউন্নয়ন দেখা যাচ্ছে গত আট-দশবছর ধরেই। আমার বিশ্বাস এটা সামনের দিকে আরও উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হবে। আজ হোক কাল হোক কোন না কোন সময় আমরা তো নমিনেশন পাবোই।’
‘ডুব’-এ লেখক জাভেদ হাসানের চরিত্রে ইরফান খান, সাবেরি চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশা, নিতু চরিত্রে পার্ণো মিত্র এবং মায়া চরিত্রে রোকেয়া প্রাচী অভিনয় করেছেন। সহ-প্রযোজক হিসেবে আছেন ইরফান খান।
২০০২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত মোট ১২টি চলচ্চিত্র পেশ করা হয়। এর মধ্যে কোনটিই চূড়ান্ত মনোনয়ন লাভ করতে পারেনি। সর্বশেষ তিন বছরে গেল বছর অস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল সরকারি অনুদানের ছবি ‘খাঁচা’ ছবিটি। ২০১৬ সালে নির্বাচিত হয়েছিলো তৌকীর আহমেদের ‘অজ্ঞাতনামা’ এবং ২০১৫ সালে পাঠানো হয়েছিলো ‘জালালের গল্প’ ছবি।
আগামী বছরে ২৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের হলিউডের ডলবি থিয়েটারে দেওয়া হবে ৯১তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস। প্রতিবারের মতোই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে দ্য একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস।