ইলিয়াস কাঞ্চন সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন মালেক আফসারী
দুইদিন আগে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র পরিচালক মালেক আফসাী সুপারষ্টার ইলিয়াস কাঞ্চন সম্পর্কে ফেসবুকে একটা মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজেকে বড় করার চেষ্টা করতে দেখলাম। বিষয়টি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সোনালী যুগের একজন খুব সাধারণ দর্শক হিসেবে দৃষ্টিকটু লাগলো।
টেলিভিশন চ্যানেলে ইলিয়াস কাঞ্চন ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত মালেক আফসারি পরিচালিত ‘পাসওয়ার্ড’ সম্পর্কে কি মতামত দিয়েছেন সেটা সম্পুর্ন ভিন্ন বিষয়। ইলিয়াস কাঞ্চনের মতামত / পরামর্শ মালেক আফসারি সাহেব গ্রহণ করবেন কি করবেন না সেটা একান্তই মালেক সাহেবের বিষয় কিন্তু উনি সেই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনকে উনার পরিচালিত দুটো সিনেমার কথা উল্লেখ করে নতুন প্রজন্মের দর্শকদের কাছে ইন্ডাস্ট্রির একসময়ের ১নং নায়ক সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছিলেন সেটা সম্পুর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। মালেক সাহেবের কথা প্রসঙ্গে কিছু বলতে কথা আজ বলতেই হচ্ছে।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সাদাকালো ও রঙ্গিন চলচ্চিত্রের সোনালি সময়ের নিয়মিত একজন দর্শক আমি। সপরিবারের সিনেমা হলে সিনেমা দেখার শুরু আমার আর শেষটা হয়েছিলো বন্ধুদের সাথে দলবেঁধে সিনেমা দেখার মধ্য দিয়ে। দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ধরে এমন কোন সপ্তাহ নেই যে সিনেমা হলে যাইনি।
সেই সময়ের একজন নীরব সাক্ষী হিসেবে আমি ইলিয়াস কাঞ্চন ও মালেক আফসারী দুজনকেই চিনি। ইলিয়াস কাঞ্চন তাঁর অভিনয়ের দক্ষতা দিয়ে দর্শক ,সমালোচক, প্রযোজক, পরিচালক সবার মন জয় করেছিলেন বলেই তাঁকে সেইসময় ‘সুপারষ্টার’ উপাধি দেয়া হয়েছিলো। রোমান্টিক, সামাজিক অ্যাকশন, ফোক ফ্যান্টাসি, ফ্যামিলি ড্রামা সব ধরনের গল্পের সিনেমাতেই ইলিয়াস কাঞ্চন সফল হয়েছিলেন। তাঁর অভিনীত ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ সিনেমাটি আজও চলচ্চিত্রের ইন্ডাস্ট্রির ১নং ব্যবসা সফল সিনেমা হয়ে আছে।
মালেক আফসাী উনার ফেসবুক পোস্টে উনার নির্মিত ‘মৃত্যুর মুখে’ সিনেমার নাম উল্লেখ করে বলেছিলেন যে এই সিনেমা দিয়েই নাকি ইলিয়াস কাঞ্চন রাজা বাদশাহ /ফোক ফ্যান্টাসি সিনেমার নায়ক থেকে অ্যাকশন হিরোর ইমেজ গড়েছিলেন যা শতভাগ ভুল তথ্য। কারণ ‘মৃত্যুর মুখে’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিলো ১৯৯৭/৯৮ সালের শেষ দিকে অথচ তারও বহু বছর আগে থেকেই ইলিয়াস কাঞ্চনের অসংখ্য অ্যাকশনধর্মী সিনেমা মুক্তি পেয়েছিলো এবং সফলও হয়েছিলো।শিবলি সাদিকের ‘ তিন কন্যা’, ‘আদেশ’, ‘মর্যাদা’, ‘নীতিবান’, ‘দুর্নাম’, ‘দংশন’, ‘খুনী আসামী’, ‘মা মাটি দেশ’, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘শর্ত’, ‘স্বাধীন’, ‘আম্মা’, ‘স্বাক্ষর’, সোহানুর রহমান সোহানের ‘বেনাম বাদশা’, ‘বিদ্রোহী কন্যা’, ওয়াকিল আহমেদের ‘সৎ মানুষ’, মনতাজুর রহমান আকবরের ‘চাকর’, সিদ্দিক জামাল নান্টুর ‘ভাংচুর’, ‘গোলাগুলি’, বিকেডির ‘পাষাণ’, শওকত জামিলের ‘ আসামী গ্রেফতার’, শহিদুল ইসলাম খোকনের ‘কমান্ডার’, আজিজুর রহমান বুলির ‘বাপবেটা ৪২০’, ‘লালু সর্দার’, দোয়েলের ‘বিক্রম’, এস আলম সাকির ‘হত্যা’ এর মতো অ্যাকশন সিনেমাগুলো ছাড়াও ‘রক্তের বদলা’, ‘হাতকড়া’, ‘সোহরাব রুস্তম’, এম এ মালেকের ‘দুর্নীতিবাজ’, কাজী হায়াতের ‘সিপাহী’, সৈয়দ হারুনের ‘চরম আঘাত’, ‘দরদী সন্তান’, ‘শেষ রক্ষা’, নুর হোসেন বলাইয়ের ‘এই নিয়ে সংসার’, ‘আমার আদালত’, ‘মহাগ্যাঞ্জাম’, ‘মাটির কসম’, এম এম সরকারের ‘আত্নবিশ্বাস’, ‘অবলম্বন’, ‘অগ্নিসাক্ষর’, ‘আত্নরক্ষা’, ‘আত্নপ্রকাশ’ এর মতো আরও অসংখ্য অ্যাকশন, সামাজিক অ্যাকশনধর্মি সিনেমাগুলো আমি নিজেই সেই সময় সিনেমা হলে দেখেছিলাম। উপরে উল্লেখিত অধিকাংশ সিনেমাই ৯০ দশকের কিন্তু তারও আগে থেকেই বড় পর্দায় ইলিয়াস কাঞ্চন অ্যাকশন হিরো হিসেবে দারুন সফল ছিলেন। ইলিয়াস কাঞ্চন তাঁর নিজস্ব একটা ইমেজ গড়ে তুলেছিলেন যার সাথে সেইসময়কার অন্য নায়কদের তুলনা করা হতো না। আলমগির, রাজ্জাক, রুবেল ,সোহেল রানা, মান্না, জাফর ইকবাল ,জসিম এর যেমন সিনেমাগুলোর জনপ্রিয়তা ছিলো ইলিয়াস কাঞ্চনের একক নায়ক হিসেবেও সিনেমাগুলোর জনপ্রিয়তা ছিলো ব্যাপক, বরং তাঁর সিনিয়র জাফর ইকবাল, ওয়াসিম,উজ্জল, সোহেল রানার চেয়েও জনপ্রিয়তায় তিনি ছিলেন এগিয়ে।জাফর ইকবালের একক নায়ক নায়ক/ প্রধান নায়ক হিসেবে সিনেমা যেখানে ছিলো অল্পসংখ্যক সেখানে ইলিয়াস কাঞ্চনের একক/প্রধান নায়ক হিসেবে সিনেমা পাওয়া যাবে।অসংখ্য।
সালমান-সানীর মতো নতুন প্রজন্মের নায়কদের সেরা সময়েও ইলিয়াস কাঞ্চন একের পর এক ব্যবসা সফল সিনেমা উপহার দিয়ে গিয়েছিলেন। উপরে উল্লেখিত অনেক সিনেমা সেই সময়ের। সেই সময়ের এমন কোন পরিচালক পাওয়া কষ্ট হবে যে যার পরিচালিত সিনেমায় ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনয় করেননি। প্রায় সব সিনিয়র পরিচালকদের সিনেমায় ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনয় করে সফল হয়েছিলেন। তাই মালেক আফসারীর ‘মৃত্যুর মুখে’ সিনেমা দিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের নতুন করে অ্যাকশন নায়ক হিসেবে ইমেজ গড়ার কোন প্রয়োজন ছিলো না বা হয়নি। বরং ইলিয়াস কাঞ্চনের ইমেজ ও জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে মালেক আফসারীর মতো অনেক পরিচালক সিনেমা নির্মান করে সফলতা পাওয়ার চেষ্টা করতেন।
এবার আফসারী সম্পর্কে একটু ধারণা দেই, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির ‘মাষ্টার মেকার’ খ্যাত এ জে মিন্টুর সহকারি হিসেবে মালেক আফসারি সিনেমা পরিচালনার সাথে যুক্ত হোন। পরবর্তীতে ‘ঘরের বউ’ সিনেমা দিয়ে পুর্ন পরিচালক হিসেবে তিনি সিনেমা নির্মান শুরু করেন। এরপর ‘রাস্তার রাজা’, ‘গীত’, ‘ধনি গরীব’, ‘ক্ষতিপূরণ’, ‘ক্ষমা’, ‘ঘৃনা’ ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘দুর্জয়’ এর মতো দারুন কিছু চলচ্চিত্র নির্মান করে সবার নজর কাড়েন। মালেক আফসারির ‘ক্ষতিপূরণ’ সিনেমাটি আমার খুবই প্রিয়। এই মালেক আফসারি অশ্লীল যুগে ‘মৃত্যুর মুখে’, ‘ মরণ কামড়’, ‘হিরা চুনি পান্না’ নামের কয়েকটি অশ্লীল সিনেমা নির্মান করে সমালোচিত হয়েছিলেন যা উনার মতো সিনিয়র পরিচালকের কাছ থেকে দর্শকরা আশা করেনি ।
মালেক আফসারীর মতো সিনিয়র পরিচালকদের কাছ থেকে দেশের একজন সুপারস্টার বা জনপ্রিয় নায়কের সম্পর্কে ভুল তথ্য দিলে সেটা নতুন প্রজন্ম বিশ্বাস করলেও মিথ্যা কখনও সত্য হয়ে যাবে না। আফসারী সাহেব মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজেকে জাহির করতে গিয়ে উল্টো নিজেই এখন অপমানিত বোধ করছেন কিনা আমি জানিনা, তবে আশাকরি উনি আগামীতে এই ধরনের মিথ্যা তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকবেন এবং নিজের সম্মানটা ধরে রাখার চেষ্টা করবেন।
……..
মালেক আফসারী লিখেছিলেন- ‘ইলিয়াস কাঞ্চন সাহেব আমার মনে হয়না আপনি কখনো শাকিব খানের ছবি দেখেছেন। প্লিজ পাসওয়ার্ড হলে যেয়ে দেখেন। আমার উপর বিশ্বাস রাখেন, আপনার ভালো লাগবে।
আমাকে বিশ্বাস না করার কোনো কারন’ও নাই আপনার। কেননা আমি সেই পরিচালক যে “মৃত্যুর মূখে” ও “দূর্জয়” ছবি দিয়ে আপনার কেরিয়ার আরো উজ্জ্বল করেছিলাম।
ইমনকে ট্রেলারে রাখবো না মাথার উপর রাখবো তা পরিচালকের ব্যাপার।
শকিব খান’কে প্রশ্ন করে কেনো বিব্রতকর অবস্থায় ফেললেন লাইভ পোগ্রামে? ইমনের প্রতি যদি এতো
ভালোবাসা থাকে নিজের প্রডাকশন থেকে একটা
ছবি বানান ইমনকে নিয়ে। তা তো করবেন না!!!!!!!
খালি আংগুলি করে সিনেমার উন্নতি হবে না। ৭১ টিভিতে আপনার আর তারেক তানভীরের হাইটের
কোনো তফাৎ খুঁজে পাইনি আমি। দুজনের হাইট এক মনে হয়েছে আমার।’