
উপভোগ্য লেডি কপ থ্রিলার ‘এশা মার্ডার : কর্মফল’
‘এশা মার্ডার: কর্মফল’-এ বাঁধনের কাজ বেশ ভালো হয়েছে। বলতে গেলে পুরো সিনেমা তিনি একাই টেনে নিয়ে গেছেন। পারফরম্যান্স একটু এদিক-সেদিক হলেই সমস্যা হয়ে যেতো। কিন্তু বাঁধন বেশ শক্ত-পোক্ত একটা পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন…
[স্পয়লার নেই]
আজিমপুরে হঠাৎ একদিন সাবলেট বাড়িতে মেডিকেল পড়ুয়া তরুণী এশার বিভৎস লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কেসটির দায়িত্ব এসে পড়ে পুলিশ কর্মকর্তা লিনার ওপর। লিনাও লেগে পড়ে এশার খুনি ধরার কাজে। তবে এরই মাঝে লিনাও জড়িয়ে যায় এক অদৃশ্য বেড়াজালে। শেষ অব্দি লিনা কীভাবে খুনিকে খুঁজে বের করবে-সেটা জানতে হলে দেখতে হবে সানী সানোয়ার পরিচালিত এবং আজমেরী হক বাঁধন, পূজা ক্রুজ, মিশা সওদাগর, নিবিড় আদনান অভিনীত সিনেমা ‘এশা মার্ডার: কর্মফল‘।

পরিচালক হিসেবে সানী সানোয়ারের তৃতীয় সিনেমা ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’। বিগত দুই সিনেমার মতো এবারও তিনি ওনার সিনেমার বিষয়বস্তু হিসেবে কপ থ্রিলারকেই বেছে নিয়েছেন। তবে এবার আর মেল সেন্ট্রিক নয়, ফিমেল সেন্ট্রিক কপ থ্রিলার নির্মাণ করেছেন সানী সানোয়ার। আমার মতে, মেল সেন্ট্রিক কপ থ্রিলারের তুলনায় ফিমেল সেন্ট্রিক কপ থ্রিলার বানানো একটু বেশি কঠিন। কেননা, পর্দায় আপনি যাকে দেখাচ্ছেন তাকে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে যদি উপস্থাপন না করা যায় তাহলেই সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে। এদিক থেকে সানী সানোয়ার দারুণভাবে উতরে গেছেন। লিনা চরিত্রটির বেশ ভালো উপস্থাপনের দরুন চরিত্রটি শুরুতেই আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এর অনেকটা ক্রেডিট অবশ্য পারফরম্যান্সের ওপরেও বর্তায়। সে আলাপে পরে আসছি। আপাতত গল্পে ফিরি। তো গল্প শুরু থেকেই একপ্রকার সাসপেন্স ক্রিয়েট করতে সক্ষম হয়। এক্ষেত্রে বিজিএমের প্রশংসা করতে হয়। বিজিএম যথেষ্ট টেনশন বিল্ড করতে সাহায্য করেছে। ফিমেল সেন্ট্রিক ফিল্মে আলগা নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এখানে জায়গা পায়নি। জায়গা পেয়েছে সমাজের মারাত্মক কিছু সমস্যা, যেগুলো চাইলেও এড়ানো যায় না। এভাবেই বিরতি অব্দি গল্প টানটান স্ক্রিনপ্লে নিয়েই এগিয়ে চলে। তবে বিরতির পর সবকিছু আরও জটিল হতে শুরু করে। সামনে আসতে থাকে নতুন সব রহস্য। গল্পে জটিলতা বাড়ে এবং সবশেষে কর্মফল কতোটা ভয়ংকর হতে পারে-সেটা বুঝিয়ে দিয়েই শেষ হয় ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’।
সিনেমায় বাঁধনের কাজ বেশ ভালো হয়েছে। বলতে গেলে পুরো সিনেমা তিনি একাই টেনে নিয়ে গেছেন। পারফরম্যান্স একটু এদিক-সেদিক হলেই সমস্যা হয়ে যেতো। কিন্তু বাঁধন বেশ শক্ত-পোক্ত একটা পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন। নবাগতা পূজা ক্রুজ গল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে ছিলেন। পূজার পারফরম্যান্সও প্রশংসাযোগ্য। একটি ছোট চরিত্রে সুমিত সেনগুপ্তও সাবলীল ছিলেন। এছাড়া মডেল নিবিড় আদনান, শরীফ সিরাজ, মিশা সওদাগর, ফারুক আহমেদ’সহ বাকিদের কাজ ভালো ছিল।
সিনেমায় মোট ৪টি গান রয়েছে। যদিও গানে খুব একটা সময় ব্যয় করা হয়নি। ইমরান এবং কোনালের ‘তোমাকে চাই’ শ্রুতিমধুর লেগেছে। একটা স্যাড সং ছিল। শুনতে মন্দ লাগেনি। বিজিএমের কাজ বেশ ভালো হয়েছে। যদিও শেষের দিকের বিজিএম কিছুটা তামিল সিনেমা ‘রাতসাসান’ এর বিজিএম থেকে অনুপ্রাণিত মনে হয়েছে। সিনেমাটোগ্রাফি এবং কালার গ্রেডিং-ভালো ছিল।

এবার আসি এই সিনেমার নেগেটিভ দিকগুলোতে। মিশা সওদাগর এবং শিল্পী সরকার অপু নিজেদের ডাবিং করেননি। এই বিষয়টা একটু উদ্ভট লেগেছে। পর্দায় ওনাদের ভয়েস ঠিক মানাচ্ছিলো না। সিনেমা সেকেন্ড হাফে গিয়ে কিছুটা মন্থর গতিতে এগোয়। এই অংশটুকু কিছুটা বিরক্তি ধরিয়েছে, যদিও সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে-আপনি যদি আপনার সিনেমায় পপুলার কোনো ফেইস কাস্ট করেন, তাহলে মানুষ অনেককিছু প্রেডিক্ট করে ফেলতে পারে। আমার ক্ষেত্রেও এই ব্যাপারটা কিছুটা কাজ করেছে। নেহাত স্পয়লার হয়ে যাবে তাই বিস্তারিত আলোচনা করছি না।
এই ছিল আমার দৃষ্টিতে ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’। ভালো কপ থ্রিলার দেখতে চাইলে ‘এশা মার্ডার’ ভালো চয়েজ হতে পারে।