Select Page

একজন বাবা ও তার হারানো বসন্ত খোঁজা

একজন বাবা ও তার হারানো বসন্ত খোঁজা

বাণিজ্যিক ছবির ধরণ ভারতীয় উপমহাদেশে পাল্টে যাচ্ছে। নায়কের আধিপত্যের বাইরে নতুন গল্পের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে বলিউড, টলিউডে। আমরাই কেবল এখনো আধিপত্যভিত্তিক মানসিকতায় এগিয়ে থাকা বাণিজ্যিক ছবির কথা বলি। নতুন কিছু করার চেষ্টাকে স্বাগত জানাই খুব কম। বাণিজ্যিক ছবির সাথে ফাইট করার মতো একটা প্রচেষ্টা থেকে নির্মিত অনন্য মামুনের ছবি ‘আবার বসন্ত।’

বসন্ত ঋতুর রাজা কথাটা ছোটবেলা থেকে বইতে পড়েছি আমরা। এই বসন্ত প্রকৃতির সাথে মানুষের জীবনে একটা অর্থ নিয়ে আসে। মানুষ তার জীবনের স্বর্ণালী সময়কে বসন্তের সাথে তুলনা করে। সেই বসন্ত যখন হারিয়ে যায় হারানো বসন্তের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। তখন যে কোনো নতুন স্বপ্নের দিকে সে হাত বাড়ায় তখন সমাজ-সংসারের বাধা তার কাছে বড় মনে হয় না। ‘আবার বসন্ত’ ছবি হারানো বসন্তের পেছনে সমাজ-সংসারের বাধা মাড়িয়ে ছুটে চলার থিম নিয়ে নির্মিত।

ছবির গল্পে একজন বাবাকে দেখানো হয়েছে মূল চরিত্রে। যিনি তার ছেলেমেয়েদের জন্য জীবনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ছেলেমেয়েরা প্রতিষ্ঠিত হবার পরে বাবাকে সময় দেয়ার কথা ভুলে গেছে। একসময় বাবা তার কাজের ব্যস্ততার পাশাপাশি নতুন একটা সম্পর্কে জড়ায়। সম্পর্কটি তাকে তার ছেলেমেয়ে ও সমাজের কাছে দাঁড় করায় সমস্যার মধ্য দিয়ে। ছেলেমেয়েরা মানতে পারে না বাবার সিদ্ধান্ত এবং অপ্রত্যাশিত একটা পরিণতির দিকে এগিয়ে যায় গল্পটি।

বাবার চরিত্রে তারিক আনাম খান এবং গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে স্পর্শিয়া। এ দুজনই মূলত ছবির প্রাণ। বয়স হয়ে গেলে বাবার প্রতি ছেলেমেয়েদের একটা গড়পরতা ধারণা থাকে তার আর কোনো সাধ থাকতে নেই, উপভোগ করার মতো কিছু নেই। কিন্তু সম্পর্কের জায়গায় বাবার বন্ধুত্ব হতে পারে যে কারো সাথে যাকে নিয়ে তিনি ভালো থাকবেন মানসিকভাবে। স্পর্শিয়ার সাথে বাবা তারিক আনামের রসায়নে অসম সম্পর্কের সেই মোড় দেখানো হয়েছে। তারা নিজেদের মতো সময় কাটায় দেশে-বিদেশে একটা নির্দিষ্ট কমিটমেন্টে। মানুষ বয়সের দিক থেকে নয় মনের দিক থেকে বাঁচে এ মেসেজটাই প্রধান এখানে।

তারিক আনাম-স্পর্শিয়ার রসায়নের সময়টাই ছবির এনজয়অ্যাবল পার্ট ছিল। স্পর্শিয়ার অভিনয় বেশ ভালো ছিল। চটপটে এবং ইমোশনাল দুই ভূমিকাতেই ভালো ছিল। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে যে অংশটিতে তারিক আনাম-স্পর্শিয়ার প্রায় এক ঘণ্টার অংশ ছিল ছবি তখনই এনজয় করার মতো অবস্থায় গিয়েছিল। শুরুর পর প্রায় অনেকটা সময় দর্শককে বোরিং সিচুয়েশনে ফেলে দিতে পারে ছবিটি। অভিনয়, আর্টিস্ট সিলেকশন, কস্টিউম, ক্যামেরার কাজ সবদিক থেকে পরিচালক কিছু দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছেন নির্দিষ্ট করে। যেমন – তারিক আনামের মেয়ের চরিত্রে মনিরা মিঠুর কাস্টিং মানায় নি, ইমতুর কাস্টিংটা একদম ভুল ছিল কারণ তার অভিনয় ভীষণ দুর্বল, মুকিত জাকারিয়াকে দিয়ে কমেডি করাতে পারেননি পরিচালক। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রগুলোতেও সমস্যা ছিল। বাড়ির ভেতর ফর্মাল গেটআপে সবাইকে রাখাটা সবচেয়ে অড লেগেছে।

ছবির ফিনিশিং বেটার। অনেকের কাছে মনে হতে পারে ওভাবে না হলেও পারত কিন্তু অতৃপ্তি থাকা পরিস্থিতি দর্শক মনে রাখে বেশি।

গানের মধ্যে চিশতী বাউলের ‘মিলন হবে কত দিনে’ বেস্ট। গানটিকে অসম সম্পর্কের গভীর অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।

‘আবার বসন্ত’ লো বাজেটের ছবি। ছবির সীমাবদ্ধতা আছে তবে গুরুত্বপূর্ণ দিকও আছে। সবসময় নতুন চেষ্টাকে স্বাগত জানাতে হয়। সেদিক থেকেই এ ছবিটি বাবাদের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে সচেতনতা আনতে পারে। সন্তানদের মনে রাখা দরকার বাবাদের স্যাক্রিফাইস এবং ছবির এ সুন্দর সংলাপটি-‘সন্তানদের বসন্ত ছাড়া বাবাদের বসন্তগুলো পূর্ণতা পায় না।’

রেটিং – ৬/১০


Leave a reply