Select Page

একটি বক্তব্যধর্মী অতৃপ্ত ছবি

একটি বক্তব্যধর্মী অতৃপ্ত ছবি

মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে আমাদের প্রায়ই একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হত বাংলা বিষয়ে। একটা গল্প, কবিতা বা উপন্যাসের প্রশ্নের মধ্যে সেই রচনাটির নামকরণের সার্থকতা প্রমাণ করতে বলা হত। প্রশ্নটি সিলি মনে হত অনেকের কাছেই কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়ের সাথে রচনাটি যৌক্তিক কিনা সেটাই প্রমাণ করতে হবে।

এখন এই পদ্ধতিকে আপনি চলচ্চিত্রে প্রয়োগ করতে পারেন একইভাবে। ছবি দেখতে বসেছেন, দেখলেন, নায়ক-নায়িকাকে দেখে শিস ফুঁকোলেন, মজা করলেন, ছবি শেষ করে চলে আসলেন। এরকম দর্শক আপনি হতেই পারেন। আপনার কাছে বিনোদন নেয়াটাই যদি চূড়ান্ত লক্ষ্য হয় তবে আপনি যুক্তিতর্কের ধার ধারবেন না কিন্তু আপনার পাশাপাশি অনেক দর্শক এমনো আছে যারা ছবি দেখতেই দেখতেই অনেক হিসাবনিকাশ করে ফেলেন যেখানে ছবির নানা ধরনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ থাকতে পারে। ঠিক সেভাবেই ভালো লাগা, মন্দ লাগা তার কলমে বেরিয়ে আসবে এবং সেটা বলার অধিকার সে রাখে।

তো এই দর্শক অধিকার থেকেই ঈদের ছবি ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না‘ নামকরণের সার্থকতা না থাকা ভালো গল্পের দুর্বল নির্মাণের একটি ছবি যা দেখার পর অতৃপ্তি থেকে যায়, মনে হয় এত ভালো বিষয়বস্তুর ছবিটি নির্মাণগুণে অসাধারণ হতে পারত।

নামকরণের সার্থকতা না থাকার সবচেয়ে বড় কারণ ছবির গল্পের সাথে মনের মতো মানুষ না পাওয়ার বিন্দুমাত্র সংযোগও নেই। অনেকে প্রেডিক্ট করতে পারেন গল্পে সম্ভবত সমাজের সমস্যা দেখানোর পাশাপাশি ব্যর্থ প্রেমের কোনো ঘটনা থাকতে পারে বা মনের মতো একজন জীবনসঙ্গী/সঙ্গিনী না পাবার আফসোস থেকে যাবে। কিন্তু না তা ঘটে নি।

ছবির গল্পে সমসাময়িক সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা ধর্ষণকে কেন্দ্র করে একটা পূর্ণাঙ্গ প্রসেস দেখানো হয়েছে। ‘আলো’ নামের সামাজিক সংগঠন চালানো একজন সাহসী কর্মী যে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে এবং তার পাশাপাশি আরো একটি গল্প দেখানো হয়েছে। সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ, আইনি পদক্ষেপ এবং একটি পরিণতির দিকে যাওয়া এটাই ছিল গল্প। এ গল্পের সাথে ছবির নামের বিন্দুমাত্র কোনো সম্পর্ক নেই। সো এটা বলতে বাধ্য হতেই হয় পরিচালক গল্পে ভালো বিষয় নির্বাচনের পরেও ছবির উপযুক্ত নাম দিতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং এ ব্যর্থতাটা এতই বড় যে নামের সাথে ছবির সবচেয়ে বড় পরিচিতি জড়িত।

ছবির ভালো লাগা বা স্ট্রং দিক হচ্ছে একজন নারীকে ফোকাস করা। হিরোইজমের যে ধরাবাঁধা নিয়মে শীর্ষ নায়ক শাকিব খান-কে দেখে আমরা অভ্যস্ত এ ছবিটি তা করে নি। নায়িকা শবনম বুবলী-ই ছবির কেন্দ্রবিন্দু। তাকে ঘিরে ছবির গল্প এবং পরিণতি। তাই বলতে গেলে ছবির নামটাও তাকে ঘিরে হওয়া উচিত ছিল। শাকিব খান দারুণ অভিনয় করেছে সাথে বুবলীও প্রত্যাশার থেকে বেটার বিশেষ করে তাকে নিয়ে সমালোচনা হয় তার থেকে অভিনয় বেশ ভালো। চরিত্রটির সাথে মানিয়ে গেছে সে। ক্যারেক্টারাইজেশনে দুর্বল উপস্থাপন ছিল সহশিল্পী, পুলিশ, জজ চরিত্রগুলো। মিশা সওদাগর ঐ টিপিক্যাল খলনায়কই ছিল এবং তার সহযোগীদের মধ্যে ডন, জাহিদ তারাও দুর্বল ছিল। ‘আ আ’ করা নব্বই দশকীয় টিপিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে সাদেক বাচ্চু, সাবেরী আলম, ফখরুল বাশার, নাজিবা বাশার-দের মতো ভালো অভিনয়শিল্পীদেরকেও দুর্বলভাবে দেখানো হয়েছে। ফাইটিং-ও একইভাবে দুর্বল।

ছবির সংলাপ নিয়ে প্রত্যাশা ছিল কিন্তু পূরণ হয় নি। পুলিশি হয়রানিতে ‘দেশটা কি এভাবেই চলবে’ এবং আদালতকক্ষে ধর্ষিতাকে জেরা করার সময় বলা ‘মেয়েটি প্রতিটি প্রশ্নেই এখন ধর্ষিত হচ্ছে’ শাকিব খানের মুখে এ দুটি সংলাপই যা একটু ছিল। সরকারকে খুশি করা টেকনিক্যালি সংলাপ জুড়ে দিলে সমালোচনার অবকাশ থেকে যায় কারণ পাবলিক এগুলো ভালোভাবে নেয় না। ছবির গানের অবস্থান মোটামুটি ঠিকঠাক ছিল।

জাকির হোসেন রাজু ৩৫ মিলিমিটারের সময় যেভাবে ছবি বানাতেন ডিজিটাল ফরম্যাটেও ঐ একই পদ্ধতিতে বানাচ্ছেন। পর্দা ফ্রেশ থেকে যাচ্ছে কিন্তু নির্মাণ আগেরটাই থাকছে। ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ ভালো বক্তব্যের ছবি হবার পরেও নামকরণের সমস্যা ও দুর্বল নির্মাণে তাঁর ক্যারিয়ারেরও অন্যতম দুর্বল ছবি হয়ে থাকল।

রেটিং – ৪.৫/১০


মন্তব্য করুন