“এক কাপ চা” এক কাপ বিনোদন
আমি যখন হলে প্রবেশ করি,হল তখন প্রায় ৮০% পরিপূর্ণ । যখন ছবিটি শেষে বের হই তখন পরবর্তী শোয়ের অপেক্ষায় ছিল অসংখ্য মানুষ। দীর্ঘদিন আগে কমপ্লিট হওয়া ছবিটি মুক্তি পেয়েছে সম্প্রতি ” এক কাপ চা “। ফেরদৌসের প্রথম প্রযোজনা, মৌসুমি – ফেরদৌস জুটি, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এবং ঝকঝকে পোস্টার এসবগুলোই এত ভালো ওপেনিং এর কারণ হয়তো । ছবিটির গল্পে বৈচিত্র্য আছে এতে কোন সন্দেহ নেই, মৌসুমি এখনও যে কোন নবাগত নায়িকার চেয়ে অনেক বেশী গ্ল্যামারাস এবং ফেরদৌস অনেক ভালো অভিনয় করেন এতেও কোন প্রশ্ন নেই, প্রশ্ন থেকে যায় এই যোগাযোগ মাধ্যমের স্বর্ণ যুগেও এরকম একটা চিত্রনাট্য কতটা যৌক্তিক সে বিষয়ে । বাংলা হঠাত্ বৃষ্টি বা হিন্দি রজনীগন্ধার মত আরও অনেক সফল সিনেমার পরিচালক বাসু চ্যাটার্জির এই চিত্রনাট্যটি এ সময়ে কতটুকু যৌক্তিক কিংবা যদি ধরেই নিই বাসু চ্যাটার্জি অনেক প্রবীণ তার স্ক্রিপ্টটিও হয়তো সেই প্রবীণ ধ্যান ধারণা উৎরিয়ে যেতে পারেনি তাহলে নবীন পরিচালক নেয়ামুল চলচ্চিত্রায়নের ক্ষেত্রে নতুন করে কিছু দিতে পারতেন কি না,এ প্রশ্নটিও থেকে যায় ।
একটি সিনেমা দৃশ্য ধারণের ক্ষেত্রে ক্লোজআপ শট সমৃদ্ধ হবে নাকি লঙ শট সমৃদ্ধ হবে এটার নির্দিষ্ট কোন বাঁধা ধরা নিয়ম নেই। দৃশ্য যেটা ডিমান্ড করে তেমনটি হবে কিন্তু তবুও আমরা অর্থাৎ উপমহাদেশের বাণিজ্যিক ধারার সিনেমার দর্শকেরা সিনেমা বলতেই একটু বিশাল ক্যানভাস বুঝি যেখানে বেশীর ভাগ দৃশ্য লঙ শট সমৃদ্ধ হবে,তা না হলে কেমন জানি নাটক নাটক মনে হয়। এ ছবিটির ক্ষেত্রেও তেমনটি হয়েছে প্রথম দিকে এতো বেশী ক্লোজআপ যে চরিত্র প্রায় ফ্রেমের বাহিরে চলে যায়।
সিনেমার গল্পে অনেক চড়াই উতরাই আছে টুইস্ট আছে । এক কাপ চা খেতে গিয়েই যত ঘটনা দুর্ঘটনা ঘটে তাই নিয়ে ছবির গল্প। তবে গল্পের প্রেক্ষাপট যেখানে ঢাকা শহর এবং মূল চরিত্রগুলো যেখানে শিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত এবং সময়টা যেখানে একবিংশ শতাব্দী সেখানে এ ধরনের স্ক্রিপ্ট কতটা যৌক্তিক বরং যদি সময়টা একটু পিছিয়ে কিংবা নিদেন পক্ষে গল্পের প্রেক্ষাপট ঢাকা শহর না করে কোন মফস্বল শহর করলে গোটা ছবিটা আরও যৌক্তিক হত ।
সংলাপের ক্ষেত্রে বাহুল্য-তা পরিচালক বর্জন করতে পারতেন তাহলে ছবিটি আরও সাবলীল হত ।সিনেমাটির গানগুলো ভালো, শ্রুতিমধুর বিশেষ করে নচিকেতার গাওয়া টাইটেল গানটি এবং কিংবদন্তী রুনা লায়লা ও হালের ক্রেজ হৃদয় খানের গাওয়া দ্বৈত গানটি উল্লেখযোগ্য । গানের দৃশ্যায়ন ভালো তবে আমার সবসময়ই একটা কথা মনে হয় সব সময় নায়ক নায়িকা কে নাচাতে হবে এমন তো কথা নেই আমাদের দেশের নায়ক নায়িকারা যেখানে স্থূলকায় সেখানে কোরিওগ্রাফিটা শুধুমাত্র এক্সপ্রেশন নির্ভর করলেই বোধ হয় বেশী সুদৃশ্য হয়।
এত কিছু বললাম তবুও সিনেমাটা কেন দেখতে যাবেন,সেটা বলি ,সিনেমাটা দেখতে যাবেন মৌসুমিকে দেখতে। এখনও তিনি যতটা গ্ল্যামারস দেখান এরকমটা বোধ হয় অনেক কম বয়সী অভিনেত্রীকেও দেখায়না । ছবিটি দেখতে যাবেন একটা নতুন গল্পের স্বাদের জন্য একটা ঝরঝরে অথচ আঁকাবাঁকা গল্প,টুইস্ট সমৃদ্ধ গল্প,ছবিটি দেখতে যাবেন অনেক তারকাকে এক সাথে দেখবার জন্য,কে নেই সিনেমাটিতে নায়ক রাজ রাজ্জাক থেকে শুরু করে সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক সাকিব খান । আর ছবিটি দেখতে যাবেন বাংলা সিনেমার এক নক্ষত্র হুমায়ুন ফরিদীর শেষ অভিনয় দেখতে ।
সিনেমাটি সেট নির্ভর নয় বরং যেখানে যেরকম লোকেশন প্রয়োজন হয়েছে পরিচালক সে বাস্তব লোকেশনে দৃশ্য ধারণ করেছেন । ঢাকার মত ব্যস্ত শহরে বিভিন্ন জায়গায়,অলি গলিতে এতো এতো তারকা নিয়ে শুটিং করাটা চারটি খানি কথা নয় এজন্য পরিচালককে সাধুবাদ। ছবিটির আরেকটি ভালো লাগার দিক হচ্ছে চরিত্রগুলোর পোশাক পরিচ্ছদ এবং মেকআপ বেশ পরিচ্ছন্ন ও রুচিসম্মত এবং চিত্রনাট্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ । এক কাপ চা ছবিটিতে এক রাশ ভালো লাগা হয়তো নেই তবে এক কাপ বিনোদন অবশ্যই পাবেন,এই বিনোদনটাই বা আজকাল কটা সিনেমায় পাওয়া যায় ।
তাই এক কাপ চা এক কাপ বিনোদন।