Select Page

এক দশকের সেরা কমার্শিয়াল ছবি ‘তুফান’

এক দশকের সেরা কমার্শিয়াল ছবি ‘তুফান’

‘তুফান’ গত এক দশকে নির্মিত আমাদের ইন্ডাস্ট্রির সেরা কমার্শিয়াল ছবি। পরিচালক রায়হান রাফি-র বড় কলেবরে নির্মিত টোটাল মেকানিজমের ফুলটাইম এন্টারটেইনিং ছবি এটি। একটি আদর্শ কমার্শিয়াল ছবি নির্মাণের জন্য যে যে উপাদানগুলো থাকলে তা পরিপূর্ণতা পায় ‘তুফান’-এ তার সবকিছুই আছে।

রায়হান রাফি তাঁর প্রত্যেকটি ছবিতেই তফাতটা খুব সচেতনভাবেই রাখতে পেরেছে। তাঁর পরের ছবি পূর্বের ছবির কনটেন্ট ও প্রেজেন্টেশন দুই প্ল্যাটফর্মেই ভিন্ন হয়েছে। ‘তুফান’ ছবির ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে, তাঁর আগের ছবিগুলোর সাথে এ ছবির স্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।

‘তুফান’ ওভারঅল এন্টারটেইনিং ছবি। অ্যাকশন, ড্রামা, ইমোশন, কমেডি চারটি সেগমেন্টেই কমপ্যাক্ট কাজ দেখিয়ে ছবিটি ফুল এন্টারটেইনিং হয়ে উঠেছে। ছবির শুরুর সাথে মাঝের যে তফাত তার সাথে বিরতির পর টোটালি অ্যাকশন মুডে চলে যাবার যে অসাধারণত্ব দেখিয়েছেন রায়হান রাফি তা বড় অঙ্কেই প্রশংসনীয়।

শাকিব খানকে যে দর্শকরা তাঁর প্রথমদিকের ক্যারিয়ারের সময় থেকে সিনেমাহলের পর্দায় দেখে এসেছে তারা সেই পুরোনো টগবগে শাকিবকেই এগিয়ে রাখে তার ক্যারিয়ার গ্রাফে। কারণ, তখনকার শাকিব খানের অভিনয়ে যে ন্যাচারালিটি ছিল, একাগ্রতা ছিল স্পেশালি ‘খুনি শিকদার, আজকের সমাজ, আমার স্বপ্ন তুমি, সুভা, সিটি টেরর, ভাড়াটে খুনি, বাধা’ এ ধরনের ছবিগুলোতে সেই একাগ্র ও ন্যাচারাল অভিনয়ের শাকিব খান ‘তুফান’-এ ভালোভাবেই উপস্থিত। সরল আবার এক মুহূর্তে জটিল, সাইকো আবার দুর্ধর্ষ এভাবে তার সুইচ অন অফ ক্যারেক্টারাইজেশন ‘তুফান’ নামভূমিকায় অভিনয়কে শক্তিশালী চরিত্রে পরিণত করেছে। পুরো ছবিতে তার অভিনয়ে চোখ আটকে থাকতে বাধ্য করেছে। এই শাকিব খান একদম পুরোনো ভাইবে উপস্থিত যেটি সচেতন দর্শক প্রত্যাশা করে। তার অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলোর বডি ল্যাংগুয়েজ লাজবাব ছিল, তার চোখ দিয়ে যেন আগুন জ্বলে।

ছবির গল্প কি?
না এটা বলা জরুরি নয়, গল্প সিনেমাহলে গিয়ে নিজ দায়িত্বে জেনে নেয়া ভালো। এ গল্পে শক্তিশালী একটা ব্যাপার রয়েছে, পারফেক্ট টুইস্ট রয়েছে এবং
অসাধারণ ক্লাইমেক্স রয়েছে। ছবি মুক্তির আগে যারা অনেক হাইপোথিসিসকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রেডিকশন দিয়েছে সেসব প্রেডিকশনের ভালো জবাব দেয়া আছে। ছবির শেষটা ছক্কা।

রায়হান রাফি কেন বর্তমানে সেরা পরিচালক? এর প্রধান কারণ মেকানিজমের জ্ঞান। ছবিকে শক্তিশালী করতে তিনি শুধু নায়ক নিয়ে চিন্তা করেন না। হ্যাঁ, নায়ক ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু নায়কের পাশাপাশি ছবিকে টোটাল মেকানিজম দিতে পিলার দরকার হয় সেসব চিন্তা তিনি করেন। সেজন্য এ ছবির দ্বিতীয় প্রধান আকর্ষণ করেছেন চঞ্চল চৌধুরীকে। চঞ্চল চৌধুরীর কুল ইমেজের চরিত্রটিতে কমেডি ও ঠাণ্ডা মাথার মাইন্ড গেমের বিষয় রয়েছে। ভীষণ এন্টারটেইনিং চরিত্র। চঞ্চলের অভিনয় ছবির জন্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ছবির ক্লাইমেক্সের টেনশন তৈরি ও রহস্যকে খোলাসা করতে চঞ্চলের অভিনয় ছিল অসাধারণ। তৃতীয়ত নাবিলাকে ছবিতে যোগ করাটাও ছিল নতুন কিছু কারণ সে নাচেগানে ভরপুর এমন কমার্শিয়াল ছবি করেনি। শাকিব খানের সাথে তার কেমিস্ট্রি ন্যাচারাল ছিল এবং এতে প্রমাণিত হয় যে সে চরিত্রের সাথে মিশে অভিনয় করতে জানে। মিমি চক্রবর্তীর গ্ল্যামার, অভিনয়, ক্লাইমেক্সে চরিত্রের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া এগুলো লক্ষ করার মতো। এরপর গাজী রাকায়েত যার নিজেরও এমন কমার্শিয়াল ছবি প্রথমবার হয়েছে, তাকে ছবির বড় একটি পার্টেই রাখা হয়েছে যেখানে তিনি স্টোরি টেলিং-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। ফজলুর রহমান বাবু, মিশা সওদাগর, শহীদুজ্জামান সেলিম-দের পরিমিত ব্যবহারও ছবিতে ভালো ভূমিকা রেখেছে।

ছবির বিজিএম টপনচ লেভেলের। শাকিব খানের চরিত্রের বাঁক যখন থেকে শুরু হয় বিজিএমের ব্যবহার তখন থেকেই দুর্দান্ত হতে থাকে এবং দ্বিতীয়ার্ধ্বে তা আরো অসাধারণ। লংশটের হাসপাতাল অপারেশনটি ছিল ছবির সেরা অ্যাকশন মোমেন্ট। শাকিব খানের বডি ল্যাংগুয়েজ তখন আগুন ছিল। কালার গ্রেডিংও ভালো। গানের মধ্যে ‘লাগে উড়াধুড়া’ ওয়ার্ড অফ মাউথ পর্যায়ে গেছে, টাইটেল ট্র্যাকটিও ভালো মেকিং-এর ছিল।

‘তুফান’ রায়হান রাফি-শাকিব খান-চঞ্চল চৌধুরী এ তিনের কম্বোতে ইন্ডাস্ট্রিতে বাড়তি আগ্রহ তৈরি করা একটি সুনির্মিত কমার্শিয়াল ছবি। গত এক দশকের মধ্যে হিসাব করলে এরকম ছবি আর হয়নি। আগামীতে আরো হোক এমন ছবি সে প্রত্যাশা ‘তুফান’ থেকেই শুরু হোক।

বি : দ্র : ‘তুফান’-এর দ্বিতীয় কিস্তি আসছে..

রেটিং – ৮.৫/১০


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন