এনার্জি ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনে সাহসী বার্তা
এ গল্প বিজ্ঞাপনের। যার নির্মাণশৈলী ও বিষয়বস্তু আলোচনার যোগ্য। পাওয়ার এনার্জি ড্রিংকসের নতুন বিজ্ঞাপন স্যাটায়ারের আবরণে চেনা স্রোতের বিপরীতে প্রশংসনীয়ভাবে একটি বার্তা উপস্থাপন করেছে।
বিজ্ঞাপনের প্রথমেই ‘তাকদীর’ ওয়েব সিরিজের ভাইছা-খ্যাত সোহেল মন্ডলকে দেখা যায় একটি লাল রঙের মোরগকে আদর করে ‘সোনা মিয়া’ বলে আরেকজনকে পরিচয় করিয়ে দিতে। মোরগের মালিকের ডাকার ভঙ্গিতেই অশ্লীলতার ছাপ স্পষ্ট। সামনে বসে থাকা লোকটিকে সোহেল বোঝান যে, মোরগটি এখন আর তার কথা শোনে না। নিজের ইচ্ছামতো নড়াচড়া করে। সংলাপগুলো বলার সময় ক্লোজশটে আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে এমন কিছু বিষয় দেখান যা আমাদের জানা। তবে স্যাটায়ার প্যাটার্নের কারণে এই সংলাপ বা বডি ল্যাংগুয়েজ সমাজের এক ব্যাধির কথা মনে করিয়ে দেয় যা মেনে নেওয়া যেকোনো সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের জন্য অসম্ভব।
সাধারণত একটি বিজ্ঞাপনের কাজ নির্দিষ্ট একটি পণ্যের সুবিধা বা সাশ্রয়ের নানা দিক ভোক্তাদের সামনে তুলে ধরা। সময়ের সাথে সাথে এখন নানা রকম ব্যতিক্রমী কনটেন্ট চোখে পড়ছে। বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন জগতে কয়েক বছর ধরেই ব্যতিক্রমী কনটেন্ট ও নান্দনিক উপস্থাপন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সমসাময়িক নানা ইস্যু, সম্পর্কের নানা দৃষ্টিকোন বা প্রাকৃতিক সম্পদের মতো নানা কনটেন্ট মাঝে মাঝেই বিজ্ঞাপন জগতে আলোড়ন তুলছে। তবে ধর্ষণ নিয়ে স্যাটায়ারধর্মী এমন কাজ আগে হয়েছে বলে মনে পড়ে না।
আমাদের দেশে স্যাটায়ার প্যাটার্নের কাজ হয় ধরতে গেলে হাতেগোনা। বিজ্ঞাপন, নাটক, সিনেমা বা অন্য কোনো মাধ্যমে এই রকম কাজ কম হওয়ার অন্যতম কারণ এই ঘরানার নির্মাণেল বার্তা নিয়ে ভাবার মতো অডিয়েন্স দুঃখজনকভাবে এখনো তৈরি হয়নি। তাই বিজ্ঞাপন বা ফিকশনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ঝু্ঁকি নিতে চান না। তবে এই বিজ্ঞাপন ব্যতিক্রম।
নারীদের ওপর সহিংসতা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে শক্তিশালী এক বার্তা দেওয়ার পন্থা হিসেবে বেছে নেওয়া হলো হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিমা এটা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। সঙ্গে ইংরেজিতে হ্যাশট্যাগ হিসেবে ‘কক ইন কন্ট্রোল’ অর্থাৎ মোরগকে নিয়ন্ত্রণ রাখুনের মতো বাক্য বেশ ধাক্কা দেয়। ৩ মিনিট ২১ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনটি শেষ হয় একটি ইংরেজি বার্তা দিয়ে। যার বাংলা দাঁড়ায়, ‘প্রিয় ভাই, নিজের মোরগকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় দয়া করে সেটা শিখে নাও কারণ তোমার অযাচিত মোরগকে কেউই চায় না এবং ধন্যবাদ বিষয়টি বোঝার জন্য।’
বিজ্ঞাপনটির কনটেন্ট, দৃশ্যায়ন, গল্পের উপস্থাপন, কালার গ্রেডিং, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের ব্যবহার সব মিলিয়ে অনন্য। এখানে অবশ্যই সোহেল মন্ডলের এক্সপ্রেশন উল্লেখ করতে হয়। পুরো বিজ্ঞাপনে ‘সোনা মিয়া’ মোরগটির পেছনে দৌড় লাগানো যুবক যার গেটআপ ও লুক পুরোপুরি মানিয়ে গেছে বিজ্ঞাপনের মেসেজের সঙ্গে।
দ্য বিগ কনটেন্ট লিমিটেডের ব্যানারে বিজ্ঞাপনটি নির্মাণ করেছেন মাহাথির স্পন্দন।
দেশে এখন এমন এক পরিস্থিতি যে, যে কেউ যেকোনো ইস্যুতেই অনুভূতিতে আঘাত পায়, এই অনুভূতির আঘাত নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা তো নিয়মিত ব্যাপার। সেখানে এই কনটেন্ট সাহসী ও প্রশংসার যোগ্য। এর আগে পাত্রপক্ষের সামনে সাহসিকতার সঙ্গে ধর্ষিতা মেয়ের সত্য গোপন না করে সেই ভয়াবহ ঘটনা বর্ণনা করার মতো বিষয় নিয়েও বিজ্ঞাপন বানিয়েছেন মাহাথির। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ভিক্টিম অপরাধী নন— তাই তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল আনা দরকার এমন বার্তা দিয়েছিলেন।
এখানে আরেকটা কথা উল্লেখ না করলেই নয় যে, এনার্জি ড্রিংকসের টার্গেট অডিয়েন্স কিশোর ও যুব সমাজ। এখানে আলোচ্য বিষয়টি বিশাল এক ভোক্তাশ্রেনীর কাছে এবং শিল্প-সংস্কৃতিকে যে সমাজে ঘটা নানা ইস্যু নিয়েও সোচ্চার হতে হয় সেই বিষয়টাও আবার তুলে ধরলেন মাহাথির।