Select Page

এপারে ‘হইচই বাংলাদেশ’ সহজে হলেও ওপারে ‘চরকি ইন্ডিয়া’ সহজ নয়?

এপারে ‘হইচই বাংলাদেশ’ সহজে হলেও ওপারে ‘চরকি ইন্ডিয়া’ সহজ নয়?

আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে গত বছরের ৪ অক্টোবর কলকাতায় কার্যক্রম শুরু হয়েছিল চরকির। কিন্তু তা বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশে যেমন ভারতীয় চ্যানেলের প্রবেশ সহজ, তেমনি ওটিটির কার্যক্রমও। বিপরীতে চ্যানেল বা ওটিটি কোনোটির জন্যই বাংলাদেশবান্ধব নয় ভারত। এমনকি রায়হান রাফীর ‘তুফান’কে কেন্দ্র করে স্থানীয় রিভিউকারদের প্রচারণা এমনটাই সাক্ষ্য দেয়।

জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে কনটেন্ট উৎপাদনে কলকাতায় অতিরিক্ত খরচের শিকার হচ্ছে চরকি। আবার স্থানীয় কোম্পানি হিসেবেও সেখানে অনুমোদন পাওয়া সহজ নয়। সব মিলিয়ে টিভি বা ওটিটি দুইক্ষেত্রে ভারতে পিছিয়ে থাকছে বাংলাদেশ।

কলকাতার প্রতিবন্ধকতার কথা কালের কণ্ঠের কাছে স্বীকারও করেছেন প্লাটফর্মটির হেড অব কনটেন্ট অনিন্দ্য ব্যানার্জি। তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গে সিনে টেকনিশিয়ানদের যে সংগঠন রয়েছে, বাধাটা সেখান থেকেই। তাদের চাওয়া, স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে চার গুণ বেশি পারিশ্রমিক। অনিন্দ্য বলেন, ‘আমরা জানতাম, টালিগঞ্জে পারিশ্রমিকের ভাগটা হয় ভাষাগত দিক বিবেচনায়। বাংলা কাজের একটা দর; হিন্দি, ইংরেজি বা অন্য ভাষার ক্ষেত্রে আরেক দর। যেহেতু চরকির কাজগুলো বাংলায়, তাই বিষয়টা নিয়ে আমরা ভাবিনি। পরে তারা [ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া] জানায়, বাংলাদেশ তো অন্য দেশ, সুতরাং পারিশ্রমিক বেশি দিতে হবে। এটা দুই থেকে চার গুণ পর্যন্ত! আমেরিকা থেকে এসে কাজ করলে না হয় এ হিসাবটা হতে পারে। কারণ টাকার মানের তফাত অনেক। তারা সেটা বহন করতে পারে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে তো এমনিতেই ১০০ টাকার কাজ ১৩০ টাকায় করতে হয়। তার ওপর যদি আরো বেশি দিতে হয়, তাহলে তো মুশকিল।’

অনিন্দ্যর মতে, ফেডারেশনের চাহিদা মোতাবেক পারিশ্রমিক দিলে বাজেট যে পরিমাণ বাড়বে, তা কনটেন্ট মুক্তি দিয়ে কোনোভাবেই তুলে আনা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘বিষয়টা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। তবে সমাধানের কোনো পথ যে দেখা যাচ্ছে, তা-ও নয়। আসলে কলকাতায় ফেডারেশন বেশ শক্তিশালী। তারা তাদের স্বার্থটা দেখছে, এটাকে আমি ভুল বলতে চাই না। তবে স্বার্থটা যৌক্তিক নাকি অযৌক্তিক, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ।’

ওপারে উদ্বোধনী সংবাদ সম্মেলনে চরকি ঘোষণা দিয়েছিল, তিন বছরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ৩০টি কনটেন্ট নির্মাণ করবে। এর মধ্যে ‘লহু’ নামের একটি সিরিজের কাজও শুরু হয়েছিল। রাহুল মুখার্জির সিরিজটিতে চুক্তিবদ্ধ হন বাংলাদেশের আরিফিন শুভ ও পশ্চিমবঙ্গের সোহিনী সরকার। ডিসেম্বরে সিরিজটির শুটিং শুরু হয়েছিল। কিন্তু ফেডারেশন বেঁকে বসায় নিরুপায় হয়ে থামতে হয় টিমকে।

অনিন্দ্য বলেন, ‘আমরা এখন ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ অবস্থায় আছি। দেখা যাক কী হয়। একটা কাজ [লহু] শুরু হয়েছিল, মাঝপথে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। চূড়ান্তভাবে কার্যক্রমটা আসলে শুরু করাই যায়নি।’

এ প্রসঙ্গে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ আনা যেতে পারে—হইচই। পশ্চিমবঙ্গের এই ওটিটি প্ল্যাটফরম বাংলাদেশেও অনেক দিন ধরে পরিচালিত হচ্ছে। তাদের ক্ষেত্রে ঢাকায় এমন কোনো সমস্যার কথা শোনা যায়নি। এ বিষয়ে অনিন্দ্যর ব্যাখ্যা, “ঢাকায় হইচই-এর সমস্যা হয়নি, কারণ ‘হইচই বাংলাদেশ’ এখানকারই কম্পানি। আমরাও যদি ‘চরকি ইন্ডিয়া’ হতাম, তাহলে হয়তো এ রকম সমস্যার মুখে পড়তাম না। ঢাকায় একটা কম্পানি চালু করা যত সহজ, ভারতে ততটা নয়। প্রতিটি সরকারের ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম থাকে। সেসব বিবেচনায় আমরা ‘চরকি ইন্ডিয়া’ করতে পারিনি।”

সব শেষে এসব জটিলতার সমাধানের প্রত্যাশাই রাখলেন ভারতের বিভিন্ন বিনোদন প্ল্যাটফরমে কাজ করা অনিন্দ্য। বলেন, ‘সমস্যাটার সমাধান জরুরি। এতে দুই বাংলার কাজের পরিধি ও বাজার বড় হবে। বাজার বড় হওয়া মানেই বেশি কাজ, আর ইন্ডাস্ট্রিও বড় হবে।’
কালের কণ্ঠের প্রতিবেদন ধরে এখন নতুন প্রশ্ন উঠছে সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘তুফান’ ঘিরে। শুরুতে এ সিনেমার প্রযোজক হিসেবে কলকাতার এসভিএফ এবং ঢাকার আলফা আই ও চরকির নাম আসে। কিন্তু বাংলাদেশে সেন্সর হয় আলফা আইয়ের একক প্রডাকশন হিসেবে। সিনেমাটির পুরো কাজ হয়েছে কলকাতায়। সে হিসেবে নির্মাণ খরচ অনেক বেশি হওয়ারই কথা। অন্যদিকে ভারতে মুক্তি নিয়ে এফভিএফের তোড়জোর থেকে মনে করা যায় যে, সিনেমাটি সেখানকার স্থানীয় প্রডাকশন কিনা!

হইচই বাংলাদেশ গঠনের পাশাপাশি বাংলাদেশে প্রযোজনার জন্য সম্প্রতি আলফা আইয়ের সঙ্গে একটি প্রতিষ্ঠান খুলেছে এসভিএফ। এর সঙ্গে কলকাতায় ধাক্কা খাওয়া চরকির সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

মন্তব্য করুন