এফডিসিতে দুর্নীতি, ফাঁসলেন পীযূষ
ফিল্ম ডেভলপমেন্ট করপোরেশনের (এফডিসি) ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৫৮ হাজার ৫২০ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ফাঁসলেন অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুসন্ধানে এফডিসির মালামাল ক্রয়ের মাধ্যমে এই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিনি ও এক মালয়েশীয় নাগরিকসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক বৈঠকে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি দেয় কমিশন। শিগগিরই দুদকের এক উপপরিচালক হামিদুল হাসান রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করবে। দুদক সূত্র বাংলমেইলকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বিএফডিসির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও অভিনেতা পীযূষ বন্দোপাধ্যায় ছাড়া বাকি অভিযুক্তরা হলেন- পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের লোকাল এক এজেন্টর মালিক খন্দকার শহীদুল, এফডিসির সাবেক প্রকল্প পরিচালক (ক্রয়) শফিকুল ইসলাম এবং মালয়েশিয়ান নাগরিক জন নোয়েল।
দুদক সূত্র জানায়, পুরাতন যন্ত্রপাতি এফডিসিকে গছিয়ে দিয়ে ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ফেইথ ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি প্রতিষ্ঠান। এমন অভিযোগ পাওয়ার পর গত বছরের ৮ ডিসেম্বর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান উপপরিচালক হামিদুল হাসান। তিনি প্রথমে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে বিএফডিসির বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করেন।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পীযূষসহ অন্যরা পারফরমেন্স সিকিউরিটি গ্রহণের ক্ষেত্রে পেশাগত দায়-দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন। প্রাক-জাহাজীকরণ পর্যায়ে বিধি অনুসরণ না করে নিজেদের মনগড়া বিশ্লেষণের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্থলে চীনে তৈরি মালামাল জাহাজীকরণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। মালামাল গ্রহণ কমিটির সুপারিশ আছে মর্মে মিথ্যা তথ্য দিয়ে চুক্তি বহির্ভূত চীনের তৈরি মামামাল গ্রহণ করে মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে।
দীর্ঘ প্রায় ১০ মাসের অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষে এই ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৫৮ হাজার ৫২০ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়েরের সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেন ওই অনুসন্ধান কর্মকর্তা। এতে বলা হয়, অভিযুক্তরা অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পরের যোগসাজশে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সরকারের অর্থ আত্মসাৎ করে নিজেরা লাভবান হয়েছেন। কমিশন ওই প্রতিবেদন যাচাই বাছাই শেষে আজ মামলার অনুমোদন দিয়েছে। শিগগিরই তেজগাঁও থানায় মামলাটি করবেন ওই অনুসন্ধান কর্মকর্তা।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এফডিসি কর্তৃপক্ষ ২০০৬ সালে ৪ কোটি টাকার ডিজিটাল সাউন্ড টারবো সিস্টেম (ডিটিএস) কেনার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। সে অনুযায়ী ২০০৭ সালের ৪ এপ্রিল ফেইথ ইন্টারন্যাশনাল নামের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নতুন ডিটিএস যন্ত্রপাতির পরিবর্তে পুরাতন যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে পুরো অর্থ তুলে নেয়। সেই কমিটির তদন্তে সরবরাহ করা ডিটিএস যন্ত্রপাতি পুরাতন বলে শনাক্ত করে রিপোর্ট দেয়। আর ওই সময় অভিনেতা পীযূষ বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। আর তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন এ দুর্নীতি সংগঠিত হয়েছিল। এফডিসিতে কাঁচা ফিল্ম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ফিল্ম ট্রাস্টের কর্মচারী উজ্জ্বল চক্রবর্তী ফেইথ ইন্টারন্যাশনালের অংশীদার হিসেবে নেপথ্যে থেকে এ অর্থ হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ উঠলে সেসময় এফডিসি কর্তৃপক্ষ এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। ডিটিএস যন্ত্রপাতি পুরাতন বলে শনাক্ত করে রিপোর্টও দিয়েছিল ওই কমিটি। এরপর এফডিসি কর্তৃপক্ষ বিষয়টির অধিকতর তদন্তের জন্য দুদকের কাছে তাদের অভিযোগ পাঠালে দুদকের অনুসন্ধানেও এসব দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, এর আগে ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রবর্তন’ প্রকল্পের আওতায় ২ কোটি ৭৩ লাখ ১৫ হাজার ৭৫৭ টাকা আত্মসাতের প্রচেষ্টার অভিযোগে বিএফডিসির প্রকল্প পরিচালক কাজী মো. শাহ আলম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কেএম আইয়ুব আলী এবং ফেইথ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের অংশীদার ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ম্যাগনাটেক ইলেক্ট্রনিক্স কো আইএনসি এর স্থানীয় এজেন্ট উজ্জল চক্রবর্তীকে আসামি করে মামলা দায়ের করে দুদক। উপপরিচালক হামিদুল হাসান বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেছিলেন।