
এফডিসির এমডি মাসুমা রহমান তানির নিয়োগ বাতিলের দাবি
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে মাসুমা রহমান তানিকে নিয়োগ দেয়ায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল।

সম্প্রতি দীর্ঘ ফেসবুক পোষ্টে এ নিয়োগের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান ঢাকাই সিনেমায় মেগাস্টার হিসেবে পরিচিত উজ্জ্বল। তিনি বলেন, এই নিয়োগ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, বাতিল না করা হলে, জাতীয়তাবাদের আদর্শের চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা দেশের সাধারন জনগনকে সাথে নিয়ে বিএফডিসি ঘেরাও কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবে, এর সকল দায়, দায়িত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বহন করতে হবে।
ফেসবুক পোস্টে বলেন, যুবলীগের অর্থায়নে শেখ মুজিবকে নিয়ে নির্মিত সিনেমার পরিচালক মাসুমা রহমান তানি। গতকাল ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখ সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মিজ্ মাসুমা রহমান তানিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মিজ মাসুমা রহমান তানি আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে ২০১৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে “চল যাই” নামে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করে।
তার এই চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে সুস্থধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় বাঁধা পড়ে। আওয়ামী সাংস্কৃতিক বন্দনা শুরু হয়। আওয়ামী কালচারাল হেজিমনি প্রভাব বিস্তার করে। যার প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে বিনা ভোটের আওয়ামী স্বৈরাচার সরকার বাংলাদেশের জনগনের অধিকার কেড়ে নিয়ে ফ্যাসিবাদ কায়েম করে।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে যখন গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য বিএনপি চেয়াপারসন তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া গণতন্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, তখন এই মাসুমা রহমান তানি এবং তার যুবলীগের টিম জাতিকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন দিয়ে ২০১৮ এর রাতের অন্ধকারে ভোটের আয়োজন করে জনগনের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে সহযোগিতা করতে “চল যাই” সিনেমার শুটিং এর সংবাদ প্রচার করে জনগনকে বিভ্রান্ত করে। ২০২০ সালে শেখ মুজিবের নামে বছরব্যাপী যে আওয়ামী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন হয়েছে, তারই অংশ হিসেবে মাসুমা রহমান তানির সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, এই সিনেমার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের অর্থ ও সুবিধা নিয়েছে তারা।
উজ্জ্বল তার পোষ্টে বলেন, যুবলীগের খালেদ মাহমুদ তুর্য্য ও মাসুমা রহমান তানি যুগল গত জুলাই বিপ্লবের সরাসরি বিরধীতা করে একাধিক ফেসবুক পোষ্ট দিয়েছে অভিযোগ আছে, ৫ আগস্টে সে সব পোষ্ট ডিলিট করলেও ১৭ জুলাইয়ের একটি পোষ্ট ৫ আগস্ট এডিট করেছে, যা সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে।
আওয়ামী ফ্যাসিবাদের এই সাংস্কৃতিক দোসরকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়ায় সুস্থধারার চলচ্চিত্র নির্মানে চলচ্চিত্র শিল্প বাধাগ্রস্ত হবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা আবার মাথা চাড়া দিবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি, অধিকতর যোগ্যতা সম্পূর্ণ, বিতর্কমুক্ত, যোগ্য চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করিবেন।

এদিকে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে মাসুমা তানি বলেন, ‘কখনোই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার কোনো সম্পকৃতা ছিল না। আমি ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। সরাসরি ২০ দিন ছাত্রদের সঙ্গে রাজপথে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। কখনোই লীগের সঙ্গে কোনো ভাবেই যুক্ত ছিলাম না। হঠাৎ করেই আমাকে যুবলীগ নেত্রী বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেউ লীগের সঙ্গে আমার এবং স্বামীর কোনো সম্পকৃতা দেখাতে পারে তাহলে আমি প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইব। লীগের সঙ্গে যুক্ত থাকলে অনেক আগেই অনেক কিছু করতে পারতাম।’
‘চল যাই’ সিনেমার বিতর্ক টেনে তিনি বলেন, ‘এটা আওয়ামী লীগ কিংবা শেখ মুজিবরের সিনেমা না। বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুদের সংকট নিয়ে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। যদি লীগের সিনেমা হতো তাহলে এই সিনেমার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতাম। আমাকে টেনে ধরার জন্য একটি চক্র মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।’
নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত বিএফডিসির এমডি মাসুমা রহমান তানি সাবেক এমডি ফারাহ শাম্মীর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখার এক প্রজ্ঞাপনে এই নিয়োগ প্রদান করার তথ্যটি জানা যায়।