‘এমআর নাইন’ পছন্দ না করার শাস্তি অনন্ত জলিলের ‘চিতা’!
মাসুদ রানা চরিত্রে অনন্ত জলিলের নাম ঘোষণা হতেই সমালোচনার অন্ত নেই। যদিও এর মধ্যে নিজেকে ‘বাংলাদেশের জেমস বন্ড’ ঘোষণা দিয়ে বসে আসেন এ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী।
এর আগে জাজ মাল্টিমিডিয়া ‘এমআর নাইন’-এর প্রচারে ৮৩ কোটি টাকা বাজেটের প্রচার করে। কিন্তু গল্প-নির্মাণ কোনো খাতেই সেটি দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করেনি। যা কিছুটা প্রশংসা পেয়েছে নাম ভূমিকার অভিনেতা এবিএম সুমন।
সম্প্রতি মাসুদ রানার প্রকাশক সেবা প্রকাশনীর ফেসবুক পেয়েছে দুই সিনেমা নিয়ে ঠাট্টা করলেন লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের পুত্রবধূ ও প্রকাশনা সংস্থাটি অন্যতম কর্তা মাসুমা মায়মুর। ‘ফান পোস্ট’ উল্লেখ করে তিনি লেখেন, “কোটি কোটি টাকা খরচ করে ‘এমআর নাইন’ বানাইল আপনারা পছন্দ করলেন না। শাস্তি হিসেবে আপনাদের জন্য অনন্ত জলিলের ‘পাঞ্জেগানা মসুর দানা’।”
মাসুদ রানার ‘অপারেশন চিতা’ উপন্যাস থেকে ‘চিতা’ নামের সিনেমাটির ঘোষণা দিয়েছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। প্রধান অভিনয়শিল্পী নাম ঘোষণার আগেই এ নিয়ে বির্তক উঠে। মাসুমা মায়মুর জানান, সিনেমাটির জন্য অনুমতি নেয়নি জাজ। অন্যদিকে লেখক ইফতেখার আমিন জানান, এ উপন্যাসের স্বত্ব নিয়ে কপিরাইট অফিসে আবেদন ঝুলে আছে।
মাসুমা মায়মুরের পোস্টে একজন মন্তব্যের ঘরে জানান, জাজের কর্ণধার আব্দুল আজিজ বলছেন যে ৫০ বছরের জন্য মাসুদ রানার স্বত্ব তাদের। জবাবে মাসুমা বলেন, ‘ঘটনা সত্য না।’ এছাড়া অন্য এক মন্তব্যে তিনি জানান, ‘এমআর নাইন’ সিনেমার যে চিত্রনাট্য তাদের দেখানো হয়েছে, তা সিনেমায় রাখা হয়নি।
উল্লেখ যে মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম তিনটি বই ছাড়া বাকিগুলোর গল্প বিদেশী বই থেকে নেয়া। এ কারণে কপিরাইট আরেকটি জটিলতারও উদ্রেক হতে পারে। আর ‘অপারেশন চিতা’ ইফতেখার আমিন বিদেশী গল্প থেকে রূপান্তর করলেও ছাপা হয় কাজী আনোয়ার হোসেনের নামে। এ সিরিজের বেশির ভাগই ঘোস্ট রাইটারদের লেখা।
‘চিতা’ সিনেমাটির পরিচালনায় থাকছেন কলকাতার ‘কপিক্যাট’ সিনেমার পরিচালক রাজীব বিশ্বাস।
আজ ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে এক মহরতের মাধ্যমে সিনেমাটির ঘোষণা দেয়া হয়। সেখানেই অভিনয়শিল্পী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে অনন্ত-বর্ষাকে। এই সিনেমার মাধ্যমে প্রথমবার জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত সিনেমা করতে যাচ্ছেন অনন্ত-বর্ষা।
পরিচালক রাজীব বিশ্বাস এরই মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বের সত্য কাহিনী নিয়ে বিশাল বাজেটের ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে। সে ছবিরও মূল নায়ক অনন্ত জলিল। জাতি সে খবর হজম করতে না করতেই এলো মাসুদ রানার খবরটি।
এই চরিত্রে কাজ করা স্বপ্ন ছিল বলে জানালেন অনন্ত জলিল। তিনি বলেন, “মাসুদ রানা সিরিজে কাজ করা আমার নিজেরও স্বপ্ন ছিল। দেশে যখন থেকে কাজ করি, অনেকেই আমাকে বলত বাংলার জেমস বন্ড। এই যে ‘চিতা’ ছবিতে আমি কাজ করছি, এটা কিন্তু সাংবাদিকরাও জানতেন না। অথচ জাজের ঘোষণার পর থেকে ফেসবুকে অনেকেই কমেন্ট করেছে, বাংলার জেমস বন্ড অনন্ত জলিল। এজন্য আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। প্রায় নাইন্টি ফাইভ পারসেন্ট কমেন্ট আমাকে নিয়ে করেছে।”
জাজের ঘোষণা অনুসারে. ‘চিতা’র শুটিং শুরু হবে আগামী মে মাসে। শুটিংয়ের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামকে।
এর আগে কাজী আনোয়ার হোসেনের সৃষ্ট গোয়েন্দা চরিত্র মাসুদ রানা সিরিজের ‘ধ্বংস পাহাড়’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছিল বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনায় ‘এমআর-৯ : ডু অর ডাই’ সিনেমাটি। গেল বছর ২৫ আগস্ট মুক্তি পাওয়া সেই ছবিতে মাসুদ রানা চরিত্রে দেখা যায় এবিএম সুমনকে। ওই ছবিতে হলিউড ও বলিউডের বেশ কয়েকজন তারকা অভিনয় করেছিলেন। ৮৩ কোটি বাজেটে নির্মিত এই সিনেমাটি ব্যবসায়িকভাবে ফ্লপ হয়। এছাড়া জাজের ব্যানারে রাসেল রানা ও পূজা চেরিকে নিয়ে সৈকত নাসির ‘মাসুদ রানা’ নামের আরেকটি ছবি নির্মাণ শুরু করেছিলেন। কিন্তু অনেকদিন ধরে খবরে নেই সেই ছবি।
সব মিলিয়ে ১৯৭৪ সালে মুক্তি পাওয়া সোহেল রানার ‘মাসুদ রানা’ সিনেমাটি এখনো অগ্রগণ্য।