কতটা ‘মুখোশ’?
সরকারি অনুদানের ছবির বাজেট সাধারণত কমার্শিয়াল ক্যাটাগরিতে কম দেয়া হয়। সাহিত্যভিত্তিক বা অন্য ধরনের ছবিগুলোতে বেশি দেয়া হয়। ‘মুখোশ‘ এর মতো কমার্শিয়াল ছবি সরকারি অনুদানে নির্মিত হয়েছে এটা ভালো দিক।
‘মুখোশ’ (২০২২) এ বছরে এখন পর্যন্ত মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর মধ্যে ভালো ছবি হয়েছে। ছবির বিষয় ও নির্মাণের সুনির্দিষ্ট দূরত্ব আছে কিন্তু ভালো ছবি অবশ্যই। পরিচালনায় ইফতেখার শুভ।
ছবির অবজারভেশনে গেলে এটি ভালো একটি বিষয়ের ছবি যেখানে গল্পটি বেশ এগিয়ে তবে নির্মাণ আশানুরূপ ছিল না। আশানুরূপ বলতে যা প্রত্যাশা ছিল তার থেকে পিছিয়ে আবার একদমই পিছিয়ে তাও নয়। ছবির মূল শক্তি প্রধান ও পার্শ্ব চরিত্রের অভিনয়শিল্পীদের চমৎকার অভিনয়। বলতে গেলে তাদের অভিনয়ই ছবিটিকে এগিয়ে নিয়েছে।
মোশাররফ করিম একজন লেখক যার খ্যাতি আছে। খ্যাতির সাথে সাথে তাকে নিয়ে রহস্যও আছে। পরীমনি একজন সাংবাদিক যার আগ্রহ মোশাররফকে ঘিরে। তার অব্যক্ত রহস্যটি উন্মোচনের জন্য তার কাছাকাছি আসতে চেষ্টা করে। রহস্যটা বেশ বড়ই ছিল এবং কী আছে সেখানে সেটাই ছবির আকর্ষণ।
এ গল্পকে দাঁড় করাতে প্রধান চরিত্রে মোশাররফ করিম ছবিটিকে একাই অনেকদূর টেনে নিয়েছে। তার অভিনয় দেখার জন্যও ছবিটি দেখা যেতে পারে এটা বলা যায়। তার পাশাপাশি যার অভিনয় অন্যতম আকর্ষণ তিনি আজাদ আবুল কালাম। অন্যান্য পার্শ্ব অভিনেতাদের মধ্যে ইরেশ যাকের, প্রাণ রায়, রাশেদ মামুন, এলিনা শাম্মী ভালো অভিনয় করে গেছে। নায়ক-নায়িকার কথা কেন বলা হচ্ছে না অনেকে ভাবতে পারে। বলতে গেলে নায়ক/নায়িকাদের দিয়েই যে ছবি দাঁড় করাতে হবে এমনটা না যদি সেটা মাল্টিকাস্টিং ছবি হয়। এ ধরনের ছবিতে নায়ক-নায়িকা থাকার পরেও অন্য চরিত্রের জন্য ছবি দাঁড়িয়ে যেতে পারে এবং ‘মুখোশ’-ও তেমনই একটি ছবি হয়েছে।
নায়ক-নায়িকা নিয়ে আলাদা করে বললে পরীমনি প্রাণবন্ত অভিনয় করেছে। সাংবাদিক চরিত্রে এর আগেও কাজ করেছে তাই ক্যারেক্টার ডিল করতে তার জন্য সহজই ছিল। রোশান পূর্বের মতোই ভয়েসে আকর্ষণীয় অভিনয় নিজের মতো করে গেছে বিশেষ কিছু ছিল না।
গানে নোবেলম্যানের ‘মুখোশ টাইটেল ট্র্যাক’ অবশ্যই দারুণ ছিল।
ছবির দুর্বলতার জায়গা হচ্ছে গল্পটি দাঁড় করাতে অভিনয় যতটা ভূমিকা রেখেছে চিত্রনাট্য রাখেনি। রহস্য উন্মোচনের পদ্ধতিতে আরো কাজ করা উচিত ছিল। আরো কেয়ারফুল হলে ছবিটি অনেকদিন মনে রাখার মতো হত। হাস্যরস ছিল লঘু যা একদমই জমেনি। জোর করে হাসানোর চেষ্টা না করে বরং হাসির উপাদানই বাদ দেয়া উচিত যেন মনোযোগ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ছবির বিজিএম বেশ ভালো ছিল সিরিয়াস সময়গুলোতে। ইনডোরে মোশাররফ করিমের কিছু সিকোয়েন্স মঞ্চ নাটকের স্বাদ দেবে। বাজেট সম্পর্কিত সমস্যাও ছবিটির নির্মাণের দিকটাতে প্রাসঙ্গিক হতে পারে।
সংলাপের দিক থেকে দু’একটা ভালো ছিল :
- গল্প যদি সুপারস্টার না হয় সুপারস্টার হিরো দিয়ে কী হবে।
- সম্মান আর সম্মানী কিন্তু এক জিনিস হয় না।
- যতটা উপরে উঠছেন মই ছাড়া নামতে পারবেন তো!
‘মুখোশ’ শেষ কথায় ভালো ছবি তবে আরো ভালোর সম্ভাবনা ছিল।
রেটিং – ৬/১০