
‘কপি পেস্ট না করে মৌলিক কিছু করার চেষ্টা করুন’ বরবাদের পরিচালককে ভারতীয় চিত্রগ্রাহকের কটাক্ষ, পরে মিটমাট
সহিংসতানির্ভর ভারতীয় সিনেমার আদলে নির্মিত ‘বরবাদ’, এটা নতুন কোনো কথা নয়। কিন্তু বিস্ফোরক হয়ে উঠে যখন সিনেমা সংশ্লিষ্ট কেউ বিষয়টি নিয়ে খোদ পরিচালককে কটাক্ষ করেন। গতকাল শনিবার মধ্যরাতে ভারতীয় সিনেমাটোগ্রাফার শৈলেশ আওয়াস্থি এমনটাই বললেন। অবশ্য তার মূল দাবি ছিল বরবাদের সিনেমাটোগ্রাফি করেও ক্রেডিট লাইনে ঠাঁই পাননি, যেখানে নাম গেছে বাংলাদেশের রাজু রাজের। এই ঘটনায় মেহেদী হাসান হৃদয়ের ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট ঘরে নিজের রাগ উগরে দেন শৈলেশ। পরে অবশ্য ‘ভুল বোঝাবুঝি’ ও অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন তিনি।

দুই দশকের বেশি সময় কাজ করছেন মুম্বাইয়ের সিনেমাটোগ্রাফার শৈলেশ। কাজ করেছেন বলিউড ও টালিউডে। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হলো ‘খাদান,’ ‘গাবরু গ্যাং’, ‘চ্যালেঞ্জ টু’, ‘জানেমান’, ‘পাওয়ার’, ওয়েব সিরিজ ‘গারমি’ ইত্যাদি। বরবাদ সিনেমায়ও সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন শৈলেশ।
৫ এপ্রিল রাতে আক্ষেপ নিয়ে শৈলেশ আওয়াস্থি লেখেন, ‘যখন তোমার কঠোর পরিশ্রমকে উপেক্ষা করা হয় এবং অন্যরা তোমার কাজের কৃতিত্ব নেয়, তখন সেটা হতাশাজনক। বরবাদ-এর সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে আমার শতভাগ দিয়েছি। তা ছাড়া আমি সৃজনশীল বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সিনেমাটিকে বানাতে সাহায্য করেছি। কিন্তু আমাকে সেই কৃতিত্ব দেওয়া হয়নি। রাজু রাজ, যাকে ডিওপি হিসেবে কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি সিনেমার সঙ্গে খুব কমই যুক্ত ছিলেন। আমি মাঠে ছিলাম, শটগুলি আমি সাজিয়েছিলাম, ভিজ্যুয়াল ডিজাইন আমি করেছিলাম। আমার দায়িত্বের বাইরে গিয়েও আমি কাজ করেছি। এটা অহংকার নয়, এটা ন্যায্যতার প্রশ্ন। পোস্টার, উইকিপিডিয়া এবং আইএমডিবিতে নাম পরিবর্তন করা যেতে পারে, কিন্তু সত্য সর্বদা তার পথ খুঁজে নেয়।’
আরেক মন্তব্যে তিনি মেহেদী হাসান হৃদয়ের পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। শৈলেশ আওয়াস্থি লেখেন, ‘নিজেকে পরিচালক হিসেবে পরিচয় দেওয়ার আগে ভালো সিনেমা নির্মাণ করতে শিখুন। শুধু আইডিয়া কপি পেস্ট না করে মৌলিক কিছু করার চেষ্টা করুন। বরবাদকে শক্তিশালী করতে আমি আপনাকে সাপোর্ট করেছি, ডিওপি হিসেবে সর্বোচ্চ দেওয়ার পাশাপাশি পরিচালনাতেও ইনপুট দিয়েছি। আর আপনি সেটার বিনিময়ে আমার ক্রেডিট রাজু রাজকে দিলেন? এই লোক কে? যার সিনেমাটোগ্রাফি সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই, আর অন্যের কাজ নিজের নামে চালিয়ে নিতে যার লজ্জাও হয় না। আমি ভিজ্যুয়ালি ও ক্রিয়েটিভলি এই প্রজেক্টটি টেনেছি, আর বাকিরা শুধু উপস্থিত ছিল। যারা আসলে আপনার সিনেমা বানিয়েছে, তাদের প্রতি এই অবমাননা করবেন না। এটা শুধু পেশাগত নয়, ব্যক্তিগত বিশ্বাসঘাতকতা। আমি এ বিষয়ে চুপ করে থাকব না!’
দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পরিচালকের কয়েকটি পোস্টের নিচে মন্তব্যের ঘরে একই লেখা পোস্ট করেন শৈলেশ। ভারতের সিনেমাটোগ্রাফারের এমন মন্তব্যের পর শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। কেননা সাম্প্রতিক বেশকিছু ভারতীয় নির্ভর সিনেমা নিয়ে এমন অভিযোগ আগেও উঠেছিল।
অবশ্য শৈলেশের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মেহেদী হাসান হৃদয় বলেন, ‘যে সিনেমাটোগ্রাফারের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল তিনি কাজটি করতে পারেননি। পরে ভারতের ডিওপি (শৈলেশ) কাজটি করেন। পারমিশন জটিলতার কারণে উইকিপিডিয়াসহ অন্যান্য জায়গায় ক্রেডিট লাইনে তার নাম ব্যবহার করা যায়নি। তা ছাড়া সিনেমার ক্রেডিট লাইনটা তৈরি করেছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। সে সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। আমার মনে হয় এটা ফিল্ম পলিটিক্সের একটা অংশ। এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি। তার (শৈলেশ) সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।’
কিছুদিন আগে বিদেশী শিল্পীদের অনুমোদন সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশে জটিলতায় পড়ে ‘বরবাদ’। অর্থাৎ ভুল তথ্য দিয়ে অনুমোদন নেয়ার বিষয়টি এখন পরিচালকের দেয়া তথেই উঠে এল।
এদিকে রোববার দুপুরে শৈলেশ জানান, পরিচালকের সঙ্গে তাঁর সমঝোতা হয়েছে। ফেসবুকে শৈলাশ লেখেন, ‘পরিচালক হৃদয় ও আমার মাঝে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, যার সমাধান হয়েছে। আমরা পরিবারের মতো। তাই মতানৈক্য হতে পারে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সব ঠিক করেছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই ভুল বোঝাবুঝির ফায়দা নিতে চাচ্ছে। দয়া করে বরবাদ নিয়ে অযাচিত কোনো ইস্যু তৈরি করবেন না। আমি বরবাদে ডিওপি হিসেবে কাজ করতে পেরে গর্বিত। নিজের সেরাটা দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি।’
শৈলেশ আওয়াস্থি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যে ইস্যু ছিল সেটির সমাধান হয়ে গেছে।’
মেহেদী হাসান হৃদয়ের ওপর কোনো অভিযোগ নেই জানিয়ে এই সিনেমাটগ্রাফার আরো বলেন, ‘হৃদয়ের ওপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। যা হয়েছিল সেটা যোগাযোগের অভাব। হৃদয় আমার ছোট ভাই, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ফেডারেশনের কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে যা সে আমাকে বলেছে এবং সেটা আমি বুঝেছি। যেহেতু আপনাদের ফিল্ম ফেডারেশনের নিয়ম, তাই স্থানীয় সিনেমাটোগ্রাফারকে কৃতিত্ব দিতে হবে। আমার এতে কোনো আপত্তি নেই।’
মুক্তির আগেও ঝামেলা হয়েছিল বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত বরবাদ নিয়ে। শোনা যায়, যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণ হলেও এই সিনেমার সব শুটিং হয়েছে ভারতে; যার জন্য অনুমতি নেওয়া হয়নি তথ্য মন্ত্রণালয়ের। তাই সিনেমাটি আটকে দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। শেষ পর্যন্ত ঈদের কয়েক দিন আগে জটিলতা কাটিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পায় বরবাদ। সার্টিফিকেশন বোর্ডে গিয়েও পড়ে বাধার মুখে। পরে কিছু অংশের সংশোধন করে মুক্তির অনুমতি পায় বরবাদ। ওই সময় ঘটনার ফায়দা নিতে সার্টিফিকেশন বোর্ডে আটকে দেয়ার গুজবও ছড়ানো হয়।
ভারতের রিধি সিধি এন্টারটেইনমেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের রিয়েল এনার্জি প্রোডাকশন যৌথভাবে নির্মাণ করেছে বরবাদ। এতে শাকিবের নায়িকা টালিউডের ইধিকা পাল। আরও আছেন মামুনুর রশীদ, মিশা সওদাগর, শহীদুজ্জামান সেলিম, যীশু সেনগুপ্ত, নুসরাত জাহান, স্যাম ভট্টাচার্য প্রমুখ।